International

ইংল্যান্ডে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা কারা পরিচালণা করছে?

ইংল্যান্ডে ইসলামভীতি এবং বিদেশী বিদ্বেষের উপর ভর করে চলা বর্ণবাদী ধারা,সামাজিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে বিভাজন ও সহিংসতাকে উস্কে দিতে চায়। এরই মধ্যে ইসরাইল ও ইহুদিবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমর্থনও এসব অস্থিরতা উস্কে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক দাঙ্গা এবং দাঙ্গার পর উগ্র ডানপন্থী দলগুলো অভিবাসী ও মুসলমানদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পার্সটুডের মতে, ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে তিন তরুণীর উপর ছুরি দিয়ে নৃশংস হামলার পর এই অস্থিরতা তীব্রতর হয়েছে।

১৭ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ওই হামলা চালায়, যাকে একজন মুসলিম অভিবাসী হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। অথচ প্রকৃতপক্ষে সে ছিল রুয়ান্ডার খ্রিস্টান পিতামাতার ঘরের সন্তান।

উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর ভূমিকা

এই সহিংসতার ঘটনায় উগ্র ডানপন্থীদের উস্কানিতে শরণার্থী হোটেলগুলোতে দাঙ্গা এবং হামলা হয়েছে। এই উস্কানিদাতাদের মধ্যে একজন ইংলিশ ডিফেন্স লিগ (EDL) এর প্রতিষ্ঠাতা টমি রবিনসন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার উস্কানিমূলক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।

এই উস্কানিদাতাদের মধ্যে একজন, ইংলিশ ডিফেন্স লিগ (EDL) এর প্রতিষ্ঠাতা টমি রবিনসন সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। রবিনসন বর্তমানে সাইপ্রাস থেকে উস্কানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। ব্রিটেনের আদালতে দায়ের করা মামলা থেকে বাঁচার জন্য সে সাইপ্রাসে অবস্থান করছে।

সুপরিচিত ব্যক্তিত্বদের প্রভাব

এই চরম বিদ্বেষী ও উগ্র বর্ণবাদী মানসিকতা কেবল রবিনসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অ্যান্ড্রু টেট এবং নাইজেল ফারাজের মতো সেলিব্রিটিদের বিরুদ্ধেও দাঙ্গা ও অশান্তি উস্কে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটেনের অভিবাসন বিরোধী আন্দোলন ‘রিফর্ম ইউকে’-এর নেতা এবং সংসদ সদস্য নাইজেল ফারাজ অভিবাসী ও মুসলমানদেরকে টার্গেট করে চরম বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি দাবি করেছেন যে মুসলমানরা ব্রিটিশ মূল্যবোধের সাথে বেমানান। নাইজেল ফারাজ তার মন্তব্যে, রাজপথের দাঙ্গাকে ‘জনসাধারণের ভয় এবং অসন্তোষের প্রতিক্রিয়া’ বলে দাবি করেছেন। তিনি ভবিষ্যতের ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করে দাবি করেছেন, ‘হার্টলপুল, লন্ডন বা সাউথপোর্টের রাস্তায় আপনি যে সহিংসতা দেখেছেন,তা আগামী দিনগুলোতে সম্ভাব্য অসন্তোষ ও অস্থিরতার তুলনায় কিছুই না’।

সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকার এই দাঙ্গার তীব্র নিন্দা করে এদেরকে নৈরাজ্য ও সহিংসতা সৃষ্টাকারী বলে বর্ণনা করেছে। একটি টেলিভিশন বক্তৃতায় তিনি জোরদিয়ে বলেছেন: “আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে যারা প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সাইবারস্পেসে এই বিশৃঙ্খলাগুলোকে প্ররোচিত করতে ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে অনুশোচনা করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র সচিব ইভেট কুপার স্কাই নিউজের সাথে এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন: “যারা ভেবেছিল যে তারা দেখাতে চায় তারা গ্রীষ্মের ছুটিতে ছিল ওই ব্যক্তিরা এখন বাড়িতে পুলিশের মুখোমুখি হবে।”

এছাড়াও, ব্রিটিশ কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের প্রাক্তন প্রধান “নীল বসু”, ব্রিটেনের অভিবাসন বিরোধী আন্দোলন ‘রিফর্ম ইউকে’-এর নেতা এবং সংসদ সদস্য নাইজেল ফারাজকে সহিংসতার নিন্দা না করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন: ” নাইজেল ফারাজ কি সহিংসতার নিন্দা করেছেন? তিনি কি অভিবাসন বিরোধী আন্দোলন ইংলিশ ডিফেন্স লিগের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন?”

ইসরাইলি এবং ইহুদিবাদের নানা দিক

ইংল্যান্ডে অতি উগ্র ডান ধারা শুধু যে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তাই নয় কিছু ক্ষেত্রে ইসরাইলের নীতিকেও সমর্থন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত মে মাসে শত শত ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী এবং ইসরাইলের সমর্থকরা ফিলিস্তিনিপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে উত্তর লন্ডনে একটি ছোট সিনেমা হলের সামনে সমবেত হয়েছিল। ইসরাইল সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের আয়োজকদের একজন মিডল ইস্ট আইকে দেয়া সাক্ষাতে দাবি করেন, “ফিলিস্তিনপন্থীরা চিৎকার করছিল এবং আমাদের মুখের কাছে এসে আমাদের প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল এবং অপমান করছিল।”

ইসরাইলের সাথে দৃশ্যত সংযুক্ত গ্রুপগুলো, যেমন “Enough is Enough” এবং “7/10 হিউম্যান চেইন প্রজেক্ট” যারা সাত অক্টোবরের পরে আবির্ভূত হয়েছিল, তারা এই সমাবেশগুলোতে উস্কানি দেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও, “স্যাম ওয়েস্টলেক” এবং “ব্রায়ান স্টোভেল” এর মতো অতি-উগ্রডানপন্থী কর্মীরাও এই সমাবেশে অংশ নিয়েছিল।

সমাজে প্রভাব সৃষ্টি

এই দাঙ্গা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি শুধু অভিবাসী এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষতিই করেনি বরং একইসাথে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাও বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে তারা সহিংসতা ও অশান্তি সৃষ্টিকারী অপরাধীদের মোকাবেলা করবে। প্রবীণ লেবার এমপি ডায়ান অ্যাবট টুইটারে লিখেছেন: “সারা দেশে অভিবাসী বিরোধী দাঙ্গা নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। পরিস্থিতি জান-মাল এবং আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে আমাদের পার্লামেন্টে জরুরি আলোচনা হওয়া দরকার।”

ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক দাঙ্গা ও হামলার ফলাফলে দেখা যায়, “টমি রবিনসন”, “অ্যান্ড্রু টেট” এবং “নাইজেল ফারাজ” এর মতো ব্যক্তিদের নেতৃত্বে অতি-ডানপন্থীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং সামাজিক উত্তেজনার অপব্যবহার করে অভিবাসী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ইসলামভীতি এবং বিদেশী বিদ্বেষের উপর নির্ভর করে এই উগ্র গোষ্ঠীগুলো সামাজিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটেনে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও সহিংসতার বিস্তার ঘটাতে চায়। এরই মধ্যে ইসরাইল ও ইহুদিবাদী গোষ্ঠীর সমর্থনও এসব অস্থিরতা উস্কে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ অবস্থায় ব্রিটেনের নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতি বজায় রাখতে ব্রিটিশ সরকারকে অবশ্যই জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor