Bangladesh

আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ত্রাণের মহাযজ্ঞ

এ এক ত্রাণের মহাযজ্ঞ। স্তরে স্তরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে চাল, ডাল, লবণ, খেজুরসহ বিভিন্ন খাবার। প্রায় ১৫ শতাধিক মানুষ সেখান থেকে নির্দিষ্ট ওজনে মেপে ১৫ কেজির প্যাকেট তৈরি করছেন। প্যাকেটগুলো তোলা হচ্ছে বড় কাভার্ডভ্যানে। এগুলো পাঠানো হচ্ছে বন্যার্ত এলাকার মানুষদের জন্য।

রাজধানী বাড্ডার সাতারকুল সানভ্যালি আবাসন এলাকার মাদরাসাতুস সুন্নাহ’র মাঠে চলছিল বিশাল এই কর্মযজ্ঞ। এটি আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কার্যক্রম। চ্যারিটি এই প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্গত মানুষদের জন্য কাজটি করছে।

রোববার সেখানে পৌঁছাতে দুপুর ১২টা। গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশে এখনও তেমন আবাসন গড়ে ওঠেনি। চারপাশে বিস্তৃত মাঠের মধ্যে মাদরাসা। মাদরাসার মাঠে বিশাল প্যান্ডেলে চলছে ত্রাণের কার্যক্রম। ট্রাকে করে চাল-ডাল-তেলসহ অন্যান্য খাবারের বস্তা আসছে। সেগুলো আনলোড করা হচ্ছে এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নির্দিষ্ট ওজনে মেপে প্যাকেট সাজাচ্ছেন। নয় থেকে নব্বই বছরের মানুষ কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।

এখানকার ব্যবস্থাপক মাসুম বিল্লাহ জানালেন, ত্রাণের দুইটি অংশ নির্ধারণ করে কাজ করছেন তারা। ভারী খাবার আর শুকনো খাবার। ভারী খাবারের কাজটি করা হচ্ছে প্যান্ডেলে আর অদূরে সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ড্রাইভিং শেডে চলছে শুকনো খাবার প্যাকেজিংয়ের কাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা গত দুইদিনে ভারী খাবারের এক হাজার প্যাকেটের (১৫ টন) ৯টি কাভার্ডভ্যান বন্যার্ত এলাকায় পাঠিয়েছি। আজকে দুয়েকটি বেশি পাঠানো হবে।’

ভারী খাবারের ১৫ কেজির প্যাকেট করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে- ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ আর তেল দুই কেজি। মাসুম বিল্লাহ আরও বললেন, আমাদের দুইটি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ট্রাক দিচ্ছে। ফলে আমাদের ট্রান্সপোর্ট খরচ কমছে।

শুকনো খাবারের শেডে গিয়ে কথা হলো ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বললেন, আমরা দুইভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করি। আমাদের তহবিলে অনলাইনে-সরাসরি মানুষ দান করে। সেই টাকায় আমরা অর্ডার দিয়ে পণ্য আনি। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষ থেকে আমাদেরকে পণ্য পাঠায়।

তিনি জানালেন, শুকনো খাবারের প্যাকেটে আছে—চিড়া ২ কেজি, মুড়ি ১ কেজি, খেজুর দুই কেজি, চিনি ১ কেজি, বিস্কুট ২ প্যাকেট, স্যালাইন ২ প্যাকেট, গুড়া দুধ ১ প্যাকেট, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ১ পাতা, দিয়াশলাই ১টি, মোমবাতি ১ ডজন আর পানি ১ বোতল।

দূর দূরান্ত থেকে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসছেন মানুষ

স্বেচ্ছাসেবা দিতে আসা নাঈম হোসেন ও মোহাম্মদ নাসিরের সঙ্গে কথা হলো। দুজনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরে। তবে চাকরির সূত্রে নাঈম থাকেন নারায়ণগঞ্জ আর নাসির গাজীপুর। দুজন একসঙ্গে এসেছেন। জানতে চাইলে নাঈম বললেন, মানুষ মানুষের জন্য। সেই মানবিকতার জায়গা থেকে আমরা এসেছি। সকালে এসে কাজ শুরু করেছি। রাতে আবার চাকরির ডিউটি আছে। বিকেলে চলে যাব।

মাদরাসার পাশে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কাজে দেখা গেল। ইউনিভার্সিটির সিএসই’র ছাত্র জাহিদ হাসান বললেন, পাশেই আছি। তাই কাজ করতে চলে এলাম। দেশটা তো আমাদের সবার।

ব্যবস্থাপক মাসুম বিল্লাহ বললেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকে এসেও এখানে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন। এ ছাড়া সকল শ্রেণির মানুষ অংশ নিয়েছে।  

যা জানালেন প্রতিষ্ঠান প্রধান শায়েখ আহমদুল্লাহ

আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়েখ আহমদুল্লাহ। দুপুরে যোহরের নামাজের পর তার সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, তাদের ২০ কোটি টাকার বেশি ফান্ড জমা হয়েছে এই বন্যা কার্যক্রমে। তারা বন্যার্ত এলাকায় দায়িত্বশীলদের কাছে ত্রাণ পৌঁছান। তারা সেগুলো বন্যার্তদের হাতে পৌঁছে দেন।  

তবে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো অসম্ভবের মতো। প্রশিক্ষিত বাহিনী যেমন নৌবাহিনী ছাড়া ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাহিনীগুলো চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা গতকাল ফেনীতে অনেক দূর যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে দুর্গম এলাকায় যেতে পারিনি। আমরা বাহিনীর কাছে গতকাল দুইটি কাভার্ড ভ্যান ত্রাণ সরবরাহ করেছি। সেনা বাহিনীর কাছে আরও ত্রাণ পৌঁছাব যেন দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো যায়। গবাদি পশুর জন্য ৬৭ টনের বেশি ভুসি সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শায়েখ আহমদুল্লাহ বলেন, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন সকল ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করে থাকে। আমাদের এখানে যারা স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেক হিন্দু ভাইয়েরা আছেন। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রেও আমরা খুঁজে খুঁজে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আলাদাভাবে প্রায়োরিটি দিয়ে কাজ করি।

তিনি বলেন, অনেক বন্যা হোক, আমরা অনেক ত্রাণের কাজ করব—এটা আমাদের আকাঙ্ক্ষা নয়। আমরা চাই বন্যা আর না হোক। বন্যা হতে থাকবে আর আমরা মোকাবিলা করতে থাকব এটা নয়। বন্যা যেন না হয় তার জন্য আমাদের নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের পানি নিষ্কাশন পদ্ধতির উন্নয়ন, বন্যার কারণ চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে।

শায়েখ আহমদুল্লাহ আরও বলেন, আমাদের স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ; যুবকরা বেকার না হয়ে উদ্যোক্তা হোক। সেজন্য আমরা নানা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স, বিজনেস ম্যানেজমেন্টের কোর্স প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অরাজনৈতিকভাবে কাজ করি। আমাদের তিনটি কাজ, প্রথম হলো সেবামূলক শিক্ষামূলক এবং ইসলামের দাওয়াতের কাজটি করছি। ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছাতে চাই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button