Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
International

ইউরোপের নেতারা যুদ্ধ চাইছেন কেন… 

যুদ্ধকামিতা, অস্ত্রসজ্জা ও বিশাল সমরশিল্প গড়ে তোলার শত আয়োজন কোনকিছুরই সমাধান করবে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও হতাশা অনেকদিন ধরেই বাড়ছে। ইইউ পার করছে অস্থির এক সংকটকাল, যেখানে সংকট একাধিক। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট, আবাসন সংকট, অভিবাসী সংকট, মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংকট– উল্লেখ করবার মতো বড় চ্যালেঞ্জ এসবই। কিন্তু, সবচেয়ে বড় সংকটটি হলো রাজনৈতিক। ইউরোপে কট্টর ডানপন্থীদের প্রভাব বাড়ছে, অনেক দেশের নির্বাচনেই ভোট বেড়েছে তাদের। এই ডানপন্থীদের থেকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে ইইউয়ের কার্যক্রম। যা এই ইউনিয়নের দুর্বল একতা ও ‘উদারনৈতিক মূল্যবোধ’-কে হুমকির মুখে ফেলেছে। 

এইতো কিছুদিন আগেই অস্ট্রিয়ার নির্বাচনে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটে জিতেছে অতি-ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টি। নাৎসিঘেঁষা এই দল আবার কট্টর ইসলাম-বিদ্বেষী, এবং মজার বিষয় হলো– রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট। অস্ট্রিয়ার তারা সরকার গঠন করতে পারবে কিনা– তা পরের বিষয়, কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের মতো অতি-ডানপন্থী দলগুলো ইইউয়ের ২৭ সদস্য দেশের মধ্যে ৯টিতেই সরকার গঠন করে ফেলেছে, বা সরকারের অংশ হয়েছে।

চাপের মুখে রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও, কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার পরেও ইইউয়ের প্রতিবেশী ইউক্রেনে যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। আমেরিকা ও ইউরোপের সহযোগিতা সত্ত্বেও রাশিয়ার পরাজয় হচ্ছে না দেখে– বাড়ছে হতাশা। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা, জলবায়ু পরিবর্তন, যার প্রভাব এখন ভালোই টের পাচ্ছে ইইউ। ইইউভুক্ত দেশগুলোতে হানা দিচ্ছে ভয়াল তাপপ্রবাহ, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। 

ক্রমশ গভীরতর হয়ে চলা এসব সংকটের মূলোৎপাটনে কিন্তু নজর নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের, সেটা অবশ্য নতুনও নয়। এই মূল সমস্যাটা হলো– তাঁদের বিধ্বংসী নব্য-উদারবাদী নীতিসমূহ, যা তারা সানন্দচিত্তে গ্রহণ করেছেন, ইইউ কাঠামোয় যুক্ত করছেন। সমস্যার মূলে নজর না দিয়ে তারা বরং যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠেছেন; যুদ্ধবিগ্রহ ইউরোপীয়দের ঐক্যবদ্ধ করে অন্য সব সংকট ভুলিয়ে রাখবে বলেই যেন তারা আশা করছেন। 

গত দুই বছর ধরে আমাদের (ইউরোপীয়দের) বলা হয়েছে, ইউরোপের (ইইউয়ের) সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হচ্ছে রাশিয়া, যার একমাত্র সমাধান ইউক্রেনে তাকে পরাস্ত করা। আমাদের বারংবার বলা হয়েছে, সংঘাতকে আরো তীব্র করাই হচ্ছে – শান্তির দিকে এগোনোর পথ। উদ্ভট শোনালেও, এমনটাই বলে যাচ্ছেন ইইউ নেতারা।  

তাই ইউক্রেন নিত্যনতুন ইউরোপীয় অস্ত্র পাচ্ছে, আরো দূরে আঘাত হানার মতো বিধ্বংসী অস্ত্রও (ক্ষেপণাস্ত্র) দিচ্ছে ইইউ সদস্যরা। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ডের আরো ভেতরে আঘাত হানার মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া উচিত ইউক্রেনকে। এর আগে একই সুরে কথা বলেছেন অন্য নেতারাও।  

সদস্য দেশগুলোকে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করবার মতো সক্ষমতার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদানের আহ্বান জানিয়ে আনা একটি প্রস্তাব গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। যদিও এর প্রতিপালন বাধ্যতামূলক নয়, অর্থাৎ এটি ছিল নন-বাইন্ডিং প্রস্তাবনা। 

অথচ অনেক আগে থেকেই এ ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে আসছে রাশিয়া। তবুও এই পদক্ষেপ দেখে, সম্প্রতি তাঁদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের নীতিতে (নিউক্লিয়ার ডকট্রিন) সংশোধন এনেছে মস্কো। কোন কোন ক্ষেত্রে গণবিধ্বংসী এই অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না– সেই বিধিনিষেধ এর মাধ্যমে কমানো হয়েছে।  

ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ চালু রেখে সংঘাতকে তীব্রতর করা জারি রেখে— এখন ইউরোপীয়দের প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, প্রতিরক্ষা খাতে আরো ব্যয় করতে হবে – যাতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ইইউ রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তত থাকে। 

‘রাশিয়ার হুমকি’ মোকাবিলায় সম্প্রতি ইইউ’তে প্রতিরক্ষা কমিশনার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পদের জন্য মনোনীত মনোনিত অ্যাঁন্ড্রেয়াস কুবিলিয়াস মনে করেন, মস্কোকে মোকাবিলার জন্য এই ইউনিয়নকে ‘যুদ্ধাস্ত্রশালায়’ পরিণত হতে হবে। 

যুদ্ধকালীন অর্থনীতির মন্ত্রকেও প্রচার করা হচ্ছে জোর গলায়, পতনের দিকে থাকা ইউরোপী অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সমরসজ্জা সাহায্য করবে এমন বিপজ্জনক ধারণা ইউরোপীয়দের গেলানো হচ্ছে। 

উদারনৈতিক অর্থনীতিবিদ ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাঘি সেপ্টেম্বর মাসেই একটি বহুল প্রত্যাশিত প্রতিবেদন জমা দেন। ‘ইউরোপের প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইউরোপের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো শান্তি। তবে ভৌত নিরাপত্তা হুমকিগুলো বাড়ছে, আমাদের এজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে’। প্রতিবেদনে দ্রাঘি পরামর্শ দেন যে, নিজস্ব সমরাস্ত্র শিল্পে ইইউয়ের ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করা উচিত।  

এই প্রতিবেদনকে ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার দিকে একটি সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেন নীতিনির্ধারকরা। অর্থাৎ, শান্তির জন্য অস্ত্রের ঝংকার – এই নীতিকেই একমাত্র পন্থা বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। 

‘শান্তি চাইলে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও’ এই মন্ত্রেই যেন দীক্ষা নিয়েছেন ইইউ নেতারা। তবে শান্তির জন্য যুদ্ধকামিতার সমস্যা হলো – আজকের দুনিয়ায় আছে পারমাণবিক অস্ত্র, যা পুরো মানবজাতিকে সমূলে নির্মূল করতে পারে। এই অস্ত্র যুদ্ধ ও শান্তির প্রচলিত সমীকরণকে বদলে দিয়েছে, এর হুমকির কারণেই পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো সরাসরি একে-অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে না।  

কেউ কেউ অবশ্য বলতেই পারেন, ইউরোপের নেতারা ‘মুখে মারিতং জগৎ’ নীতিতে চলেন, কাজে তার প্রমাণ দেন না। এজন্যই ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাব পাস ও উত্তেজক বিভিন্ন বক্তব্যের পরেও – তারা ইউরোপকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে দ্বিধা করেছেন। কিন্তু, পারমাণবিক অস্ত্র যেখানে জড়িত সেখানে এই ধরনের বাগাড়ম্বর-ও বিপজ্জনক। এতে যে উত্তেজনার পারদ চড়ছে– তাতে করে যেকোন সময় দুর্ঘটনাবশত (রাশিয়ার সাথে) সামরিক সংঘাত ঘটতে পারে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। 

তাই শান্তিকামী মানুষের প্রশ্ন– কেন এত যুদ্ধের আলোচনা, কেনই বা তার এত প্রস্তুতি? তুমুল রণপ্রস্তুতির দামামা বাজিয়ে– ইইউ কি তার প্রকৃত সংকট ও তার মূল কারণকে ধামা চাপা দিতে চায়? 

মানবাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমতা রক্ষার নীতিতে গঠিত ইইউ নিঃসন্দেহে একটি নব্য-উদারবাদী সংগঠন। কিন্তু, এটি কেবল ধনীদেরই আরো ধনী হতে সাহায্য করছে। বিত্তের বৈষম্য তাই তো বাড়ছে। ইইউ নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণকে সেবাকে সর্বাগ্রে রেখে অর্থনৈতিক নীতি গঠন করা হচ্ছে না। সেখানে ব্যবসায়ীদের মুনাফাকে সর্বোচ্চ করার চিন্তাই পাচ্ছে প্রাধান্য।

এই সমস্যা বহুকালের, এবং এনিয়ে অজস্র আলোচনা ইতোমধ্যেই হয়েছে। কিন্তু, বর্তমানের মতো সংকট কখনোই এত তীব্র ও সর্বনাশা ছিল না। প্রথম মহাযুদ্ধের আগে অস্ত্র প্রতিযোগিতার যে ঝনঝনানি বিশ্ব দেখেছে, যে মহাসমরের অমীমাংসিত অধ্যায় সূচনা করে আরো সর্বনাশা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের, আজকের পৃথিবী তার চেয়েও বড় বিপদে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই হুমকিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন যুদ্ধবাজ নেতারাই। ইইউয়ের উচিত যেসব বৈষম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে লুট করছে, তার অবসান করা, তাদের যেসব একচোখা নীতির ফলে ইউরোপে অভিবাসনের ঢল নেমেছে- সেগুলো থেকে সরে আসা। 

নব্য-উদারবাদের ভোগবাদী অর্থনীতি জলবায়ু সংকট, নিরাপত্তা সংকট বা অর্থনৈতিক সংকট— কোনটারই স্থায়ী সমাধান হবে না। ইইউ নেতারা এই সত্য যেদিন উপলদ্ধি করবেন –  পরিবর্তন তখনই আসবে। তার বদলে যুদ্ধকামিতা, অস্ত্রসজ্জা ও বিশাল সমরশিল্প গড়ে তোলার শত আয়োজন কোনকিছুরই সমাধান করবে না। বরং ইউরোপের একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কল্যাণভিত্তিক ও টেকসই শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সহযোগিতার পথ বেছে নেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ, নতুন এক ধরনের সমাজবাদের মাধ্যমে ইইউয়ের কাঠামোগত, গুণগত পুনঃনির্মাণ দরকার। যেখানে সামাজিক মুল্যবোধের পাশাপাশি, গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। একমাত্র এই উপায়েই নব্য-উদারবাদের তৈরি করা বিপর্যয়ের পথ থেকে সরে আসতে পারে ইউরোপ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto