Hot

ইতিহাস নাকি প্রত্যাবর্তন, কমলা-ট্রাম্পের হাড্ডিহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

অপেক্ষার পালা শেষ। মহারণ শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। ভোটের উত্তেজনার পারদ এখন চূড়ায়। টানা এক বছর ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির তুমুল প্রচারের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের দুইশ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট। ইতিহাস তৈরির হাতছানি কমলার সামনে। অপরদিকে গত নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি মুছে প্রত্যাবর্তনের প্রত্যয় ট্রাম্পের। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।

হোয়াইট হাউজ দখলের লড়াইয়ে কে জয়ী হবেন, কে হাসবেন শেষ হাসি- কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প? এ প্রশ্নের জবাব পেতে এখন শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা। অনেক ভোটার শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। নীরব ভোটার আছেন অনেক। তাই ফলাফল প্রকাশের আগে কে জয়ী হবেন, তা অনুমান করা যাচ্ছে না।

ক্যালিফোর্নিয়ার এক সংগ্রামী নারী কমলা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে মার্কিন মুল্লুকের অন্যতম সেরা ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছেই নয়; যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত বিশ্ব আর বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় এবারের মার্কিন নির্বাচন বিশ্বের কাছেও তাৎপর্যপূর্ণ। 

এবারের নির্বাচনে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা। যুক্তরাষ্ট্রে এবার ভোটার সংখ্যা ২৪ কোটি ৪০ লাখ। আগাম ভোট দিয়েছেন ৭ কোটি ৭০ লাখ ভোটার। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পদ্ধতি বেশ জটিল। পপুলার ভোটে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ৫০টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি মিলে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে।

নির্বাচনে জয়ী হতে হলে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট প্রয়োজন। একেক রাজ্যে একেক সংখ্যায় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। যে রাজ্যে যে দল জয়ী হয়, সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট সেই দল পেয়ে যায়। অর্থাৎ উইনার্স গেট অল। এভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়ে যায় এবং রিপাবলিকান পার্টির আধিপত্যে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পায় রিপাবলিকান দল। কিন্তু কিছু কিছু রাজ্য আছে ‘সুইং স্টেট’।

এর মানে হলো, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোয় কখনো ডেমোক্র্যাট আবার কখনো রিপাবলিকানরা জয়ী হন। এগুলোকে বলা হয় মূল যুদ্ধক্ষেত্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মানে হলো সুইং স্টেটগুলো দখলের নির্বাচন। কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ে এমন সাতটি রাজ্যে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন প্রায় পুরোটা সময়। ছোট রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট সিস্টেম বলে মনে করা হয়। 

এবারের নির্বাচনে সাতটি সুইং স্টেটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এসব সুইং স্টেটের মধ্যে উইসকনসিনে ১০টি, পেনসেলভিনিয়ায় ১৯টি, আরিজোনায় ১১টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, মিশিগানে ১৫টি, নেভাদায় ৬টি এবং নর্থ ক্যারেলিনায় ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির জন্য ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তিনটি। 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। তবে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হলো বর্ণবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সাদা-কালোয় কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু বাস্তবে বছরের পর বছর এ বর্ণবাদী প্রথা ভোটের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটারের প্রায় ৭৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ। শ্বেতাঙ্গরা রিপাবলিকান তথা ট্রাম্পের সমর্থক। কারণ, তাদের বেশির ভাগ ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’তে বিশ্বাসী।

বলা হয়ে থাকে, শ্বেতাঙ্গরা সবাই ভোট দিতে গেলে রিপাবলিকান প্রার্থী কখনো হারবেন না। বাস্তবে সব শ্বেতাঙ্গ ভোট দিতে যান না। এদিক বিবেচনায় নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি। তবে কমলা হ্যারিসের মূল ভোট ব্যাংক নারী ভোটার। নারীরা মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। কমলা হ্যারিস নারীদের গর্ভপাত বৈধ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এতে নারীরা উচ্ছ্বসিত। নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি হলে নাটকীয়ভাবে কমলা হ্যারিস জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাম্প মনে করেন, নারীদের গর্ভপাতের কোনো অধিকার নেই। খ্রিষ্টান ধর্মে গর্ভপাতের সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসীরা তাই সাধারণত ট্রাম্পকে ভোট দেন না। তারা শুধু গর্ভপাতকে অধিকার হিসাবেই দেখছেন না। বরং গর্ভপাত নারী স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে তারা মনে করছেন। কমলা হ্যারিসের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের কল্যাণের দিক বেশি ছিল। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে তিনি অনেক কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের সংখ্যা ১৩ শতাংশ। তারা সাধারণত ডেমোক্রেটিক দলের ভোটার। আফ্রিকান আমেরিকান ভোটাররা বারাক ওবামার ভক্ত। এবার বারাক ওবামা ভোটের প্রচারে সারাক্ষণ কমলা হ্যারিসের পক্ষে সরব ছিলেন। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ ভোট কমলা বেশি পাবেন। অবশিষ্ট ১০ শতাংশের বেশি ভোটার হলেন হিস্পানিক, এশীয় এবং অবশিষ্ট বিশ্বের অভিবাসী। মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের হিস্পানিক ভোটাররা সাধারণত ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে ভোট দিয়ে থাকেন।

