Uncategorized

ইউরোপে বর্ণবাদের দুই বিষবৃক্ষ : আফ্রোফোবিয়া ও ইসলামফোবিয়া

ইউরোপে বর্ণবাদের দুই বিষবৃক্ষ : আফ্রোফোবিয়া ও ইসলামফোবিয়া – ছবি : সংগৃহীত

পুরো ইউরোপজুড়েই বর্ণবাদ সমস্যা এক কঠিন বাস্তবতা, যা মহাদেশটির জন্য কঠিন রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে জার্মান চ্যান্সেলর বলেছিলেন, বর্ণবাদ জার্মানির একটি বাস্তবতা। প্রকৃতপক্ষে বর্ণবাদ সমস্যা শুধু জার্মানির নয়, পুরো ইউরোপের এমন এক কঠিন বাস্তবতা, যা মহাদেশটির জন্য কঠিন রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। ইউরোপের গত দুই-তিন দশকের ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দাবি করছেন, ইউরোপের অনেক দেশেই বর্ণবাদ কাঠামোবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, যা থেকে বিভিন্ন সময়ে দাঙ্গা ও সহিংসতা তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা এতটাই কঠিন আকার ধারণ করছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তার অনেক সদস্য রাষ্ট্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যেসব কার্যক্রম নিয়েছে, সেগুলো সফলতার মুখ দেখছে না।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গত দুই দশকে ঘটে যাওয়া দাঙ্গা, হিংসতা ও বিশৃঙখল ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে এসবের পিছনে দুটি মুখ্য কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রথম কারণটি হলো, অর্থনৈতিক মন্দা ও অচলাবস্থার কারণে জনমনে সৃষ্ট অসন্তোষ। যেমন, কোভিড মহামারীর পর অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, হাঙ্গেরিসহ বেশ কয়েকটি দেশে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। দ্বিতীয় কারণটি হলো, ক্রমবর্ধমান অভিবাসী-বিরোধী বর্ণবাদ বা উপনিবেশিক আমল থেকে সমাজের নানা স্তরে ইউরোপীয় জাতীয়বাদে বিশ্বাসীদের মানসপটে জিইয়ে থাকা বর্ণবাদের কাঠামোবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ।

এ ধরনের বর্ণবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যটি হলো, জেনোফোবিয়া বা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু মনোভাবের বিস্তার। ইউরোপজুড়ে জেনোফোবিয়ার দুটি ধরন দেখা যায়- আফ্রোফোবিয়া ও ইসলামফোবিয়া। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেন্স রেডগ্রেন মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং জার্মান নাৎসিবাদের পরে ইউরোপে বর্ণবাদের ঐতিহ্যগত ধারণার পরিবর্তন এসেছে। জাতিগত জৈবিক বৈশিষ্ট্যের মৌলিক বৈষম্য থেকে সরে গিয়ে এখন জাতিগত সাংস্কৃতিক বৈষম্যের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ধরনের নতুন বা সাংস্কৃতিক বর্ণবাদকে অনেক গবেষক জেনোফোবিয়া বলে মনে করেন।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পুলিশিং এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাসহ জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ইউরোপ জুড়ে বসবাসকারী আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যমূলক যেকোনো কাজকে বোঝাতে আফ্রোফোবিয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি ফরাসি-আলজেয়িান তরুণ নাহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া এবং এর প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট দাঙ্গা ও হিংসতাকে আমরা আফ্রোফোবিয়ানের নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারি। ১৫০ বছর ধরে শাসনের সময় থেকে আফ্রিকান জনগণের প্রতি যে উপনিবেশিক বর্ণবাদ বা আফ্রোফোবিয়া ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, তার সর্বশেষ শিকার নাহেল।

দেশটির সরকারী হিসেবে ২০২১ সালে ফ্রান্সে সাড়ে ১২ হাজার বর্ণবাদী, জেনোফোবিক বা ধর্মবিরোধী ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়েছিল। ফরাসি ন্যাশনাল কনসালটেটিভ কমিশন অন হিউম্যান রাইটস পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়ে দেশটির সরকারকে সতর্ক করেছিল। বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে হারার পর ব্যাপকভাবে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন ফ্রান্সের তিন কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়। শুধু ফ্রান্স নয়, ইউরোপের অনেক দেশেই কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়োড়দের প্রতিনিয়ত বর্ণবাদের শিকার হতে হচ্ছে। ইউরোপিয়ান এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস’র (এফআরএ) এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ইউরোপের ৩০ শতাংশ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আফ্রোফোবিয়ার শিকার হয়েছেন।

২০২০ সালে অক্সফোর্ডের ইতিহাসের অধ্যাপক ফয়সাল দেবজি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক কলামে সতর্কবাণী করেছিলেন ‘জিনজিয়াং থেকে জার্মানি’তে ছড়িয়ে পড়ছে ইসলামফোবিয়া। এর এক বছর পর ২০২১ সালের ৪ মার্চ জাতিসঙ্ঘ ইসলামফোবিয়াকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছিল। ইসলামফোবিয়া শব্দটি ইসলাম ধর্ম, মুসলমান এবং ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি অযৌক্তিক শত্রুতা, ভয় বা ঘৃণা এবং তাদের প্রতি সক্রিয় বৈষম্য বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।

ইসলামফোবিয়ার বিরোধীরা দাবি করে থাকেন, ইউরোপে অনেক দেশে মুসলমানরা কেবল বৈষম্য ও সহিংসতার মুখোমুখি হয় না, তাদের নাগরিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইতালির গবেষক ফাবিও পিরোক্কো মনে করেন, ইউরোপে ক্রমবর্ধমান অভিবাসনবিরোধী বর্ণবাদের গত দুই দশকে ইসলামফোবিয়া বর্ণবাদের সর্বোচ্চ ও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া রূপ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তার মতে, এটি সমসাময়িক ইউরোপীয় বর্ণবাদের প্রধান এবং সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি এবং সম্ভবত নব্য-উদারবাদী যুগে বর্ণবাদের প্রাথমিক রূপ।

অধ্যাপক ফয়সাল দেবজি মনে করেন, ১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর থেকে বিশ্বব্যাপী লেখক সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মুসলমানদের যে আন্দোলন ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, তা ইউরোপে এশীয়-বিরোধী, আরব-বিরোধী, তুর্কি-বিরোধী বা অভিবাসীবিরোধী প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে মুসলিমবিরোধী প্রতিক্রিয়ার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

অনেকে মনে করেন, সিরিয়া সঙ্কটের শুরু থেকে ইউরোপে ব্যাপক সিরীয় অভিবাসীর আগমন ঘটার পর ইউরোপে ইসলামফোবিয়া বেড়েছে। তবে ইসলামফোবিয়া তার বর্ণবাদী পূর্বসূরি যেমন কৃষ্ণাঙ্গ-বিরোধী বর্ণবাদ বা ইহুদি-বিদ্বেষের ধারণাগুলোকে (শ্রমিক শোষণ বা মূলধন-লুণ্ঠন) প্রতিস্থাপন করেনি, বরং এটি এমন একটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে যার নিজস্ব রাজনীতি নেই। ইউরোপিয়ান ইসলামফোবিয়া রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে যেভাবে ইসলামফোবিয়া স্বাভাবিক ও প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে উঠছে তা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি সুইডেনে একটি মসজিদের সামনে পবিত্র কোরান পোড়ানোর ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউরোপে আফ্রোফোবিয়া ও ইসলামফোবিয়া বা বর্ণ এবং ধর্মভিত্তিক বর্ণবাদ ছড়ানোর পিছনে দুটি বিষয় কাজ করছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের পাশাপাশি লোকরঞ্জনবাদ বা পপুলিজমের বিকাশ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক বর্ণবাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোবদ্ধ রূপ দিতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই উগ্র জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রসারের কারণে ইউরোপে বর্ণবাদ সমস্যা আরো তীব্রতর হচ্ছে। অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি, ফিনল্যান্ডের দ্য ফিন্স, সুইডেনের সুইডেন ডেমোক্রেটস, ব্রিটেনে ইনডিপেনডেন্টস পার্টি, ফ্রান্সে ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ডেনমার্কে ডেনিস পিপলস পার্টি এবং হাঙ্গেরিতে কেডিএনপি, জার্মানির এএফডি, স্পেনের ভক্স পার্টির মতো দলের উত্থানের উদাহরণ টানা যায়। উগ্র ডানপন্থী দলগুলো ১৯৯৯ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ৪.৭% আসন দখল করেছিল, ২০১৯ আসলে যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৮.২%। এই অতি ডানপন্থী বা লোকরঞ্জনবাদী দলগুলো মূলত তীব্র জাতীয়তাবাদী যারা মনে করে তাদের জাতিই শ্রেষ্ঠ আর অভিবাসীরা ত্যাজ্য।

