‘আমার ছেলে কোথায়?’ নিখোঁজ প্রিয়জনের খোঁজে আসা পরিবারগুলোকে আবারও খালি হাতেই ফিরতে হলো
ময়ুরী বেগম নামের ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রাত ১০টায় আমার মুন্নাকে ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) তুলে নিয়ে যায়। সে আর তার বাবা একসাথেই ছিল, জোর করে তারা আমার ছেলেকে একটি সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তিন বছর পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার বাবাও মারা যান। গত ১১ বছর ধরে আমি আমার ছেলেকে খুঁজছি।’
নিখোঁজ নিজামুদ্দিন মুন্নার মায়ের নাম ময়ূরী বেগম। তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে।
ছেলের পর স্বামীকেও হারিয়েছেন তিনি। ছেলের খোঁজে সম্ভাব্য সব জায়গায়, সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এই নারী। তবে কেউ তাকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ময়ুরী বেগম নামের ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রাত ১০টায় আমার মুন্নাকে ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) তুলে নিয়ে যায়। সে আর তার বাবা একসাথেই ছিল, জোর করে তারা আমার ছেলেকে একটি সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তিন বছর পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার বাবাও মারা যান। গত ১১ বছর ধরে আমি আমার ছেলেকে খুঁজছি।’
আজ বুধবার (৭ আগস্ট) গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য ডিরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হন।
কারণ গতকাল মঙ্গলবার ডিজিএফআইয়ের ডিরেক্টর অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছিলেন, তারা আজ ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালায় থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য জানাবেন।
তবে ‘মায়ের ডাক’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সানজিদা ইসলাম তুলী, ‘অধিকার’-এর আদিলুর রহমান খান এবং অধ্যাপক সিআর আবরারসহ একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ডিজিএফআই জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের ঢাকার বন্দিশালায় আর কোনো বন্দি নেই।
বৈঠকের পর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস) আদিলুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আজকে কোনো ভিকটিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিনা?’
জবাবে আদিলুর বলেন, ‘আমরা এখনও সেরকম কিছু শুনিনি। তারা এখান থেকে কাউকে মুক্তি দেয়নি এবং তাদের বক্তব্য হলো এখানে আর কোনো বন্দি নেই।’
তিনি বলেন, ”তারা এমনকি এও বলেছে যে প্রয়োজনে তারা আমাদের ‘আয়নাঘর’ দেখাবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘নিখোঁজদের খুঁজে না পাওয়া গেলে আমরা আগামীতে জাহাঙ্গীর গেটের সামনে ফের মানববন্ধন করব।’
একটি সূত্র টিবিএসকে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে গুম হওয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা আজ বাড়িতে ফিরেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার গুম হওয়া দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এরা হলেন- সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তার কাছে নিখোঁজদের বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।’
প্রতিনিধি দলটি ফিরে এসে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের জানান, ডিজিএফআই দাবি করেছে যে সেখানে আর কোনো বন্দি নেই। এ কথা শুনে সেলিনা আক্তার নামের এক নারী খুব বিচলিত হয়ে পড়েন।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এখানে আসবে শুনে তিনিও আজ তাদের সঙ্গে ছুটে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমার স্বামীকে কচুক্ষেত বাজার থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় তিনি অসুস্থ ছিলেন।
তিনি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই তাকে খুঁজছি। আমি তাকে র ্যাব, ডিবি, পুলিশ সব জায়গায় খুঁজেছি।’
সেলিনা বলেন, ‘তখন আমার সন্তানের বয়স ছিল সাড়ে তিন বছর। এখন সেই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যাই হোক না কেন, আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।’
চট্টগ্রাম থেকে আসা বিষ্ময় দত্ত বাবুও ডিজিএফআই সদর দপ্তরের সামনে অন্যান্যদের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন।
তার হাতে ২০১০ সাল থেকে নিখোঁজ চট্টগ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচার ছবি ছিল।
বিষ্ময় বলেন, ‘বাচা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আমরা তার গ্রাম থেকে এখানে এসেছি, আমরা বাচাকে ফেরত চাই।’
ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ‘মায়ের ডাক’-এর নেতৃত্বে মানববন্ধনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে কাওসার নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। তার হাতে ছিল তার ভাই তেজগাঁও শাখার সাবেক ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর ছবি।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে সব জায়গায় খুঁজেছি। তার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আজ বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। এই শুভ সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের ১১ বছরের অপেক্ষার অবসান হোক আজই, আমরা আবার ঝন্টুকে দেখতে চাই।’