আরেক অগ্নিপরীক্ষায় বাইডেন: ন্যাটো সম্মেলন শুরু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য চলতি সপ্তাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম তিক্ত বিতর্কে হতাশাজনক প্রদর্শনীর ১২ দিন পরও প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অব্যাহতভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের ভেতর হোক বা বাইরে– তাঁকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। এ অবস্থায় ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হওয়া ন্যাটো সম্মেলন তাঁর সামনে এক অগ্নিপরীক্ষা হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ, আচরণসহ সার্বিক প্রদর্শনীর দিকে চোখ থাকবে সবার। ঠিক কত দক্ষতায় বাইডেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করতে পারে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলন। গত কয়েক দিন বাইডেন তাঁর সমালোচকদের আক্রমণ করে বলে আসছেন, তারা ডেমোক্র্যাট প্রাইমারির রায়কে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। কঠোর ভাষায় বাইডেন জানান, তিনি প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। অতএব, তাঁর স্থানে অন্য কেউ আসছেন–এমন ভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা হোক।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাটো জোটের যে সম্মেলন হচ্ছে, তা শেষ হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ওই দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বাইডেন। পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ে দক্ষ বাইডেনের কাছে এসব বিষয় সহজ ও স্বাভাবিক হওয়ার কথা। তথাপি প্রেসিডেন্টের জন্য এটা এক বড় পরীক্ষা হতে পারে। সম্মেলনে তাঁর বাজে প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি দেশেও তাঁর ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে। সামান্য একটি ভুল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে রাজনৈতিক ধাক্কাধাক্কির জন্ম দেবে, যা নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের আশাকেও নিভিয়ে দিতে পারে।
সম্মেলনে বাইডেনের দুর্বল প্রদর্শনী যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগকেও তীক্ষ্ণ করতে পারে, যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা ও এর সঙ্গে আসা নাটকীয় পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এটি মনে করা হয় যে, অনেক ইউরোপীয় নেতা ট্রাম্প ও তাঁর পররাষ্ট্রনীতির কৌশল নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাবেক এ প্রেসিডেন্ট বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক জোটগুলোকে অপমান করেছেন। জার্মান মার্শাল ফান্ড জিওস্ট্র্যাটিজি নর্থের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খ্রিস্টাইন বারজিনা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে নেতারা বাইডেনকে নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর নির্বাচনী বিতর্কে হতাশাজনক প্রদর্শনীর পর অনেকে সন্দেহ করছেন–তিনি আসলেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় তারা বেশ কিছু প্রমাণ পাবেন বলে আশা করছেন। এতে বোঝা যাবে সেই রাতে (বিতর্কের রাত) তিনি আসলেই অসামর্থ্য ছিলেন, নাকি তাঁর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ছিল না।
ন্যাটোর সম্মেলন হবে রুদ্ধদ্বার কক্ষে। তথাপি সেখানে কী ঘটছে, বাইডেনের প্রদর্শনী কেমন ছিল–তা সামনে আসবে। সম্মেলনে অংশ নেবেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও। তাঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠক হবে বাইডেনের।
এ পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরেও বিরোধিতার মুখে রয়েছেন বাইডেন। দলের অনেক নেতা প্রকাশ্যেই প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে সম্মেলন নিয়ে বাইডেন কী বলেন, সেদিকে চোখ থাকবে।
সম্মেলনে স্বাভাবিক প্রদর্শনীতেও প্রশ্ন বন্ধ হয়ে যাবে না বলে মনে করেন অনেক সমালোচক। ওয়াশিংটন মান্থলির সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিল চের মনে করেন, কিছু সুন্দর উপস্থাপনায় সব প্রশ্ন থেমে যাবে না।
জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাটদের একটি বড় অংশসহ তিন-চতুর্থাংশ মার্কিনি মনে করেন, বাইডেনের উচিত ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো। রোববার আরও ছয়জন প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট এ দাবিকে জোরালো করেছেন।