ব্রিটিশ সাংবাদিক কাতিয়া অ্যাডলার সম্প্রতি ফ্রান্সের দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে মন্তব্য করেছেন, এখন ইউরোপে আপনি চারদিকে তাকিয়ে দেখুন – সর্বত্রই উগ্র ডান/দক্ষিণপন্থী দলগুলোর উত্থান ঘটছে। এসব উগ্র ডানপন্থীরা জাতীয় আত্মপরিচয় ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলে অভিবাসীদের প্রতি নির্মম আচরণ করছে।

উগ্র ডানপন্থী রক্ষণশীল দলগুলোর শক্তিশালী হয়ে ওঠার কারণে ইউরোপে শুধু উগ্র জাতীয়তাবাদের বিস্তার ঘটছে না, এটি আফ্রোফোবিয়া ও ইসলামফোবিয়ার মতো বর্ণবাদকে ধীরে-ধীরে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক চরিত্র দিচ্ছে। এতদিন যেটি ছিল, শ্রেণি-চরিত্রের উপর দাঁড়িয়ে সেটি এখন রাজনৈতিক চরিত্র পাচ্ছে। সে কারণে বর্ণবাদ এবং এই বর্ণবাদের কারণে সৃষ্ট দাঙ্গা উভয়ের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইউরোপিয়ান সমাজে অদৃশ্য অবস্থায় থাকা ঔপনিবেশিক বর্ণবাদের রাজনৈতিক ব্যবহার এটিকে কাঠামোবদ্ধ ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে। কারণ উগ্র জাতীয়বাদে বিশ্বাসীদের রাজনীতিতে সফলতার জন্য একটি দেওয়াল টানতে হয়। সেটি হল- ‘নিজ’ এবং ‘অপর’-এর মাঝে দেওয়াল। এখানে বর্ণবাদ উগ্র জাতীয়বাদীদের রাজনীতিতে রসদ যোগায়-ইউরোপীয়নরা শ্রেষ্ঠ আর অভিবাসীরা সংখ্যালঘু, তাদের প্রায় দাসোচিত জীবন।

মার্ক্সবাদী সাইকোএনালিস্ট উইলহেম রেইখের ভাষায়, এরা হল ‘লিটল ম্যান’ বা ‘ক্ষুদে মানব’ ইউরোপে যারা কখনও আফ্রিকান, কখনও আরব, কখনো ইহুদি বা কখনও মুসলিম অভিবাসী নামে বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে। বেটজ তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে -(১) অন্যান্য রাজনীতিবিদের অভিবাসীদের সম্পর্কে কথা বলার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করছে, যা ফলস্বরূপ মানুষের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করছে এবং (২) এটি কখনো কখনো জেনোফোবিক এবং বর্ণবাদী বিশ্বাস এবং মনোভাবের ক্রমবর্ধমান বৈধতা সৃষ্টি করছে।

মানবতাবাদী শান্তিপূর্ণ জোট হিসেবে সুখ্যাতির জন্য ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শান্তিতে নোবেল জিতেছিল। কিন্তু ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেভাবে আফ্রোফোবিয়া ও ইসলামফোবিয়ার কাঠামোবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিস্তার ঘটছে, তাতে হয়তো অচিরেই ‘দ্য বালাড অব জন হেনরি’ গানের আধুনিক ভার্সন ইউরোপের প্রেক্ষাপটেই রচিত হয়ে যেতে পারে৷

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor