Trending

আসন্ন বাজেট: করবৈষম্য কাটছেই না

আয়কর আইন ২০২৩ প্রণয়নের পর ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী কল্যাণ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্জিত আয়ের ওপর কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সরকারি কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জিত আয় রাখা হয়েছে সম্পূর্ণ করমুক্ত। এক দেশে এ ধরনের দুই নীতিকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই বৈষম্য দূর করতে প্রাক-বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রস্তাব দিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন।

কিন্তু এই প্রস্তাব আমলে নিচ্ছে না এনবিআর। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্জিত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের গ্র্যাচুইটি তহবিল এবং শ্রমিকদের লভ্যাংশ তহবিলে করছাড়ের যে সুযোগ ছিল তা তুলে নেওয়া হয়।

বিপরীতে সরকারি কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জিত আয়কে দেওয়া হয়েছে কর অব্যাহতি।

নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ায় বৈষম্য তৈরির পরও সরকারি কর্মকর্তারা এমনটি করেছেন বলে মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এনবিআরসহ সরকারের সব কর্মকর্তা এটির সুবিধাভোগী। এসব কর্মকর্তা বৈষম্য চান।

এখানে একটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট কাজ করছে। এ কারণেই বিষয়টিকে এভাবে করা হয়েছে। আইনটি এনবিআর করেছে। ফলে এখানে আমলাতুষ্টির প্রতিফলন পড়েছে।’

এক দেশে দুই নীতির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রেই নয়, সবখানেই সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের জন্য সুবিধা তৈরি করে নেন।

যেমন তাঁরা অনেক টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারলেও সাধারণ মানুষ সেই সুযোগ পায় না। সাধারণ মানুষের জন্য লিমিট করে দেওয়া হয়েছে।’

সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের লভ্যাংশের ওপর কর দিতে হয় না, কিন্তু বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের কর দিতে হয়, বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে সরকার নিয়োগদাতা হিসেবে বাড়তি কোনো টাকা দেয় না। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা জমা দেয়।

তবে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এই যুক্তির বিরোধিতা করে বলেছেন, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে কর কমানোর সুযোগ না থাকলে সরকারি চাকরিজীবীদেরও সমান হারে কর করে দেওয়া উচিত। একদিকে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর প্রচেষ্টা, অন্যদিকে এ নিয়ে করদাতাদের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি করা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়।

সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ভিন্ন করহার আরোপকে গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়করনীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এক দেশে দুই ধরনের আইন চলতে পারে না। এমন বৈষম্য তৈরি করা অনুচিত। যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর আরোপ করতেই হয়, তবে সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষকেই করের আওতায় আনা উচিত। আয়কর আইনের এ সিদ্ধান্তটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এ আইন প্রণয়ন করার সময় এ নিয়ে কী ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি।

২০২৩ সালে বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের লভ্যাংশের ওপর আয়কর আরোপের যে আইন করা হয়েছিল তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। শুরুতে  ২৭.৫০ শতাংশ কর আরোপ করা হলেও পরে সমালোচনার মুখে এনবিআর সেটি কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। পুরনো আয়কর আইনে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত করের আওতামুক্ত ছিল।

নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিনিয়োগের লাভের ওপর ১৫ শতাংশ করে সরকারকে কর দিয়েছে। এতে ঠিক কী পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার সঠিক হিসাব দিতে পারেনি কোনো কর অঞ্চল।

বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইন যদি করতেই হয় তবে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের চাকরিজীবীর জন্য সমানভাবে করতে হবে। সেটি করা না গেলে আইনের নামে হবে প্রহসন। একই সঙ্গে এনবিআরের এই বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করা উচিত। প্রভিডেন্ট ফান্ড করমুক্ত থাকুক। কারণ এটি একজন চাকরিজীবীর সারা জীবনের সঞ্চয়। জীবনের শেষবেলা এটিই তাঁর ভরসা।

জানতে চাইলে ফরেন ইনভেস্টার্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির বলেন, ‘এনবিআরের কর আদায়ের অনেক ক্ষেত্র আছে। সাধারণত কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে উপকৃত হন। অবসরকালীন এই সুবিধার ওপর সরকারের কর আরোপ করা উচিত নয়।’ 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর এ ধরনের কর আরোপ করা হলে তহবিল গঠনে কম্পানিগুলো নিরুৎসাহিত হবে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য বাড়িয়ে  সঞ্চয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto