আর্ম যুগে প্রবেশ করল উইন্ডোজ
হঠাৎ করেই ঘোষণা দিয়ে মাইক্রোসফট একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেশ কিছু নতুন হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও পরিষেবার ঘোষণা দিয়েছে।
মাইক্রোসফট বিল্ড অনুষ্ঠানের আগে এমন ইভেন্ট তারা সাধারণত করে না, এবারেরটি বেশ ব্যতিক্রম। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই উইন্ডোজ সম্পূর্ণভাবে আর্ম যুগে প্রবেশ করল।
স্ন্যাপড্রাগন এক্স এলিট
চার বছর আগে অ্যাপল তাদের ম্যাক থেকে বাদ দেয় ইন্টেল প্রসেসর, শুরু করে আর্ম প্রসেসর ব্যবহার।
অবশেষে মাইক্রোসফটও সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। আর্ম প্রসেসরভিত্তিক উইন্ডোজ পিসি আগেও বাজারে এসেছে, তবে মূলধারার সফটওয়্যারগুলো সেসবে চালানোর উপায় না থাকায় সেগুলো জনপ্রিয়তা পায়নি। এবার সেই সমস্যা কাটিয়ে নতুন করে আবারও আর্মভিত্তিক উইন্ডোজ কম্পিউটার বাজারে আনছে মাইক্রোসফট। বর্তমানে ী৮৬ভিত্তিক যেসব সফটওয়্যার উইন্ডোজে চলছে, সেগুলো আর্মভিত্তিক পিসিতেও সরাসরি চলবে।
আর তার মূলে রয়েছে কোয়ালকমের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় তৈরি স্ন্যাপড্রাগন এক্স এলিট ও এক্স প্লাস প্রসেসর। এখন পর্যন্ত যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে তার ফলাফল অনুযায়ী স্ন্যাপড্রাগন এক্স প্লাস সরাসরি অ্যাপল এম৩ ও এক্স এলিট এম৩ প্রো প্রসেসরের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কাজ করতে সক্ষম।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, শুধু সারফেস সিরিজেই নয়, অন্যান্য নির্মাতার ল্যাপটপেও এই প্রসেসরগুলোর দেখা মিলবে। তারা অ্যাডবি, ডাভিঞ্চি রিসলভ, ক্যাপকাট ও বেশ কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যারের নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছে তাদের সফটওয়্যারগুলোর আর্ম সংস্করণ তৈরির লক্ষ্যে, যাতে আগামী দিনে ী৮৬ সংস্করণ ব্যবহারের প্রয়োজনও না থাকে।
কোপাইলট প্লাস পিসি
আর্মভিত্তিক ল্যাপটপ ও ডেস্কটপকে মাইক্রোসফট নাম দিয়েছে কোপাইলট প্লাস পিসি। এসব ডিভাইসে থাকবে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর, উইন্ডোজ ১১ এবং সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে এআই কোপাইলট। সেটা চলানোর জন্য পিসিতে থাকতে হবে নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট বা এনপিইউ, যা আপাতত স্ন্যাপড্রাগনচালিত পিসির বাইরে নেই। তবে ভবিষ্যতে ইন্টেল ও এএমডির কিছু প্রসেসরেও এনপিইউ থাকার কথা রয়েছে। সেগুলোও কোপাইলট প্লাস পিসির ফিচারগুলো পাবে।
কোপাইলট প্লাসের বদৌলতে পিসিগুলো ক্লাউডের ওপর ভিত্তি না করেই লেখালেখি, কোডিংয়ে সাহায্য থেকে শুরু করে ভাষান্তর বা ব্যবহারকারীর নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী শিডিউল তৈরির মতো কাজগুলো করতে পারবে। পিসিগুলোর কি-বোর্ডে থাকবে সরাসরি কোপাইলটে যাওয়ার জন্য বাটন। এর মধ্যেই লেনোভো, ডেল, এসার, আসুস ও এইচপি কোপাইলট প্লাস ডিভাইস বাজারে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রিকল ফিচার
অনলাইনে এর মধ্যেই তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রিকল। কোপাইলট প্লাস পিসিতে প্রতি মুহূর্তে ব্যবহারকারী কী করছে, তার একটা রেকর্ড কোপাইলট টুকে রাখবে, যাতে ভুলে কিছু ডিলিট করে ফেললে বা হারিয়ে ফেললে রিকলে প্রবেশ করে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনশট ও লগ দেখে উদ্ধার করা যায়। মাইক্রোসফটের দাবি, এসব ইউসেজ লগ ও স্ক্রিনশট সম্পূর্ণ লোকাল, ব্যবহারকারীর ডিভাইসের বাইরে কখনোই সেগুলো পাঠানো হবে না। তার পরও গোপনীয়তায় চরম হস্তক্ষেপ হিসেবেই রিকল ফিচারটিকে দেখছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, আগেও মাইক্রোসফট থেকে ডাটা হ্যাক হয়েছে।
নতুন সব সারফেস ডিভাইস
নতুন সারফেস প্রো ট্যাবলেট—ল্যাপটপ হাইব্রিড ডিভাইসে এসেছে বেশ কিছু নতুনত্ব। ইন্টেল প্রসেসরের বদলে থাকছে স্ন্যাপড্রাগন এক্স এলিট বা প্লাস প্রসেসর, ১৬ বা ৩২ গিগাবাইট র্যাম, ২৫৬ গিগাবাইট থেকে ১ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ, ১৩ ইঞ্চি ওলেড ডিসপ্লে এবং বেশ কিছু ডিজাইনে পরিবর্তন। স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এবং ওলেড প্যানেল ব্যবহারে আগের সারফেস প্রো ডিভাইসের চেয়ে এবারের মডেলটি ৯০ শতাংশ দ্রুত কাজ করতে সক্ষম, ব্যাটারি লাইফ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্য শুরু ৯৯৯ ডলার থেকে।
সরাসরি ম্যাকবুক এয়ারকে টেক্কা দিতে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে সারফেস ল্যাপটপ ৭। এটিও পাচ্ছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এক্স এলিট ও প্লাস প্রসেসর, ১৩.৮ অথবা ১৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে, ১৬ থেকে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত র্যাম ও ২৫৬ গিগাবাইট থেকে ১ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ। অ্যালুমিনিয়াম চেসিস, আরো হালকা-পাতলা গড়ন ও ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি লাইফ আসলেই ম্যাকবুক এয়ারের চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায় সারফেস ল্যাপটপ ৭। দাম শুরু এক হাজার ৯৯ ডলার থেকে।