আলেপ্পোর অর্ধেকের বেশি এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে
সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত সিরিয়া। গৃহযুদ্ধের দাবানলে আবারও পুড়তে শুরু করেছে পুরো দেশ। নিহতের সংখ্যও বেড়েই চলেছে।
বুধবার শুরু হওয়া বিদ্রোহীদের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে দেশটির ঐতিহাসিক ও বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর অধিকাংশের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
এদিকে বিদ্রোহী বাহিনীকে দমনে ২০১৬ সালের পর শনিবার রাশিয়া প্রথমবারের মতো আলেপ্পোর বিভিন্ন অংশে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বুধবার শুরু হওয়া অভিযান ক্রমশ বাড়ছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক। এই অভিযান গত কয়েক বছরের মধ্যে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আক্রমণ।
বিদ্রোহীরা ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে আলেপ্পো থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এবারই প্রথম শহরটিতে প্রবেশ করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলেপ্পোর বিমানবন্দর এবং শহরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শনিবার ভোরে বিদ্রোহীরা শহরের বেশিরভাগ অংশ কোনো বড় প্রতিরোধ ছাড়াই দখল করেছে।
সংস্থাটির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘সরকারি বাহিনী পিছু হটায় কোনো লড়াই হয়নি।’ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘নগর পরিষদ, পুলিশ স্টেশন, গোয়েন্দা অফিস সব খালি। এমনটা আগে কখনো ঘটেনি।’
এর আগে, শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের কিছু শহরে বিদ্রোহীরা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অঞ্চলগুলোতে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও মিত্র বাহিনী বুধবার থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী এইচটিএসের সঙ্গে যুক্ত একটি চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের আলেপ্পোর ভেতরে যানবাহনে চলাচল করতে দেখা গেছে।
বিবিসি ভিডিওটির অবস্থান (জিও লোকেশন) শনাক্ত করে নিশ্চিত করেছে যে, এটি আলেপ্পোর পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরতলিতে ধারণ করা।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তাদের একজন প্রতিবেদক শুক্রবার আলেপ্পোর ঐতিহাসিক দুর্গের সামনে সরকারবিরোধী যোদ্ধাদের দেখেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন দমনের পর সিরিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে সিরিয়ার বড় অংশ দখল করে নেয়। পরে সিরিয়ার সরকার রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় অধিকাংশ এলাকা পুনরুদ্ধার করে। ইদলিব এখনো বিদ্রোহীদের শেষ শক্ত ঘাঁটি। এটি মূলত এইচটিএসের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী এবং তুর্কি বাহিনীও সেখানে অবস্থান করছে। শুক্রবার সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমানবাহিনী ইদলিবের কাছে ২৩টি বিমান হামলা চালায় বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
রুশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘চরমপন্থি শক্তির’ ওপর হামলা চালিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘সিরিয়ার সরকারকে দ্রুত শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে রাশিয়া সমর্থন দিচ্ছে এবং সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।’
এর আগে, ইদলিবে ২০২০ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। তবে বুধবার এইচটিএস ও মিত্ররা নতুন করে অভিযানের ঘোষণা দেয়। তারা সরকার ও মিত্র মিলিশিয়াদের ওপর অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ তোলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্রোহীরা দ্রুত অগ্রসর হয়েছে কারণ সিরিয়ার মিত্র ইরান ও হিজবুল্লাহ ইসরাইলি হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ায় আবারও হামলার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। গত এক বছরে কয়েক দফায় ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার হয়েছে সিরিয়া। লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই নতুন করে দেশটিতে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরাইল। তাদের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করলে সিরিয়াকে চরম মূল্য দিতে হবে। গাজা আর লেবাননে তাণ্ডবের পাশাপাশি সিরিয়াতেও গত এক বছরে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ বিষয়ে তেলআবিবের বক্তব্য ছিল, ‘ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে’।