Trending

আসছে নতুন আমদানি নীতি, পুরোনো কাপড়সহ যেসব পণ্য আনা যাবে না

দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় শতকোটি টাকার পুরোনো কাপড় আমদানি হয়। ২০২৬ সালের পর থেকে এ সুযোগ আর থাকবে না।

ক্ষুদ্র আমদানিকারকদের মাধ্যমে দেশে পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাতে দুই বছর পর থেকে কোনো ধরনের পুরোনো কাপড় আমদানি করা যাবে না। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি পুরোনো কাপড় আমদানি করা হয়। এ কাপড় আমদানি বন্ধে নতুন আমদানি নীতি আদেশে (২০২৪-২৭) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে ২০২৪-২৭ মেয়াদের জন্য নতুন আমদানি নীতি আদেশ সংশোধনের কাজ চলছে। আগামী মাসে এ নীতি আদেশের খসড়া মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। দুই মাসের মধ্যেই এ আদেশ জারির বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

পণ্য আমদানিতে উদার দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। আমদানি নীতি অনুসরণ করে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। তবে কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২৪-২৭ সালের জন্য করা আমদানি নীতি আদেশেও আমদানি–নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা থাকবে।  

এ নিয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি, আগামী মাসের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে। বিদ্যমান আদেশের মেয়াদ থাকতেই এটি হয়ে যাবে, কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।’ পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধের বিধান আমদানি নীতি আদেশে রাখা হবে বলে জানান বাণিজ্যসচিব।

শীতের গরম পোশাক, কম্বল, সোয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, পুরুষের ট্রাউজার, সিনথেটিক ও ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট ইত্যাদি প্রতিবছর আমদানি করেন কয়েক হাজার ক্ষুদ্র আমদানিকারক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এ অনুমতি দিয়ে থাকে। বর্তমানে আমদানিকারকেরা সর্বোচ্চ দুই টন কম্বল, ছয় টন সোয়েটার, ছয় টন লেডিস কার্ডিগান, ছয় টন জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, ছয় টন পুরুষের ট্রাউজার ও দুই টন সিনথেটিক এবং ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট আমদানি করতে পারেন।

প্রধান আমদানি–রপ্তানি নিয়ন্ত্রক শেখ রফিকুল ইসলাম মনে করেন কাপড় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম আছে। তাই কাপড় আমদানি বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। 

নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে। বিদ্যমান আদেশের মেয়াদ থাকতেই এটি হয়ে যাবে, কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব।

পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধ হলে তাতে গরিব মানুষ বিপদে পড়তে পারে বলে দাবি আমদানিকারকদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুরোনো কাপড়ের যে দাম, দেশি নতুন কাপড়েরও দাম তার কাছাকাছি। মনে হয় না এতে মানুষ খুব অসুবিধায় পড়বে।’ 

তবে বাংলাদেশ পুরাতন কাপড় আমদানিকারক সমিতির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শীতে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মানুষ যে রকম কষ্ট পায়, তাদের কথা মাথায় রেখে হলেও অন্তত আগামী আমদানি নীতি আদেশে সুযোগটি রাখা উচিত। নামে পুরাতন কাপড় হলেও এগুলো স্বাস্থ্যগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বাংলাদেশে আসে।

পরিবর্তন আসতে পারে শুল্কায়ন পদ্ধতিতে

পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই এ পদ্ধতি আর চালু রাখবে না সরকার। বিশেষ করে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর তা একেবারেই তুলে দেওয়া হবে। নতুন আমদানি নীতি আদেশে এটিও বিবেচনা করা হবে বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশের রাজস্ব আয়ের এক-তৃতীয়াংশ সংগ্রহ হয় আমদানি শুল্ক থেকে। তবে ২০২৬ সালে এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়ার পর যেসব চ্যালেঞ্জে পড়বে বাংলাদেশ, তার মধ্যে অন্যতম আমদানি শুল্কহার কমানো। এ হার কমিয়ে আনলে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে ন্যূনতম আমদানিমূল্য বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার কথা বলা থাকবে নতুন আমদানি নীতিতে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২টি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২৭টি পণ্যের ওপর থেকে ন্যূনতম আমদানি মূল্য তুলে নেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে মূল কাজটি করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে আমদানি নীতিতে নির্দেশনা থাকবে। 

