আসামে কথিত বাংলাদেশি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার
ভারতে আসামে অবস্থানরত বাংলাভাষী মুসলিমদের জন্য বহু ও বাল্যবিবাহ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, বাংলাভাষী কথিত বাংলাদেশি মুসলিমদেরকে রাজ্যে স্বীকৃতি দেয়া হবে আদিবাসী (ইনডিজেনাস) হিসেবে। তবে সে ক্ষেত্রে শর্ত আছে। তা হলো, আসামের ‘খিলঞ্জিয়া’ আদিবাসী হিসেবে বিবেচিত হতে হলে ‘মিয়া’দেরকে (বাংলাভাষী মুসলিম) অবশ্যই বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের চর্চা ত্যাগ করতে হবে। বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন লাইভ মিন্ট।
রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়, রাজ্যে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেরই শিকড় বাংলাদেশে। গত মাসে ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) কার্যকরের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এরপরই তাদেরকে নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন হিমান্ত বিশ্বশর্মা।
শনিবার তিনি বলেন, ‘মিয়ারা’ আদিবাসী বা আদিবাসী নন, সেটা আলাদা বিষয়। আমরা বলতে চাই, যদি তারা আদিবাসী হতে চান, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার জন্য তাদেরকে বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহ ভুলে যেতে হবে। উৎসাহিত করতে হবে নারী শিক্ষাকে।
উল্লেখ্য, আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের বোঝাতে অবমাননাকর শব্দ হিসেবে ‘মিয়া’ শব্দ ব্যবহার করা হয়।
যারা বাংলাভাষী নন, তারা সাধারণত এসব বাংলাভাষী মুসলিমকে বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফলে এ সম্প্রদায়ের অধিকারকর্মীরা এই শব্দটিকে অবাধ্যতার টার্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন।
হিমান্ত বিশ্বশর্মা বলেন, দুটি বা তিনটি বিয়ে আসামের কোনো সংস্কৃতি নয়। আমি তাদেরকে সবসময় বলি, ‘মিয়া’রা যদি আদিবাসী হন তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের দুই-তিনটা বউ থাকতে পারবে না। এটা আসামের সংস্কৃতি নয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন কিভাবে কেউ সাত্রার (বৈষ্ণবদের) জমি দখল করে আদিবাসী হতে চাইতে পারেন? যদি এসব মানুষ আসামীয় আদিবাসী হতে চান তাহলে তারা নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না।
ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী মাদ্রাসার পরিবর্তে শিশুদেরকে স্কুলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা। একই সঙ্গে ওইসব শিশুকে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি বাংলাভাষী মুসলিমরা আসামের রীতি অনুসরণ করেন, তাহলে তাদেরকেও আদিবাসী (ইনডিজিনাস) হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।
এর আগে হিমান্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, তার রাজ্যে বহুবিবাহ বন্ধে আইন প্রণয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২৩ সালে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে কমিটি বলেছে, রাজ্য সরকার এ বিষয়ে আইন করতে পারবে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বহুবিবাহ বন্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবরে নির্দেশনা জারি করে আসাম সরকার। তাতে বলা হয়, যদি স্ত্রী বা স্বামী জীবিত থাকেন তাহলে রাজ্যের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে অনুমোদন পাবে না, যদিও তা কোনো কোনো ধর্মে অনুমোদিত।
গত বছর দু’দফায় বাল্যবিবাহ বন্ধের বিরুদ্ধে তীব্র দমন-পীড়নমূলক অভিযান চালায় রাজ্য সরকার। বিশ্বশর্মা বলেন, দেখা যায়, অনেক বয়স্ক পুরুষ একাধিক বিয়ে করেছেন। স্ত্রীরা তাদের চেয়ে অনেক কম বয়সের। এসব মেয়ে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির।