Hot

ইউনূসের বক্তব্যে রাজনীতিতে নয়া বিতর্ক

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের পর রাজনীতিতে নয়া বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিকে ঘিরে ধরছে অনিশ্চয়তা। তৈরি হচ্ছে নানা শঙ্কা। সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও রাজনৈতিক দল এবং জনমনে জন্ম নিচ্ছে প্রশ্ন। নির্বাচন ডিসেম্বরে নাকি জুনে এই প্রশ্নে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচনে অনড় অবস্থানে রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাও আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ওদিকে, শুধু বিএনপি নয় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে। তবে, নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দেয়নি জামায়াতে ইসলামী। সংস্কার শেষ হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছে দলটি। এরপর সময় টেনে লম্বা করলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করে জামায়াত। এ ছাড়া, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি।
জাপানের টোকিও’র ইম্পেরিয়াল হোটেলে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে ‘ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা জনগণকে বলেছি, নির্বাচন এই বছরের শেষে ডিসেম্বরে অথবা সর্বোচ্চ জুনে অনুষ্ঠিত হবে।’ দেশের সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব জাপানে বসে বিএনপি’র বদনাম করছেন। একটু লজ্জাও লাগলো না দেশের সম্পর্কে বিদেশে বসে বদনাম করতে। তিনি বলেন, একটি দল নির্বাচন চায়। আর আমরা বলতে চাই, একটি লোক নির্বাচন চায় না, সে হলো ড. ইউনূস উনি নির্বাচন চায় না। মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি বরাবরই নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে এবং এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস সাহেব স্বয়ং বলেছেন। আমরা বলি নাই, তারই এই প্রস্তাব। পরবর্তীতে তিনি শিফট করে চলে গেলেন জুন মাসে। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন কখনো বাংলাদেশে হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। আর নির্বাচন যদি করতে না চান, সেটা ইউনূস সাহেবের দায়-দায়িত্ব, আমাদের দায়-দায়িত্ব নয়। আমার জাতি-জনগণ এই নির্বাচন আদায় করবে, নইলে এদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ঠিক থাকবে না।

ওদিকে, বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দল এবং জোটগুলোও ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য ঠিক উল্টো মনে করছে সমমনারা। দুই-একটা দল ছাড়া সবাই ডিসেম্বরের নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছে তারা। নির্বাচন লম্বা সময় টেনে কেন জুনে যেতে হবে- তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই বলেও সমমনা দলের নেতারা জানিয়েছেন। বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বিদেশের মাটিতে বসে কেন এই বক্তব্য দিতে হলো, তাও স্পষ্ট না। নির্বাচনের সময় বাড়ানোর পেছনে অন্য কোনো এজেন্ডা আছে বলেও দলগুলো তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হয়, তাহলে নাকি খুব তাড়াহুড়ো করে সংস্কার করতে হবে। কিন্তু আমাদের কথা হলো আপনার উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার করুন। আপনার উপদেষ্টা পরিষদ নিরপেক্ষ নয়, এখানে দু’জন ছাত্র উপদেষ্টা বসে আছেন, তারা একটি দলের। আরেকজন উপদেষ্টার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েকজন ফ্যাসিবাদের দোসর আপনার উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে আছে। সংস্কার করুন, নাম বলতে চাই না বিব্রত হবেন। সরিষার মধ্যে ভূত রেখে আপনি সংস্কার সংস্কার করেন, সংস্কার হবে না।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি কেন অন্য দলও ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। ডিসেম্বরে নির্বাচনে অসুবিধা কোথায়? আমরাও বলছি হওয়া উচিত। কিন্তু জোর দাবি তুলি নাই। বিএনপি তুলেছে, দেশে অর্ধেকের বেশি রাজনৈতিক শক্তি তো বিএনপি’র সঙ্গে। উনি (ড. ইউনূস) কেন এটা করছেন, বুঝি না। এটা করা উচিত না।

অন্যদিকে, গত শনিবার দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এদিন জামায়াত এবং এনসিপি’র সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে, এই বৈঠক শেষে নির্বাচনের রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি। পরে রোববার আরও ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকের পরে দেশে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে মনে করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের ঠিক উল্টো। দুই-একটা দল ছাড়া সবাই ডিসেম্বরের নির্বাচন চেয়েছে। এর আগেও নির্বাচন সম্ভব। আর প্রধান উপদেষ্টাকে বিদেশের মাটিতে বসে কেন বলতে হলো, তা স্পষ্ট না। লম্বা সময় টেনে কেন জুনে যেতে হবে, তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই। দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অক্টোবর কিংবা নভেম্বরেও নির্বাচন সম্ভব। সরকার নতুন সময় কেন বাড়াতে চায়, অন্য কোনো এজেন্ডা আছে কি না- তা স্পষ্ট নয়। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও দূরত্ব রয়েছে, আরও বাড়বে। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মানবজমিনকে বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার শেষে নির্বাচনের কথা বলেছে। সরকারই বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুনে নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবে সবাই ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইবে। এর অন্যথা হলে সরকারকেই তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।  

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবশ্যই প্রধান দায়িত্ব নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন নির্বাচনের মতো হতে হবে। স্বৈরাচার সরকার পতনে এত মানুষ জীবন দিয়েছে, যেনতেন নির্বাচন হলে তাদের রক্ত দেয়া বৃথা যাবে। এজন্য সংস্কার করবে, স্বৈরাচারের দোসদের বিচার করবে। সুতরাং নির্বাচনের জন্য সময় বেঁধে দেয়া যায় না। কিন্তু প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে  যাওয়া উচিত। অন্য বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে শুধু নির্বাচনকেই আমরা মুখ্য মনে করছি না। 

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী মানবজমিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আমরা কেউ কেউ রমজানের পরে নির্বাচনের কথা বলেছি। বিএনপি ডিসেম্বরের কথা বলছে। এক্ষেত্রে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর হেফাজতে ইসলাম মনে করে, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে নির্বাচন দিলে ভালো। আগে হলেও ভালো, পরে হলেও সমস্যা নেই।  

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন মানবজমিনকে বলেন, আমরা নির্বাচন, সংস্কার এবং বিচারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলেছি। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সেই অনুযায়ী রোডম্যাপ এবং জানুয়ারিতে হলে সেই অনুযায়ী রোডম্যাপ ঘোষণার করার কথা আমরা বলেছি। তবে, সম্ভব হলে ডিসেম্বরে নির্বাচন করা উচিত বলেও আমরা মনে করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d