Bangladesh

‘কাঁচকলা দেখাচ্ছে’ সবজির বাজার: আরো বেড়েছে সবজির দাম, বাড়তিতে মুরগিও

রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বেশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে বেশির ভাগ সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আলু ও মুরগির দামও বাড়তি। ডিমের দাম ডজনে ১৬০ টাকা থেকে কমে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি সারা দেশে টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও ঢাকার বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, হাতিরপুল ও বাড্ডারবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম বেড়ে প্রতি কেজি গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স-পটোল-চিচিঙা-ঝিঙা-কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ও টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শিম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বিক্রেতারা জানান, সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, যশোর ও কুষ্টিয়ার আশপাশের সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থান থেকে রাজধানীতে বেশির ভাগ সবজি আসে।

সরবরাহে ঘাটতির কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে।

বাড্ডার কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মো. মেহেদী বলেন, ‘সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তি। বাজারে শীতের নতুন সবজি না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’

আমাদের বগুড়া অফিস জানায়, গতকাল বগুড়ায় সবজির পাইকারি বাজার খ্যাত মহাস্থানহাটে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম ছিল। এ কারণে সব ধরনের সবজির দাম বেশ বেড়েছে। কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে বলে ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা জানিয়েছেন। মহাস্থানহাটের প্রভাব পড়েছে বগুড়া শহরের আড়ত ও খুচরা বাজারেও। সেখানে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।

মহাস্থানহাটে কৃষকরা যে দামে সবজি বিক্রি করেছেন, তার চেয়ে মণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে শহরের আড়াতগুলোতে। আড়তের বাজারদরের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

গতকাল মহাস্থানহাট ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাঁদের জমিতে উৎপাদিত করলা প্রতি মণ বিক্রি করছেন তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায়। পটোল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ।

বগুড়া শহরের সবজির আড়ত হিসেবে পরিচিত রাজাবাজার এবং খুচরা বাজার হিসেবে পরিচিত ফতেহ আলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) করলা ৪০০ টাকায় এবং খুচরা বাজারে তা ৮৫ টাকা কেজি। পটোল আড়তে ৩০০ টাকা পাল্লা ও খুচরায় ৭০ টাকা কেজি, উভয় বাজারে টমেটো ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি, বেগুন ৩৫০ থেকে ৩৭৫ টাকা পাল্লা। 

মুরগির দাম বেড়েছে কমেছে ডিমের

রাজধানীর বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে মুরগির দাম বাড়তি। দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং মানভেদে সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

সরকারি নির্ধারিত দরে ট্রাকসেলে (খোলাবাজার) ডিম বিক্রি শুরু হওয়ায় বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ফার্মের ডিম প্রতি ডজনে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১০৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। আলু কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং আদা কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

হাতিরপুল বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মনসুর হোসেন বলেন, ‘ডিমের দর কিছুটা কমেছে। চার থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এখন ডজন ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

চাহিদার চেয়ে সরবরাহে টান

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. ইসরাফিল বলেন, ‘কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক গাছ ক্ষেতে মরে গেছে। কিছু সবজি পচেছে। এ ছাড়া বছরের এ সময়ে গ্রীষ্মের সবজি গাছ মরে যায়। তবে সবজির এত বেশি দাম এর আগে কখনও দেখিনি। মুলার কেজি অন্য বছর এ সময় ৩০ থেকে ৪০ টাকা থাকে। এবার ৭০ থেকে ৮০ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

চাহিদার চেয়ে জোগানের ঘাটতিকে দায়ী করছেন আড়তদাররা। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগেও আড়তে দৈনিক ১০০ মণ সবজি আসত; এখন আসে ৭০ থেকে ৭৫ মণ। এ কারণে দাম বেড়েছে। তবে বাড়তি দামের সুফল কৃষকও পাচ্ছেন। কারণ, আগে মাঠ পর্যায়ে কৃষক থেকে সাধারণত ফড়িয়ারা কাঁচামাল কিনে তা বড় ব্যাপারী বা পাইকারদের কাছে বিক্রি করত। এখন কৃষকরাই মাঝেমধ্যে সরাসরি ঢাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।

কী বলছে তদারকি সংস্থাগুলো

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সবজি কৃষিপণ্য। এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কথা কৃষি বিভাগের। তাই সবজির দাম অস্বাভাবিক কেন, তা বলতে পারবে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দিলে তা বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. নাসরিন সুলতানা বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি কৃষিপণ্যের দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দাম এমন অস্বাভাবিক থাকলে ভবিষ্যতে অন্য কৃষিপণ্যের দামও বেঁধে দেওয়া হতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor