Bangladesh

আসন সমঝোতা: জয় না পেলে দল বিপন্ন হওয়ার চিন্তা শরিকদের

  • স্বতন্ত্রে সাহসী আওয়ামী লীগ
  • নির্বাচনে না থাকলে দল ভাঙার শঙ্কা জাপার
  • পরিস্থিতির কারণে সরে দাঁড়াতে পারে জাকের পার্টি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিকদের মতো বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) আসন সমঝোতা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে টলানো যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে শরিক কিংবা বিরোধী দল অথবা নির্বাচনে আসা অন্য কোনো দল আসন সমঝোতার প্রশ্নে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। তাতেও ভ্রুক্ষেপ করছে না আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এমন শক্ত অবস্থানের কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এ নেতারা বলছেন, নির্বাচনসঙ্গী দলগুলোর সঙ্গে নানা কৌশলে চলার সাহসের মূলে রয়েছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাই এমন শক্ত অবস্থান গ্রহণের ফলে নির্বাচনসঙ্গীদের কেউ মাঠ ছাড়লেও আপাতত আর আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলতে পারবে না বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ ও এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক একাধিক দল, জাপার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের কৌশলের জালে আটকা পড়েছে নির্বাচনে আসা দলগুলো। আওয়ামী লীগের ছকের বাইরে যেতে পারছে না কোনো দলই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব কর্মকান্ড চলছে এসব নির্বাচনী উত্তাপের একটি দিক। নির্বাচন ও আসন সমন্বয় নিয়ে যা চলছে, সেটা দরকষাকষি ছাড়া কিছুই নয়। আওয়ামী লীগ কম কম দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে পারে, অন্য পক্ষ কত বেশি নিতে পারে সেই রাজনীতিই এখন চলছে। তবে আবদারের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে রাশ টানা হচ্ছে সময়ে সময়ে।

জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চান। অন্যদিকে অনেকেই চান জেতার নিশ্চয়তা। ফলে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।’

সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশে নানা মহলের পাশাপাশি বিদেশিদের চাপ রয়েছে। মাঠের বড় বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এমন বৈরী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ যত বেশি সম্ভব নিবন্ধিত দলকে নির্বাচনের আনার প্রতি মনোযোগী ছিল। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলসহ ২৯টি দল নির্বাচনের অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে বিরোধী দল জাপা অন্যতম। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর যে জনসমর্থন রয়েছে, তাতে নির্বাচন উৎসবমুখর করা ও কেন্দ্রে ভোটার আনা কঠিন। এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দলের নেতাদের উৎসাহিত করে। দলটি মনে করছে, দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। নির্বাচন ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচার জমজমাট হয়ে উঠবে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের প্রায় প্রত্যেকটিতে প্রার্থী দেওয়ায়, পাশাপাশি তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় অন্য দলগুলো জয় নিয়ে চিন্তিত। তারা মনে করছে, সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কিংবা ক্ষমতাসীনদের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারানো সম্ভব নয়। যে কারণে মিত্র, বিরোধী নির্বিশেষে প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা চেয়ে দেনদরবার করছে।

আওয়ামী লীগ, জোট শরিক ও বিরোধী দল জাপার একাধিক নেতারা সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন সমন্বয় বা সমঝোতার ইস্যুটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা ও শরিক দলের নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক হলেও সমাধান আসছে না। এবারের নির্বানে আসন সমঝোতার ধারণাটিই রাখতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও প্রার্থীদের জয় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে তাই মানতে চান না শরিক ও জাপার নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর না চাওয়ার অন্যতম কারণ, বিএনপিবিহীন নির্বাচন শেষ করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হলে দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষের কাছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ কম দিতে হবে। অন্ততপক্ষে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর রাখতে হবে। ফলে নির্বাচনমুখী দলগুলোকে আসন সমন্বয় করে জয়ের নিশ্চয়তা দিতে নারাজ শেখ হাসিনা।

শরিক দল ও জাপার একাধিক নেতা বলেন, আসন সমঝোতায় না গেলে জাপা যেমন ঝুঁকি মনে করছে, শরিকরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ ভাবতে পারছে না। কারণ, জিততে না পারলে দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। আর আওয়ামী লীগ যদি আসন ছাড় দেয়, তবেই জয় নিশ্চিত হতে পারে।

আসন সমন্বয়ের পক্ষে থাকা দলগুলোর নেতারা বলছেন, দল বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি যেমন নেওয়া যাচ্ছে না, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগও এ পর্যায়ে এসে দেখতে পাচ্ছেন না তারা। এখন তারা যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ‘ম্যানেজ’ করে নির্বাচনে পার হতে চান।

শরিক দল ও জাপার নেতারা সেই পথে হাঁটলেও এখনো সবুজ সংকেত না পাওয়া নির্বাচনমুখী সব দলের ভেতরেই অস্থিরতা চলছে। একটি সূত্র জানায়, ১৪ দলীয় জোট ও জাপার বাইরে যেসব দল ভোটে এসেছে তাদের এক ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ে গেছে। তাদের চাওয়াও খুব সামান্য। তাই দুয়েকটি দল বাদে বেশিরভাগেরই উচ্চবাচ্য নেই। তবে জাকের পার্টি এক ধরনের দোদুল্যমান অবস্থায় আছে। দলটির শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২১০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও নানা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও করে রেখেছেন তারা।

জাকের পার্টির একাধিক নেতা বলেন, তারা সবসময়ই বলে এসেছেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে জাকের পার্টি নির্বাচনে যাবে। এসবের ঘাটতি দেখলে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দলটির আরও দুদিন সময় লাগবে বলে জানান তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, যদি কেউ নির্বাচনী ট্রেন থেকে নেমে যেতে চায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিয়ে নির্বাচনী ট্রেন গন্তব্যে টেনে নিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ। তারা মনে করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কোনো দলই এখন আর সরে যেতে পারছে না বা পারবে না। তাই এসব দলকে আওয়ামী লীগের ইচ্ছায় চলতে হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের অনেকের মতে, নিবন্ধিত দলগুলোর বেশিসংখ্যক দল নির্বাচনী ট্রেনে যেহেতু উঠেই পড়েছে, মাঝপথে নেমে যাওয়ার অবস্থা কারোরই নেই। কারণ, আসন সমন্বয় নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে দাবিদাওয়া করতে গিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে সবাই। জাপার ভাবমূর্তি আরও নিম্নগামী হয়েছে। নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে জাপা ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। দলটির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতো জিএম কাদের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আসন সমন্বয়ের দাবিদাওয়া এতই বেশি যে, বলেকয়ে আসন সমন্বয় হওয়ার সুযোগ কমে গেছে। তাতে দুপক্ষেরই মর্যাদা তলানিতে ঠেকবে। আবার আসন সমন্বয় না হলে দলগুলোর জয় কঠিন হয়ে যাবে। তাই আসন সমন্বয় প্রকাশ্যে থাকবে না। ‘আন্ডার দ্য টেবিল’ হিসাব-নিকাশে যেতে হবে সব দলকে।

জাপার শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, দলটির জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নির্বাচনে যেতে হবে। তবে কতটা আদায় করা সম্ভব হয়, সেই দরকষাকষি করছে জাপা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘জটিল এক পরিস্থিতি পার করছি।’ এর বাইরে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে থাকা জোট শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘জোটের সঙ্গে সমঝোতা আজকালের মধ্যে হয়ে যাবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto