Hot

আ.লীগ প্রতিহতে জাতি ঐক্যবদ্ধ জিরো পয়েন্টে সবাই থাকলেও ছিল না হাসিনার দল

ফ্যাসিবাদবিরোধী স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানীর জিরো পয়েন্ট। নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার বিশৃঙ্খলা করার হুমকির পর দল-মত নির্বিশেষ আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে হাজির হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংস্কার, নির্বাচন পদ্ধতি এবং প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ইত্যাদি ইস্যুতে মতভেদ থাকলেও আওয়ামী লীগ ঠেকাতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। গতকাল রোববার জিরো পয়েন্টের দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে- দল-মত নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ডান-বাম-মধ্যবামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক দলগুলো থেকে হাসিনার বিচারের দাবি জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়। অর্ধশত রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের জিরো পয়েন্টে দেখা গেছে। কেবল দেখা যায়নি আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে যে দু-তিনজন এসেছিল তাদেরকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে।

‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে, আসি আসি বলে জোছনা ফাঁকি দিয়েছে’ গানের মতোই দিল্লিতে পলাতক হাসিনা বারবার দেশে ফিরে আসার কথা দলের নেতাকর্মীদের দিলেও তিনি প্রতিবারই ফাঁকি দেন। গতকাল ‘দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা’য় ভুলে দলটির যে দু-চারজন নেতাকর্মী গুলিস্তানে এসেছিল তাদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। এমনকি যারা মাদার অব মাফিয়া হাসিনার কথায় ট্রাম্পের ছবি নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে তাদের প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটসহ সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহত’ কর্মসূচি পালন করেছে। পলাতক শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘একটি পরিবার ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা গণহত্যা করে পালিয়ে গিয়ে এখন আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মীদের উসকে দিচ্ছে।’

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিল করার শেখ হাসিনার ঘোষণা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন ফেসবুক লাইভে এসে ঢাকায় জমায়েতের পরিকল্পনা তুলে ধরে। তাদের এই গ্রুপ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। অতঃপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ৯ নভেম্বর রাতেই জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় তারা নানা স্লোগান দিয়ে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানান। বিএনপির নেতারা একই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে অবস্থান নেন। সারারাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতারা ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহত’ কর্মসূচি চালিয়ে যান। গতকাল সকালেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জিরো পয়েন্টে জমায়েত হন। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দেন এবং নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিএনপি গুলিস্তানে এবং বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরো দেবো রক্ত’সহ নানান সেøাগান দিতে থাকেন তারা।

শহীদ নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সামনে ‘জয়-বাংলা’ সেøাগান দেয় এক যুবক। উচ্চস্বরে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে ধরে ফেলে বিএনপিসহ গুলিস্তানে অবস্থানরত ছাত্র-জনতা। পরে তাকে মারধর করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। তাৎক্ষণিক ওই যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে এক বৃদ্ধ আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এসে হঠাৎ ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দেন। তিনি বলতে থাকেন, দেশ ভালো চলছে না। শেখ হাসিনা চলে আসবেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় সেখানে অবস্থান করা বিএনপি-যুবদলসহ ছাত্র-জনতা তাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তবে গণপিটুনির সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি ছাড়াও নূর হোসেন চত্বরে মিছিল নিয়ে হাজির হন সিপিবি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাসদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গণফ্রন্ট, গণদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। প্রতিটি দল ও সংগঠনের নেতারা শেখ হাসিনাকে প্রতিহত করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

রাজধানীর জিরো পয়েন্টে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’ গঠন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আগের রাত থেকে অবস্থান নিলেও গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু হয় দুপুরের পর। কর্মসূচির শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা সেøাগান দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা ম্যাচ খেলব শুধু ছাত্রলীগের সঙ্গে, যুবলীগের সঙ্গে ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আন্দোলনের পরিপূর্ণ ফল ঘরে তুলতে সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের অপকর্মের কথাগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। গত ১৬ বছরে গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি কথা ভুলে গিযে ভুলে গিয়ে তিন মাসের (অন্তর্বর্তী সরকার) পেছনে লেগেছেন।’ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস বলেন, ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ক্ষমতা পিপাসুরা আমাদের প্রায় অর্ধ লাখ ভাইবোনকে আহত করেছে। ওই ২৪ দিনে কীভাবে আপনাদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র আপনাদের স্মৃতিতে থাকলে হবে না। আপনাদের স্মৃতিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। মিডিয়ার উদ্দেশে সারজিস বলেন, বিগত ১৬ বছরে আপনাদের যেটি প্রকাশ করা উচিত ছিল, সেটি করতে পারেননি। আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গত ১৬ বছরে যত অপকর্ম হয়েছে সাহস নিয়ে ভয় না করে আপনারা দেশের সামনে তুলে ধরুন।

আগের রাত থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি অবস্থান নেয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল থেকে শহীদ নূর হোসেন দিবসকে ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে কঠোর অবস্থান নেয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা মিছিলে মিছিলে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দিতে দেখা যায়। আধা ঘণ্টা পরপর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নূর চত্বর হয়ে আবার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জড়ো হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের আরো নেতাকর্মী গুলিস্তানে উপস্থিত হয়েছেন।

নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দিক থেকে এত খানি দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, তাদের এখন ট্রাম্পের ছবি ঝুলিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করতে হচ্ছে। কিন্তু গণহত্যার জন্য দায়ী অনুশোচনাহীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসার কোনো অবকাশ নেই। চোরাগোপ্তা পথে ট্রাম্প বা মোদিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সিবিপির সাধারণ সম্পাদক রোহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, গণহত্যাকারী হাসিনার বিচার করতেই হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor