Hot

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগামী বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করহার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও বাড়ানো হচ্ছে না করমুক্ত আয়সীমা। অনেক পণ্যে ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ করায় এর প্রভাব পড়বে বাজারে।

সব মিলিয়ে আয় না বাড়লেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে টার্গেট করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে করহার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে।

চাল, গম, ভুট্টা, সরিষাবীজ, পরিশোধিত সয়াবিন, পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ারবীজ, তুলাবীজ, বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ, ক্রুড অয়েল, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিটুমিন, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, ইনসুলিন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের অত্যাবশ্যক ওষুধ এবং ভ্যাকসিন ও ওষুধের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের দরকারি রাসায়নিক ইত্যাদির ওপর বসতে যাচ্ছে বাড়তি শুল্ক। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে বা ইন্টারনেট ব্যবহারে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। অবসরে পার্কে ঘুরতে গেলে আগের চেয়ে খরচ বাড়বে। ক্লান্তি কাটাতে কোমল পানীয় খেতে গেলেও স্বস্তি নেই।

সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। অথচ চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আয়ে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আদায়ের বর্তমান চিত্র অনুযায়ী, রাজস্ব লক্ষ্য অর্জন করতে হলে ৩০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এই বিশাল পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এনবিআর করজাল বাড়ানোর পাশাপাশি করহার বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছে।

রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর প্রতিবছর বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক-কর ও ভ্যাট হ্রাস-বৃদ্ধি করে থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে বাজারে ওই সব পণ্যের দাম বাড়ে-কমে। কর আদায় বাড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বাজেটে নিত্যব্যবহার্য বেশ কয়েকটি পণ্যের করহার বাড়ানো হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক কারণে সেসব পণ্যের দাম বাড়বে।

বর্তমানে ৩৭ লাখ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতা। এই শ্রেণির করদাতাদের জন্য বাজেটে আয়কর খাতে ছাড় থাকছে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও আয়কর আদায়ের কথা চিন্তা করে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে করদাতা হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করা হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে আয়কর আইনে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যক্তি ও কম্পানি—দুই শ্রেণির করদাতাই কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।

এনবিআর মনে করে, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ালে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেই সঙ্গে আনুপাতিক হারে মানুষের আয়ও বেড়েছে। তাই সীমা বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করে না সংস্থাটি। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এনবিআর কখনোই টানা করমুক্ত আয়ের সীমা কমায়নি। সাধারণত দুই-তিন বছর বিরতিতে আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। ২০২০-২১ সালে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানি, যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি আইপিওর (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ২০ শতাংশ। তবে আগামী বাজেটে এই করহার বেড়ে দাঁড়াবে ২২.৫০ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের কম আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে করপোরেট করহার ছিল ২২.৫০ শতাংশ। এই হার বেড়ে হচ্ছে ২৫ শতাংশ। অবশ্য শর্ত পালন করতে পারলে এই করহার ২.৫০ শতাংশ কমবে।

অন্যদিকে পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, এমন প্রতিষ্ঠানের করহার অপরিবর্তিত রয়েছে। তাদের করহার ২৭.৫০ শতাংশ। এক ব্যক্তি কম্পানির ২২.৫০ শতাংশ করহারও অপরিবর্তিত রয়েছে। শর্ত পালন করতে পারলে এই করহার আরো ২.৫০ শতাংশ কমবে। এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেন পাঁচ লাখ টাকার বেশি ও বার্ষিক মোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে।

এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর ক্যাপিটাল গেইন কর আরোপের সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। এই হার হতে পারে ১৫ শতাংশ। কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে।

অবশ্য বাজেটে বিত্তশালীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের পদক্ষেপ থাকছে। বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ। বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। বছরে সাড়ে ৪৬ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।

বিয়ে করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই একটি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে হয়। আসন্ন বাজেটে কর আদায় বৃদ্ধিতে ছাড় দেওয়া হয়নি নতুন দম্পতিকেও। কারণ কমিউনিটি সেন্টারের সেবা নিতে গেলেও রিটার্ন জমার সনদ দিতে হবে।

বহুল আলোচিত তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি না বাড়াতে আইএসএফের নানামুখী চাপ থাকলেও আরো তিন বছর বাড়ছে কর অব্যাহতির মেয়াদ। ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ৩০ জুন ২০২৭ পর্যন্ত করা হচ্ছে। তবে আগে এই খাতের ২৭টি উপখাত এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এখন তা কমে দাঁড়াতে পারে ২১ থেকে ২৩টি।

অন্যদিকে রাজস্ব আয় বাড়াতে পরোক্ষ কর (আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট) খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করে আনা এবং সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে আরো ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে।

বর্তমানে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে প্রবেশে এবং রাইডে চড়তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পার্কে ঘোরার খরচ বাড়বে। এ ছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। 

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, ফলের জুস, আমসত্ত্বের দাম বাড়তে পারে। কারণ সরবরাহ পর্যায়ে এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে একটি স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাটহার (১৫ শতাংশ) ছিল। নানা কারণে সেটি রাখা সম্ভব হয়নি। এ জন্য বর্তমানে একাধিক হারে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে এই হার যৌক্তিক করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ভ্যাটহার বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। ২০২৬ সাল নাগাদ পর্যায়ক্রমে সব পণ্য ও সেবার ওপর স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাটহার আরোপ করা হবে।

অন্যদিকে আইএমএফের পরামর্শে কর ব্যয় কমিয়ে আনতে আমদানি শুল্ক খাতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শূন্য শুল্কহারবিশিষ্ট প্রায় শতাধিক পণ্যের ওপর ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এ তালিকায় রয়েছে চাল, গম, ভুট্টা, সরিষা বীজ, পরিশোধিত সয়াবিন, পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ার বীজ, তুলাবীজ, বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ, ক্রুড অয়েল, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিটুমিন, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, ইনসুলিন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ওষুধ এবং ভ্যাকসিন ও ওষুধের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের দরকারি রাসায়নিক ইত্যাদি। বর্তমানে ৩৩৫টি আইটেমের পণ্য আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় না।

১ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বাজারে সেসব পণ্যের দাম বাড়বে না বলে মনে করছে এনবিআর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্য রাখতে শুল্কছাড় বা শূন্য শুল্ক রয়েছে। এ ছাড়া বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, শিল্পের প্রসার, রপ্তানি পণ্যের বাজার টেকসই করা এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় অনেক পণ্যে শুল্কহার শূন্য রাখা হয়। রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে শূন্য শুল্কের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের বিকল্প নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d