ইইউ’র নতুন আইনে কোন নিয়মগুলো মানতে বাধ্য হচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্টরা?
আইন অনুসারে রাজনৈতিক মতাদর্শ, লিঙ্গ এবং জাতীয়তা সংক্রান্ত ডেটা ব্যবহার করে কারো কাছে কোনো বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক এবং বিশেষ ইস্যুভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
নতুন আইন চালু হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে, যা বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে। আর তা করতে গেলে সামাজিক মাধ্যম মডারেশন, গ্রাহক চিহ্নিত করে বিজ্ঞাপন দেখানো, ই-কমার্সে নকল পণ্যের উপস্থিতি, এই রকম বিষয়গুলো একদম গোড়া থেকে শোধরাতে হবে।
ইউরোপজুড়ে শুরু হওয়া এই হাওয়া বদলের রিপল ইফেক্ট পড়তে পারে পৃথিবীজুড়ে।
নতুন এই আইনের প্রভাব পড়বে অ্যামাজন, অ্যাপল, গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, স্ন্যাপচ্যাটসহ আরও বহু কোম্পানির ওপর। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক কোম্পানিকে গুনতে হবে জরিমানা, আর অন্যদের গ্রাহকদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বন্ধ করতে সফটওয়্যারে আনতে হবে পরিবর্তন। আইনি কাঠামোর মধ্যে প্রযুক্তি জায়ান্টদের নিয়ন্ত্রণে আনতে একে অন্যতম রাখঢাকবিহীন ও উচ্চাকাঙ্খী পদক্ষেপ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সিএনএন।
গুজব এবং মিথ্য তথ্য ছড়ানো, বিশেষ করে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যহানি, রেকমেন্ডেড কন্টেন্টে নিয়ে অ্যাগরিদমের অনন্ত গোলকধাঁধাঁ, স্বচ্ছতার অভাব এবং মার্কেটপ্লেইসগুলো অবৈধ ও নকল পণ্যে সয়লাব; গত কয়েক বছরে এমন সব গুরুতর অভিযোগ ওঠে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ) নামে এ আইনটি পাশ হয় গত বছর, সেটির মানদণ্ড অনুসরণের জন্য কোম্পানিগুলোকে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে শুক্রবার। এখন থেকে সাড়ে চার কোটি গ্রাহকের ইউরোপের বাজারে প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে মেনে চলতে হবে এই নতুন আইন।
“একক ইউরোপীয় বাজারের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবন প্রবৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে আই আইনটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হিসাবে কাজ করবে।” বলেছে ইইউ।
ডার্ক প্যাটার্ন
সকল প্ল্যাটফর্মের জন্য গ্রাহকের ডেটা ব্যবহার, বিশেষ করে শিশু এবং সব বয়সী অনলাইন ব্যবহারকারীর ওপর সকল ধরনের টার্গেটেড অ্যাডভার্টাইজিং নিষিদ্ধ করেছে ইইউ। কারো রাজনৈতিক মতাদর্শ, লিঙ্গ এবং জাতীয়তা সংক্রান্ত ডেটা ব্যবহার করে তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তার কাছে কোনো বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক এবং বিশেষ ইস্যুভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
ডেটা সংগ্রহে অনুমতি নেওয়ার মতো ঐচ্ছিক বিষয়গুলোতে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে কোম্পানিগুলো তাদের কাঙ্খিত অপশনের ডিজাইনে ফন্টের আকার, রং এবং উজ্জল্যতায় তারতম্যসহ নানা ধরনের সুক্ষ্ম কারসাজি করে থাকে। প্রবর্তিত এই নতুন আইনটিতে পুরো ব্যাপারটিকে বলা হয়েছে “ডার্ক প্যাটার্ন” বা অসৎ প্রবণতা হিসাবে, যাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নতুন এই আইন অনুসারে সকল প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট ও কন্টেন্ট মডারেশনের সিদ্ধন্তে আপিল করার সুযোগ থাকতে হবে। সেইসঙ্গে সব কোম্পানিকে টার্মস অফ সার্ভিস সহজ ভাষায় প্রকাশ করতে হবে।
খুব বড় অনলাইন প্লাটফর্ম কিংবা সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে থাকতে ঝুঁকি যাচায়ে নিজস্ব ব্যবস্থা। যার অর্থ কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন সে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো অপকর্ম করতে না পারে সেসব ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে হবে কোম্পানিগুলোকেই।
এসবের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচার করা বিজ্ঞাপনের সংগ্রহশালা থাকতে হবে, যেন যে কেউই সেগুলোকে যাচাই করে দেখতে পারেন।
হাতে গোনা অল্প কিছু কোম্পানির ঠাঁই হয় খুব বড় প্ল্যাটফর্মের তালিকায়, যা গত এপ্রিলে চূড়ান্ত করা হয় এবং তাদের জন্য আইনের লঙ্ঘন হবে বেশ ব্যয়বহুল।
ডিএসএ অনুযায়ী একটি বড় কোম্পানির বার্ষিক মোট আয়ের ছয় শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে ইইউ, যা পরিমাণ দাঁড়াবে শত শত কোটি ডলার। উদাহরণ স্বরূপ গত বছর মেটার মোট আয় বিবেচনায় এই জরিমানা হতে পারে প্রায় সাতশো কোটি ডলার।