Bangladesh

আলুর সংকট নেই, দাম বাড়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা: সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার সমিতি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী এ বছর দেশে এক কোটি টনের বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। যদিও কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এ বছর আলুর উৎপাদন ৮৫ লাখ টনের বেশি নয়।

সরকারি দুই সংস্থার মতে, চলতি বছরে দেশে এক কোটি টনের বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার তুলনায় বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত এক মাস ধরে দেশে আলুর দাম বেড়েই চলেছে।

বর্তমানে দেশে আলুর কোনো সংকট নেই বলে দাবি করছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বর্তমানে দেশের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষিত রয়েছে, তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে আলু সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন আলু বাজারে আসবে। ফলে বাজারে আলু সরবরাহের কোনো ঘাটতি হবে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে এ বছর আলুর উৎপাদন ১.১২ কোটি মেট্রিক টন এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে এই উৎপাদন ১.০৪ কোটি মেট্রিন টন।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ তথ্য জানায়। রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরীসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি তথ্যে বড় ফারাক রয়েছে। আমাদের জানামতে দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপন্ন হয়নি। অথচ বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রতিবেদনে ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। এ বিবেচনায় সরকারি হিসাবে তো আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আরো বলেন, ২০২৩ সালের মে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে যখন আলু খালাস হওয়া শুরু হয়, তখন হিমাগার শেডে কাঁচা আলুর মূল্য ছিল প্রতি কেজি ২৬-২৭ টাকা। এই দরেই প্রকারভেদে আলু বিক্রি শুরু হয়েছিল। তবে আজ পর্যন্ত সেই দাম (হিমাগার শেডে) বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা হয়েছে; অর্থাৎ মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলুর হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এই মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাশিত নয় বলে মনে করছে হিমাগার সমিতি। সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা আলু সংরক্ষণ করেছেন, তাদের অনেকে মনে করছেন, আলুর মজুত কম রয়েছে। সে জন্য তারা আলুর মূল্যবৃদ্ধি করে চলেছেন।

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোতে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা সঠিক মূল্য না পাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়েছেন। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম, ভোজ্য তেল ও ভুট্টার দাম বাড়ায় অনেক আলুচাষি এসব পণ্য চাষে ঝুঁকেছেন। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবে আলু চাষ ও উৎপাদন কম হয়েছে।

অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে চাহিদার উদ্বৃত্ত আলু উৎপাদন হওয়ায় তা কম দামে বিক্রি করে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং হিমাগারের মালিক লোকসানে পড়েন। এতে অনেক হিমাগার ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়ে যান। ফলে বর্তমানে খুব কমসংখ্যক হিমাগার ব্যবসায়ী নিজেরা আলু কিনে সংরক্ষণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে আলুর অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য হিমাগারের মালিকদের দায়ী করা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button