ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বাংলাদেশ এখনো ইউরোপে দ্বিতীয়

ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে। পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে ইউরোপে চীনের পরেই বাংলাদেশ। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইউরোপে ১২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮২৮ কোটি ইউরোতে, যা ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
একই সময়ে ইউরোপের দেশগুলোর বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ২৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালে ৬ হাজার ৮৪৮ কোটি ইউরো থেকে ২০২৪ সালে পৌঁছায় ৮ হাজার ৫৫৫ কোটি ইউরোতে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা ও প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সহজ হবে না, কারণ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রপ্তানির প্রায় সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। তিনি আরও বলেন, ইউরোপের ক্রেতাদের প্রত্যাশা দ্রুত বদলাচ্ছে। বিশেষ করে টেকসই উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে স্বচ্ছতার বিষয়টি এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ইউরোপে ১ হাজার ৪২৯ কোটি ইউরোর পোশাক রপ্তানি করে, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৯১ কোটি ইউরোতে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ইউরোতে। পরে ২০২৪ সালে আবারও বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮২৮ কোটি ইউরোতে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই ইউরোপের বাজারে যাচ্ছে। এটি যেমন ইতিবাচক, তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এলডিসি সুবিধা হারানোর পর ইইউর নানা নিয়মকানুন মেনে চলা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’ ইউরোপ ইতোমধ্যে করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডিরেকটিভ (সিএসডিডিডি), গ্রিন ডিল ও ডিজিটাল প্রোডাক্ট পাসপোর্টের মতো নীতিমালা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব নীতির আওতায় ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলোকে মানবাধিকার, শ্রমিক সুরক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষার ঝুঁকি শনাক্ত ও সমাধান করতে হবে, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তবে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি হাতেম। তিনি বলেন, সরকার, শিল্প সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগীরা ইতোমধ্যে শ্রম খাতের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, শ্রম আইন সংশোধন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহায়তায় শ্রমিক দক্ষতা বৃদ্ধি, কারখানার নিরাপত্তা জোরদার করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএসজিবিসির ২৬৩টি লিড সনদপ্রাপ্ত সবুজ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১১১টি প্লাটিনাম, ১৩৩টি গোল্ড, ১৫টি সিলভার ও চারটি সাধারণ সনদপ্রাপ্ত। চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউরোজোনে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থেকে ২ শতাংশে অবস্থান করায় ফ্যাশনে ব্যয় বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে চীন ও ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে দেশগুলো ইউরোপের বাজারে তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, যা প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করতে পারে। এ প্রসঙ্গে হাতেম বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই টেকসই উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ও নকশাভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।’ মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, ইউরোপের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্থানীয় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প, লজিস্টিক সুবিধা, সরকারি নীতিসহায়তা ও সবুজ বিনিয়োগ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।