নিষিদ্ধ পণ্য যা থাকছে

নতুন আমদানি নীতিতে চিংড়ি, জীবিত শূকর ও শূকরজাত সব ধরনের পণ্য, পপিবীজ ও পোস্তদানা, ঘাস, ওয়াইন লিজ ও আরগোল, ঘন চিনি, কৃত্রিম শর্ষের তেল, নিম্নমানের পণ্য অথবা পুরোনো, ব্যবহৃত, রিকন্ডিশন্ড পণ্য বা কারখানার বাতিল করা বা স্টক লটের পণ্য; রিকন্ডিশন্ড অফিস ইকুইপমেন্ট অর্থাৎ ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরোনো কম্পিউটার, কম্পিউটারসামগ্রী ও পুরোনো ইলেকট্রনিকসসামগ্রী; সব ধরনের শিল্প স্লাজ ও স্লাজ দিয়ে তৈরি সারসহ যেকোনো পণ্য, সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ আমদানি–নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ থাকবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ও শিল্পজাত দ্রব্য অর্থাৎ এলড্রিন, ক্লোরডেন, ডিডিটি, ডাই-এলড্রিন, এনড্রিন, হেপ্টাক্লোর, মিরেক্স, টক্সফেন, হেক্সক্লোরোবেনজিন, পলিক্লোরিনেটেড বাই-ফিনাইল; হাইড্রোলিক হর্নসহ ৭৫ ডেসিবেলের ঊর্ধ্ব মাত্রার সব হর্ন; পলি প্রোপাইলিন ও পলিথিন ব্যাগ; দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন ও চেসিসবিশিষ্ট থ্রি–হুইলার যানবাহন অর্থাৎ টেম্পো, অটোরিকশা ইত্যাদি আমদানি করা যাবে না।

বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের সীমারেখা দেখানো হয়নি এমন মানচিত্র, চার্ট ও ভৌগোলিক গ্লোব, হরর কমিকস, অশ্লীল, নাশকতামূলক সাহিত্য পুস্তিকা, সংবাদ সাময়িকী, পোস্টার, ফটো, ফিল্ম, কাগজপত্র, অডিও-ভিডিও টেপ ইত্যাদি পণ্যও আমদানি করা যাবে না বলে নতুন আমদানি নীতি আদেশে বলা থাকবে। 

শর্ত সাপেক্ষে আমদানি

নতুন আমদানি নীতি অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল, সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের মাছ ধরার কারেন্ট জাল, পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি, তিন বছরের বেশি পুরোনো ও ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে সব ধরনের মোটরসাইকেলসহ এলএনজি ও লিকুইফাইড প্রপেন ও বিউটেনস ছাড়া পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও অন্যান্য গ্যাসীয় হাইড্রো-কার্বন এবং পেট্রোলিয়াম কোক ও পেট্রোলিয়াম বিটুমিন ছাড়া পেট্রোলিয়াম তেলের রেসিডিউ আমদানি করা যাবে শর্ত সাপেক্ষে। 

সিনেমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ছাড়া উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত কোনো চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। তবে বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র সাফটাভুক্ত দেশগুলোয় রপ্তানির বিপরীতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে সমসংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে।

সব ধরনের খেলনা ও বিনোদনমূলক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোন বয়সের শিশুর জন্য প্রযোজ্য, তা উল্লেখ থাকতে হবে এবং প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার ক্ষেত্রে তা ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়’ মর্মে রপ্তানিকারক দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ থাকার কথা বলা থাকবে। বেসামরিক বিমান বা হেলিকপ্টারও আমদানি করা যাবে শর্ত সাপেক্ষে। 

পুরোনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ‘কোনো বিষাক্ত বা বিপজ্জনক বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে না’ মর্মে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র ও আমদানিকারকের ঘোষণাপত্র থাকতে হবে। সব ধরনের যুদ্ধজাহাজ শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তরবারি ও বেয়োনেট ইত্যাদি পণ্য শুধু ব্যবহারকারী সংস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে আমদানি করতে পারবে। 

জানা যায়, বর্তমানে দেশে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে ২০২১–২৪ সালের বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশের মাধ্যমে। এ আদেশটি জারি করা হয় আগের নীতির মেয়াদ শেষ হওয়ারও সাড়ে চার বছর পরে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d