‘আলকাট্রাজ থেকে কেউ কখনো পালাতে পারেনি’, বলেছেন ট্রাম্প, তবে অসাধ্য সাধন করেছিল তিনজন!

১৯৬৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক আলকাট্রাজ কারাগার পুনরায় চালুর নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভয়ঙ্কর ও দাগী অপরাধীদের জন্য কারাগারটি আধুনিকভাবে সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ করে আবারও চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (৪ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক বেশি দিন ধরে আমেরিকা হিংস্র, সহিংস এবং পুনরাবৃত্ত অপরাধীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইন, শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে আলকাট্রাজ পুনরায় চালু করা হবে।’ এছাড়া সোমবার (৫ মে) ওভাল অফিসে তিনি মন্তব্য করেন ‘আলকাট্রাজ থেকে কেউ কখনো পালাতে পারেনি।’
এই কারাগারটি ১৯৬৩ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে আলকাট্রাজ দ্বীপ একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের কাছাকাছি অবস্থিত।
এই কারাগারে অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল এবং এখানে কুখ্যাত অপরাধী আল কাপোন ও রবার্ট স্ট্রাউডের মতো ব্যক্তিরা বন্দি ছিলেন। কারাগারের সুরক্ষা ব্যবস্থা এত কঠিন ছিল যে, কেউ পালাতে পারবে না বলে সবাই মনে করত। তবে, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই কারাগার থেকে পালানোর ১৪টি প্রচেষ্টা হয়েছিল, যার সবগুলোই ছিল ব্যর্থ।
যারা, যেভাবে পালিয়েছিল
১৯৬২ সালের ১২ জুন সকালবেলা রুটিনমাফিক সেল চেক করতে শুরু করে আলকাট্রাজ কারাগারের কারারক্ষীরা। অন্যান্য কয়েদিরা ততক্ষণে উঠে পড়লেও, জন অ্যাংলিন, দুই ভাই ক্লারেন্স অ্যাংলিন ও ফ্রাঙ্ক মরিস তখনও ঘুমাচ্ছিল। সেলের বাইরে থেকে তাদের মাথা দেখা যাচ্ছিল। কিছু সময় পর রক্ষীরা সেলের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে, কিন্তু সেলগুলো খালি! সেলগুলোতে দেখা গেল প্লাস্টারের ডামি রাখা, বাইরে থেকে যা দেখে মনে হচ্ছিল বন্দিরা ঘুমাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুরো আলকাট্রাজ লকডাউন করা হয় এবং তদন্ত শুরু হয়।
এটাই ছিল ইতিহাসের রহস্যময় পালানোর ঘটনা। তিনজন বন্দী—জন অ্যাংলিন, ক্লারেন্স অ্যাংলিন এবং ফ্রাঙ্ক মরিস পালিয়েছিল, কিন্তু তারপর আর তাদের কোনো হদিস মেলেনি। কিছু লোক বিশ্বাস করেন তারা পালাতে সফল হয়েছিল, আবার অনেকে মনে করেন তারা সানফ্রান্সিসকো বে-এর ঠান্ডা পানিতে ডুবে মারা গেছে।
পালানোর মূল পরিকল্পনাটি ছিল ফ্রাঙ্ক মরিসের। তার বুদ্ধিমত্তা ছিল প্রবল এবং আগেও অনেকবার জেল ভেঙে পালিয়েছে। আলকাট্রাজে আসার আগে তার অপরাধের তালিকা ছিল দীর্ঘ। জন এবং ক্লারেন্স অ্যাংলিনও ব্যাংক ডাকাতির অপরাধে জেলে এসেছিল এবং সেখানেই মরিসের সাথে তাদের পরিচয়।
তিনজন মিলে জেল পালানোর পরিকল্পনায় তাদের চতুর্থ সদস্য ছিল অ্যালেন ওয়েস্ট, যিনি আরও একজন কুখ্যাত অপরাধী। ১৯৬১ সালের ডিসেম্বরে তারা একত্রিত হয় এবং সেলের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালানো পরিকল্পনায় তারা তা ভাঙা শুরু করে।
কারাগারে কাজ করার সুযোগ পেয়েই, তারা পালানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে শুরু করে। ওয়েস্ট সেলুনে কাজ করে চুল সংগ্রহ করে, মরিস রেইনকোট চুরি করে এবং তারা কাঁচামাল তৈরি করে ডামি বানায়, যা বন্দিদের অনুপস্থিতি লুকাতে ব্যবহার করা হয়।
তারা ধীরে ধীরে ভেন্টিলেটর ভাঙতে শুরু করে, এর মধ্যে ড্রিল মেশিন তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে সেলের দেয়ালও ভাঙতে থাকে। সেলের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে তারা ছাদ পর্যন্ত পালানোর উপায় তৈরি করে ফেলে। সেখান থেকে নিচে নেমে সানফ্রান্সিসকো বে পার হয়ে পালানোর জন্য তারা একটি নৌকা বানায়, যা রেইনকোট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
১৯৬২ সালের ১১ জুন রাতে, সেল চেক শেষে তারা তাদের পালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। তারা সেল থেকে বের হয়ে ছাদে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে আসে। তারপর তারা সানফ্রান্সিসকো বে-র কাছে একটি অন্ধকার স্থানে নৌকা ভাসিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মেরিন কাউন্টি পৌঁছানো এবং সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া।
এফবিআই, ইউএস মার্শাল এবং অন্যান্য সংস্থা তদন্ত শুরু করে, কিন্তু তিনজনের কোনো হদিস মেলেনি। অ্যালেন ওয়েস্ট, যে পালানোর চেষ্টা করেছিল, তার কাছ থেকে পুরো পরিকল্পনা জানা যায়। তিনি দাবি করেন, বাকি তিনজন সফলভাবে পালিয়ে গিয়েছিল।
তদন্তে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়, যেমন হাতে বানানো বৈঠা এবং রেইনকোটের তৈরি ব্যাগ। যদিও পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেনি এবং তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০১৩ সালে জন অ্যাংলিনের একটি চিঠি পাওয়া যায়, যেখানে তিনি দাবি করেন যে তারা পালাতে সফল হয়েছিল, কিন্তু পরে তাদের মধ্যে দুইজন মারা যায়। এরপর ২০১৫ সালে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যা নাকি পালানোর পরের বছরগুলোতে তোলা হয়েছিল।
আজও এই ঘটনা উন্মোচিত হয়নি। তবে এফবিআই ১৯৭৯ সালে তদন্ত বন্ধ করে দেয়, কারণ তারা কোনো নতুন তথ্য পায়নি। তবে ইউএস মার্শালরা তদন্ত চালিয়ে যেতে চায় যতক্ষণ না তিনজনকে গ্রেপ্তার করা যায় বা তাদের মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়।