তবে অর্থনীতির দুরবস্থার কারণে হতাশাগ্রস্ত যুবকরা ট্রাম্পকে পছন্দ করছেন। কারণ তারা মনে করছেন, ট্রাম্প নিজে একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতি চাঙা করার জন্য কাজ করবেন। ফলে একটা শ্রেণি কর্মসংস্থানের আশায় ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারে।

এবারের নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ভোটারের সংখ্যা ২৬ লাখ। তাদের বেশির ভাগ কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, কমলা হ্যারিস ভারতীয় মায়ের সন্তান। কমলার মা ক্যালিফোর্নিয়ায় তাকে বড় করেছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ভোট পেতে অস্কার বিজয়ী এআর রাহমানকে দিয়ে প্রচারের গান বানিয়েছেন কমলা। তবে শেষদিকে ট্রাম্প ভারতীয় ভোটারদের ভোটে ভাগ বসাতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেন।হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে উগ্রপন্থিদের ভোট ট্রাম্প পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে ছিলেন। ওই আন্দোলন বল প্রয়োগ করে দমন করা হয়েছে। ছাত্ররা ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থক হলেও অনেকে ভোট দিতে যাবেন না। ভোট দিতে না গেলে ট্রাম্প এর সুবিধা পাবেন। গ্রামাঞ্চলে ট্রাম্প বেশি ভোট পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে শহরাঞ্চলে বেশি ভোট কমলা পাবেন বলে ধরা হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় ভোটের ফলাফল আগেভাগে আঁচ করা যাচ্ছে না। 

ডেমোক্রেটরা সাধারণত মানবাধিকার, নীতি-নৈতিকতা, কল্যাণমূলক কাজ বেশি করে থাকেন। এজন্য সুশীল সমাজ ও এলিট শ্রেণির সমর্থন কমলার পক্ষে। তবে ডেমোক্রেটিক আমলে বিশ্বে যুদ্ধবিগ্রহ বেশি হয়। বিশেষ করে গাজায় হামলার ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসন মুখে মুখে বিরোধিতা করলেও বিপুল বরাদ্দ দিয়েছেন। অপরদিকে ট্রাম্প নিজে ব্যবসায়ী হওয়ায় তার অগ্রাধিকার ব্যবসা-বাণিজ্য। এ কারণে বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও করপোরেট হাউজ ট্রাম্পকে সমর্থন করছে। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারে একাই ৭৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন। উভয় পক্ষ বিভিন্ন পর্যায়ের তারকাকে ভোটের প্রচারে নামিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের কোনো প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে কি না জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক দূরের দেশ। বাংলাদেশের ওপর সরাসরি তেমন প্রভাব পড়বে না। কমলা হ্যারিস বিজয়ী হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার হতে পারে। তবে ট্রাম্প জয়ী হলেও সরাসরি কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। আগেও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে ভারতের মাধ্যমে কিছুটা পরোক্ষ চাপ আসতে পারে বলে অভিমত এই সাবেক রাষ্ট্রদূতের। 

এদিকে সুইং স্টেটগুলোয় বাংলাদেশি ভোটাররা রাজনীতির ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যদিও বাংলাদেশি ভোটার খুব বেশি না। বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা কমলা হ্যারিসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এটি যেসব ভোটারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে তরুণ প্রজšে§র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটাররা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি-জামায়াতের বিবেচনায় ভোট দেবেন না। তারা ওই দেশের রাজনীতি কিংবা অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ইস্যুতে ভোট দেবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d