USA

আমেরিকায় নাগরিকত্ব দেয়া বন্ধের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্বপ্রাপ্তির যে আইন বা বিধি এতদিন প্রচলিত ছিল তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইসঙ্গে ২০২১ সালের ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় জড়িতদের ক্ষমা করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আগামী মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই ২০২১ সারে ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িতদের জন্য ক্ষমার দিকে তিনি নজর দেবেন বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন।

এনবিসি-র মিট দ্য প্রেস-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘এই মানুষগুলো নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে।’ 

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যে কারও জন্য স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেটিও বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শিশু অবস্থায় নিয়ে আসা নথিপত্রবিহীন কিছু অভিবাসীকে সহায়তায় ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

গত শুক্রবার রেকর্ড করা এই বিস্তৃত ইন্টারভিউতে ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন শুরুর পর অভিবাসন, জ্বালানি এবং অর্থনীতিসহ “অনেকগুলো” নির্বাহী আদেশ জারি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। কংগ্রেসের যৌথ ওই অধিবেশনে সেদিন জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছিল। একপর্যায়ে ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ও মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন ট্রাম্প সমর্থকরা। হামলাকারীদের অনেকেই ছিল সশস্ত্র। ভেতরে ঢুকে সিনেট হলে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা। শুধু তা-ই নয়, তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতার কার্যালয়ও তছনছ করে তারা। হামলা-সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন পাঁচজন।

অভিবাসন প্রসঙ্গে ট্রাম্প এনবিসিকে বলেন, ‘তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তথাকথিত জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান বাতিল করার পরিকল্পনা করছেন। এই নীতির আওতায়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে-কেউ তার বাবা-মা অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করলেও  মার্কিন পাসপোর্ট তথা নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন।’

জন্মগত নাগরিকত্বের বিধানটির মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘জন্মগ্রহণকারী সব ব্যক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক’। তবে ট্রাম্প বলছেন, ‘এই নিয়ম বদলাতে হবে।’

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংক্রান্ত আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ হবে মার্কিন সংবিধানবিরোধী এবং যদি ক্ষমতা গ্রহণের পর সত্যিই এটি কার্যকর হয়, তাহলে সংবিধান লঙ্ঘনের মতো গুরুতর ঘটনা ঘটবে।

মার্কিন নাগরিকত্ব-গ্রিনকার্ড অর্জনের একটি সহজ এবং জনপ্রিয় পথ হচ্ছে মার্কিন ভূখণ্ডে সন্তান জন্মদান। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনও শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ওই শিশুর বয়স ১৮ পার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বড় করা এবং দেখাশোনা করার জন্য তার বাবা-মাকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। আর একবার বৈধ বসবাসের অনুমতি পেলে নাগরিকত্ব ও গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির পথও অনেক সহজ হয়। ফলে ট্রাম্পের এই নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বৈধ নথিবিহীন অভিবাসীদের জন্য বড় ধাক্কা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button