Bangladesh

আ’লীগের কর্মসূচি নিয়ে জোট শরিকরা নীরব, সরকার কঠোর

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। দলের খুনিদের বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত তাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

এদিকে সরকার পতনের পর ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ তকমা পাওয়া ১৪ দল শরিকরাও নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে রয়েছে। বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও অনেকেই সাড়া দেননি। তবে দুই-একজন নেতা জানান, কর্মসূচি সমর্থন কিংবা প্রত্যাখ্যান– কোনোটা নিয়েই ভাবছেন না তারা। 

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর মনোভাব তুলে ধরেছেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত তাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু তারা এ পর্যন্ত কোনো ক্ষমা চায়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মানে না বলেও কেউ দাবি করেনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যতদিন না তারা ক্ষমা চাচ্ছে; তাদের নেতৃত্বকে ট্রায়ালের মধ্যে না আনা হচ্ছে এবং যতক্ষণ না বিচার হচ্ছে; দায়বদ্ধতার মধ্যে না আসছে, ততদিন তাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। তাদের আগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান এখানে।’ তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা জোরপূর্বক গুম ও হত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড হলো, ছেলেমেয়েদের খুন করা হলো, শত শত ছেলে অন্ধ ও অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তারপরও তো আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই; অনুতপ্তও নয়। তারা মিথ্যা কথা বলছে। তিন হাজার পুলিশ সদস্য মারা গেছে– বলা হয়েছে। কত বড় জালিয়াতি ও মিথ্যা কথা! আওয়ামী লীগে যারা ক্লিন আছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, তারা কি অনুতপ্ত হয়েছেন? অন্য নেতারা কী বলেছেন– দল এই কাজ করেছে, আমরা অনুতপ্ত ও ক্ষমা চাই? আওয়ামী লীগের কে এসে বলছেন যে, হাসিনার লিডারশিপ মানি না; আমি একটা ক্লিন লিডারশিপ চাই।

১৪ দলের শরিকরা ধোঁয়াশায়

দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধসহ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা বিষয়ে অনেকটাই ধোঁয়াশায় ১৪ দলের শরিকরা। তারা বলছে, জোটের কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের একার কর্মসূচি। ফলে এই কর্মসূচি সমর্থন কিংবা প্রত্যাখ্যান– কোনোটার বিষয়ে ভাবার অবকাশ নেই তাদের।  
গত মঙ্গলবার দলের অফিসিয়াল ই-মেইল ও ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফেব্রুয়ারিজুড়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল-সন্ধ্যা ‘সর্বাত্মক কঠোর’ হরতাল রয়েছে। এর আগে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিতরণ; ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। গতকাল এ সংক্রান্ত দুই পাতার একটি প্রচারপত্র দলের ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে। এই প্রচারপত্র ডাউনলোড করে সারাদেশে বিলি করতে নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে। দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সরকারের অপশাসন-নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদ, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবিতে এসব কর্মসূচি পালিত হবে।’ তবে বিজ্ঞপ্তিতে দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতার স্বাক্ষর ছিল না। 

গতকাল দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের (সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার) সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুরূপ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। 

সরকার পতনের পর আওয়ামী লিগের জোট শরিকরা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। দল দুটির অন্য নেতাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে। ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো এবং জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে কোনো রকমে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। অন্য শরিক দলগুলোও মাঝে মাঝে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়া ছাড়া মাঠে নামার অবস্থায় নেই। কর্মসূচি বিষয়ে কথা বলার জন্য বুধবার ১৪ দলের বেশ কয়েকজন নেতার মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দেওয়া হলেও অনেকে রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, ‘আমরা তো নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই সংকটে রয়েছি। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যানের বিষয় নিয়ে ভাবব কীভাবে? আর যদি সমর্থনও জানাই, মাঠে নামব কীভাবে?’

অন্য একজন নেতা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ১৪ দলের শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বেশির ভাগ হয় আত্মগোপনে, না হয় গণহত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষে কে বা কারা কর্মসূচি ঘোষণা করল এবং কীভাবেই বা সেটি পালিত হবে– তা নিয়ে জোট শরিকদের পরিষ্কার ধারণা নেই। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ বা আলোচনাও করা হয়নি। 

১৪ দলের শরিক বাসদের (রেজাউর) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান সমকালকে বলেন, ‘পত্রিকার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানতে পেরে বিষয়টি নিয়ে আলাপের উদ্দেশ্যে শরিক দলের দু’একজন নেতাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কেউ-ই ফোন ধরেননি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণার আগে আমাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই এটি তাদের একক কর্মসূচি বলেই মনে হচ্ছে। তা ছাড়া কর্মসূচি কীভাবে পালিত হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। ফলে এ কর্মসূচি সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান নিয়ে কী বা বলা যাবে?’ অবশ্য জনজীবনের সংকট নিরসনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণের মতো জনদাবির সঙ্গে একমত থাকার কথাও জানান রেজাউর রশীদ খান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d