আয়নাঘরের মূল হোতা আমি, এসব বানান কীভাবে? -আদালতে জিয়াউল আহসান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর খিলগাঁও পল্লীমা স্কুলের সামনে পরিবহন শ্রমিক সোহেলকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকেও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
একই দিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান কর্নেল (অব.) মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণ ও গুমের মামলায় বহিষ্কৃত সেনা অফিসার মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত বুধবার সকালে তাদের কারাগার থেকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক আতিকুজ্জামান সালমান এফ রহমান, গোলাম দস্তগীর গাজী ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। আর জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন আরেক মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক মো. তহিদুল ইসলাম। গ্রেফতার দেখানোর শুনানিতে মামলা তদন্ত কর্মকর্তাকে বিচারক জিজ্ঞেসা করেন, আসামি (জিয়াউল আহসান) কি অব্যাহতি প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, না অব্যাহতি প্রাপ্ত নন। মূলত, সে অবসরপ্রাপ্ত। এরপর বিচারক মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, ওনার নামের পাশে অব্যাহতি প্রাপ্ত লেখা রয়েছে এটা ঠিক করে দিবেন। ওই সময় উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবী নয়ন কাইয়ুম বলে ওঠেন, উনি মূলত অব্যাহতি প্রাপ্ত। আয়নাঘরের মূল হোতা তিনি। বিগত সরকারের খুন-ঘুমের কারিগর। এ বক্তব্যের প্রতিবাদে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, আয়নাঘরের হোতা বললেই হলো? এসব পান কই। তখন বিচারক বলেন, এখন তো শুনানির সময় না। আপনারা সকলেই চুপ করেন।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে নিউ মার্কেট থানার মামলায় জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারক খাসকামরায় চলে যায়। এজলাসে কাঠগড়ায় দাড়ানো অবস্থায় বিএনপিপন্থী ওই আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে জিয়াউল আহসান বলেন, আয়নাঘরের মূল হোতা আমি? এসব কীভাবে বানান। আমি আয়নাঘরের মূল হোতা নয়। এসব আমার নামে বানানো ও মিথ্যা অভিযোগ।
সোহেলকে হত্যাচেষ্টার মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে খিলগাঁও থানাধীন শহীদ বাকি সড়ক খিলগাঁও পল্লিমা স্কুলের সামনে ছাত্র জনতার আন্দোলনে যুক্ত হন মো. সোহেল। তালতলা মার্কেটের সামনে থেকে সরকার দলীয় সমর্থকসহ পুলিশ ছাত্র জনতার দিকে ইট-পাটকেল, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, ছড়া গুলিসহ সাউন্ড গ্রেনেড চার্জ করা হয়। পুলিশের ছড়া গুলিতে আহত হন ভিকটিম সোহেল।
জিয়াউলের মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান কর্নেল (অব.) মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে সাদা পোষাকে তুলে নিয়ে যায় আসামিরা। দুই দিন গুম করে রাখার পর ২৯ ডিসেম্বর তাকে দুটি ভুয়া মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জামিন পেয়ে তিনি এসব বিষয়ে অভিযোগ জানাতে থানায় গেলেও সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) নথিভুক্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, জিয়াউল আহসানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তোহিদুল ইসলাম।