আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার কৃতিত্ব দাবি করলেও, তার অনুপস্থিতিতে ঝুঁকিরও আশঙ্কা ইসরায়েলের
রোববার গোলান মালভূমি পরিদর্শনকালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, মি. আসাদের পতন ‘তার প্রধান সমর্থক হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে আমাদের জোরালো পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ ফলাফল’।
গত এক বছর ধরে আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়াতে শত্রু-মিত্র সবাই ইরান এবং তার সহযোগী দেশগুলো যেমন: লেবানন ও সিরিয়াতে হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে চাপ দিয়ে আসছে।
তবে, সবার নিষেধ সত্ত্বেও ইরান নেতৃত্বাধীন অক্ষকে দুর্বল করার লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যায়নি ইসরায়েল।
তারা ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর বোমাবর্ষণ করে ইরানের ওপর প্রথম প্রকাশ্য হামলা চালায় এবং নিয়মিত সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে ইরানের হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাঠানোর রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।
মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনকে ইরান ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে টানা এক বছরব্যাপী অভিযানের প্রাপ্তি হিসেবে মনে করছে ইসরায়েল। তবে পরবর্তীতে দেশটিতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ইসরায়েলি বিশ্লেষক ও নেতারা বলছেন, হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত না থাকলে, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা হয়ত আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পুনরুজ্জীবিত করার সাহস পেত না। আর ইরান ও হিজবুল্লাহও হয়ত আসাদকে বাঁচানোর জন্য আরও শক্রিশালী প্রতিক্রিয়া দেখাতো। গত এক দশক ধরে আসাদের শাসনকে তারা যেভাবে সমর্থন দিয়ে এসেছে, তা এই কথার উপযুক্ত প্রমাণ।
রোববার গোলান মালভূমি পরিদর্শনকালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, মি. আসাদের পতন ‘তার প্রধান সমর্থক হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে আমাদের জোরালো পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ ফলাফল’।
এরপরও সিরিয়ায় আসাদের উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে ইসরায়েলিরা উদ্বিগ্ন।
প্রধান বিরোধী জোট হায়াত তাহরির আল-শাম বহু বছর ধরে সিরিয়ায় হিজবুল্লাহ এবং তার ইরানি মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা সিরিয়াকে লেবাননে ইরানের অস্ত্র পাঠানোর রুট হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি রোববার দামেস্কে এক ভাষণে বলেন, আসাদ সরকার সিরিয়ায় অনেক অশান্তি ডেকে এনেছে এবং দেশটিকে ‘ইরানের লোভ চাষের খামারে’ পরিণত করেছে।
কিন্তু হায়াত তাহরির আল-শামও একটি কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, যাদের ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি কোনো প্রীতি নেই।
এছাড়া, এই বিদ্রোহীদের প্রধান বিদেশি সমর্থক তুরস্ক। এই দেশটি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছে। ফলে তুরস্ক-সমর্থিত কোনো সরকার যদি ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, তা ভেবে ইসরায়েলের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
রোববার নেতানিয়াহু বলেন, ‘দামেস্কের স্বৈরশাসক আসাদ সরকারের পতন বড় সুযোগ এনে দিয়েছে, তবে এটি বড়রকমের ঝুঁকিতেও পরিপূর্ণ।’
বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পরবর্তী প্রভাব মোকাবিলায়, ১৯৭০ এর দশকের পর রোববার প্রথমবার সিরিয়ার সার্বভৌম ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে এবং সীমান্তের কাছে কৌশলগত অবস্থান দখল করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার বলেছেন, উত্তর-পূর্ব সিরিয়া নিয়ন্ত্রণকারী কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গেও কথা বলছে ইসরায়েল।
গিদিওন সার এর বেশি কিছু জানাতে রাজি হননি।