Hot

আয়নাঘর থেকে ফেরতের দাবি স্বজনদের আরও একজন মুক্ত

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেররিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম আয়নাঘর। ধারণা করা হয়, এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে    যেখানে একসঙ্গে ৩০ জন বন্দি রাখার সক্ষমতা রয়েছে। আয়নাঘরটি রাজধানীর কচুক্ষেতে অবস্থিত গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার আশায় ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর) কার্যালয়ে যান স্বজনরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকায় ডিজিএফআই সদর দপ্তরে যান তারা। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামসহ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী প্রতিনিধি হিসেবে সদর দপ্তরের ভিতরে যান। সেখানে ডিজিএফআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। এ সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। কার্যালয়ের ভিতরে যাওয়া অন্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি আর আবরার। এদিকে গতকাল দুপুরে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে আয়নাঘর থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্বজনদের নিতে এখানে এসেছিলাম। ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর এবং যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এ ঘটনাগুলো সত্যি। পূর্ববর্তী সময়ে যে টিম বা সংস্থা এ কাজ করুক না কেন, তাদের সবাইকে এর দায় নিতে হবে। সেজন্য আমরা মায়ের ডাক থেকে এখানে ১০০ ব্যক্তির পরিবার একসঙ্গে এসেছি।’ তিনি দাবি করেন, ডিজিএফআই ছাড়াও র?্যাব, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও পুলিশ অনেককে তুলে নিয়েছিল। যে যেখানে আটকে আছেন, সেখান থেকে তাদের মুক্তির জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক বলেন, ‘ডিজিএফআই থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার। আমরা সেই চেষ্টা করছি।’

ডিজিএফআই কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় রোদের মধ্যে বাবা ফারুক হোসেনের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল মেয়ে রোজা আক্তার। সঙ্গে ছিলেন রোজার মা ও ছোট চাচা মোহাম্মদ রাসেল। রোজা বলে, ‘আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই। বাবাকে ফিরিয়ে নিতেই এখানে এসেছি। আমি আর কিছু চাই না। তারা আমার বাবাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক।’

ফারুক হোসেনের ভাই মোহাম্মদ রাসেল জানান, তাদের বাড়ি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী পূর্ব এলাকায়। ওই এলাকায় যুবদলের রাজনীতি করতেন ফারুক। ২০১২ সালে তাকে তার বাড়ি থেকে ডেকে সাদা পোশাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো তিনি নিখোঁজ।

ডিজিএফআই কার্যালয়ের ফটকের সামনে এবং সামনের রাস্তায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের শতাধিক স্বজনকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখামাত্র তারা গুম হওয়া স্বজনের ছবি দেখিয়ে কে গুম হয়েছেন, কবে কোথা থেকে গুম করা হয়েছে, সেগুলো জানাচ্ছেন। কার্যালয়ের ভিতর থেকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ফিরে আসার পর স্বজনরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় মানববন্ধন করেন এ স্বজনরা বলেন, আমাদের অন্তত ৫০টি পরিবারের সঙ্গে কাল (আজ বৃহস্পতিবার) সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ সাক্ষাতে যদি কোনো ফল না আসে তাহলে আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে দাঁড়াব।

এদিকে গতকাল দুপুরে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে আয়নাঘর থেকে মুক্ত করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সন্ধান চেয়ে আদালতে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ করা আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিষয়টি জানিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button