Bangladesh

আশুলিয়ায় ৫ আগস্ট পুলিশ আত্মসমর্পণ করলেও যে কারণে মানেনি ছাত্র-জনতা

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষকে গুলি করেছে, ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশের ওপর মানুষের ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল।’

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালানোর খবর পৌঁছানোর আগে আশুলিয়া থানা এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় স্থানীয় ছাত্র-জনতার।

এসব সংঘর্ষের ঘটনায় সেদিন আশুলিয়ায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয় বলে দাবি স্থানীয়দের। পুলিশের দাবি, তাদের তিন সদস্যকে হত্যা করা হয়।

পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ছবিতে দেখা যায়, একটি ওভারব্রিজে দুইজনের মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

মরদেহ দুটি ৫ আগস্ট সারারাত সেখানে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল এবং পরদিন নামানো হয়। তারা একজন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্য এবং অপরজন সাধারণ পুলিশ সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে আশুলিয়া থানা সূত্র।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া আশুলিয়া থানা এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী বুড়িরবাজার এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়।

তারা বলেছেন, ৫ আগস্টের এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত তার আগেরদিন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ৪ আগস্ট ব্যাপক আকারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে, পেটায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করে। পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় কয়েকজন নিহত হয় এবং আহত হয় অসংখ্য।   

পরদিন ছিল ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ছাত্র-জনতার এ লংমার্চ ঠেকাতে ৫ আগস্ট সকাল থেকে কঠোর অবস্থানে থাকে পুলিশ। আশুলিয়া এলাকায় কোনো মিছিল দেখলেই পুলিশ গুলি চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া বুড়িরবাজার এলাকার স্থানীয় অন্তত ২০ জন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাইপাইল-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশেই আশুলিয়া থানা। ৫ আগস্ট সকাল থেকে থানা সংলগ্ন মহাসড়কের পূর্ণ দখলে ছিল পুলিশ। সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে যেন সড়ক দিয়ে কেউ ঢাকার দিকে যেতে না পারে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। সকাল ১১টার মধ্যেই পুলিশের গুলিতে অন্তত ৪-৫ জন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় অসংখ্য মানুষ।’

পুলিশ ওই এলাকায় গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখার মধ্যেই দুপুরের পর শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। এ খবর ওই এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা উচ্ছ্বসিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। আনন্দ মিছিল শুরু হয় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। এসময় পুলিশ কিছুটা নমনীয় অবস্থানে চলে যায়। এর মধ্যেই কয়েকশ লোকের একটি মিছিল আশুলিয়া থানা ঘেরাও করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।

পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তখন আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। জনগণের উদ্দেশে পুলিশ বলে, তারা সংঘর্ষ চালিয়ে যেতে চায় না। থানা থেকে নিরাপদ স্থানে যেতে চায়।

বুড়িরবাজারের কয়েকজন বাসিন্দা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘থানা ঘেরাও করা জনতা পুলিশের আত্মসমর্পণের ঘোষণা উপেক্ষা করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে। পুলিশ তখন আবার তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এতে ১২ থেকে ১৪ জন তৎক্ষণাৎ থানার সামনে ও আশপাশে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। কয়েকজনের মরদেহ স্বজন, বন্ধুরা গুলির মধ্যেই কোনোভাবে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আর পড়ে থাকে বেশ কয়েকজনের মরদেহ।’

স্থানীয়রা জানায়, পড়ে থাকা আটটি মরদেহ পুলিশ একটি ভ্যানগাড়িতে উঠিয়ে সন্ধ্যার দিকে একটি পুলিশ পিকআপ ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মরদেহ পুলিশের ভ্যানে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। রাতে তারা দুই পুলিশ সদস্যকে ধরে পিটিয়ে হত্যার পর আশুলিয়া থানার পাশের ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে।

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষকে গুলি করেছে, ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশের ওপর মানুষের ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পুলিশের প্রভাব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের লোকদের নানাভাবে হয়রানি করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, গ্রেপ্তার-রিমান্ড বাণিজ্য করে তারা নিজেদের জনগণের শত্রু বানিয়েছিল। এ কারণে পুলিশ আত্মসমর্পণ করতে চাইলেও জনতা তা মানেনি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor