আস্থা ফিরছে না শেয়ারবাজারে

সংস্কারের নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না। ফলে টানা দরপতনের মুখে পড়েছে শেয়ারবাজার। আস্থাহীনতার কারণে শেয়ারবাজার থেকে কমছে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ফলে বাজারের গড় লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। পরিস্থিতি এতই জটিল হয়েছে যে, গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একটানা দরপতন হয়েছে। গত সপ্তাহে ১০৮ পয়েন্টের বেশি সূচকের পতন হয়েছে ডিএসইতে। এই পতনে আতঙ্কিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা মনে করছেন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজারে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না। বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিলে শেয়ার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হবে না। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাজার সংস্কারে নানা পদক্ষেপের কথা জানানো হলেও বাস্তবে কোনো উন্নতির দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতির কারণে বাজারে নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করছে না। বাজারে থাকা বিদেশিরাও বিনিয়োগ কমাচ্ছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ কমেছে। ডিএসইর ফেব্রুয়ারি মাসের শেয়ার ধারণ তথ্যে দেখা গেছে, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো, ঢাকা ডাইং, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, রেনেটা ও সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এসব কোম্পানি থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীর। এসব কারণে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই রকমের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ বাজারে দেখা যায়নি। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে ডিএসইর সূচক। গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে সূচক। গত সপ্তাহের চার দিনের লেনদেনে ডিএসইতে সূচক ১০৮ পয়েন্ট কমে সর্বশেষ ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ হাজার ৯৭ পয়েন্ট দাঁড়িয়েয়েছে। যা ২০২৩ সালে এপ্রিলে ছিল ৬ হাজার ২৫২ পয়েন্ট। ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল সূচকের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৬৮৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক বছরে সূচক কমেছে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। গত এক মাসের ব্যবধানে ডিএসই সূচক হারিয়েছে ২০৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ প্রতিদিনই সূচক হারাচ্ছে শেয়ারবাজার। একই সঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গড় লেনদেন ৪৫০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৪০০ কোটি টাকা। এপ্রিলে এসে গড় লেনদেন ৩৫০ কোটি টাকায় নেমেছে।
জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থাসংকট তৈরি হয়েছে। আস্থা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। উল্টো কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। যারা শেয়ার ধরে রেখেছিল তাদেরও শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা বাজারের জন্য বড় রকমের অশনিসংকেত। আমরা যারা বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা ভীত হয়ে পড়ছি। বাজার এখন মূল ট্র্যাক থেকে অফ ট্র্যাকে চলে গেছে। এখনি মূল ট্র্যাকে ফেরানো না যায় তাহলে ভবিষ্যতে কোনো আশা থাকবে না।