Hot

ইন্টারপোলের রেড নোটিশে আসামি ফেরত আনা কি সম্ভব?

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দেশ থেকে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিন ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। ইতিমধ্যে গত ১০ই এপ্রিল দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। এ ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে অন্তত আরও ৬২ জনের নাম ইন্টারপোলের ওয়ানটেডের তালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। যাদের অনেকেরই অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরও এখনো দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। উপরন্তু ইন্টারপোলের রেড নোটিশে নাম থাকা অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশের মাটিতেই বহাল তবিয়তে থাকলেও তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশিষ্টজনের মতে- আমাদের অতীত ইতিহাসে ইন্টারপোলের সহায়তায় বিদেশ থেকে অপরাধী আটক করে দেশে নিয়ে আসার নজির খুবই কম। কারণ এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। তাই এক্ষেত্রেও রেড নোটিশ জারির পর শেখ হাসিনাসহ বাকিদের দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা কতোটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্ধিহান রয়েছে।

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী, জাতীয় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক প্রধান নূর খান লিটন মানবজমিন’কে বলেন, আসলে কারোর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি মানেই তাকে আটক করে ইন্টারপোল দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিবে-বিষয়টি এমন নয়। মূলত রেড নোটিশ জারি অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে জানান দেয়া সেই ব্যক্তি অপরাধী। যাতে করে তাকে শনাক্ত ও আটকে আমরা সহায়তা পেতে পারি। কিন্তু এই বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমাদের ডিপ্লোমেসির উপরে। যেই দেশে আসামি অবস্থান করছে সেই দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো হলেই একমাত্র আমরা আসামি ফেরত পেতে পারি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে না। তারা তাদের দেশে আশ্রয় নেয়া আসামিদেরকে কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে ফেরত দিতে চায় না। আমাদের দেশে এমন অপরাধীকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আটক করে দেশে ফেরত আনার নজির খুবই কম। তারপরও গুরুতর অপরাধীদের ধরতে আমাদের এই রেড নোটিশ জারি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ আমাদের আইন ব্যবস্থা দেশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। তিনি বলেন, অন্যান্য আসামিদের বিষয়ে যাই হোক না কেন বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিষয়ে ইন্টারপোল গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই আমরা আশাবাদী শেখ হাসিনাসহ যাদের বিষয়ে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে তাদের আটক করতে ইন্টারপোল আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।    

এদিকে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তাদের রেড নোটিশের তালিকায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার ৫শ’ ৮০ জনের নাম রয়েছে। সেই ওয়ানটেড তালিকায় ৬২ জন বাংলাদেশিও রয়েছে। যাদের বেশির ভাগ দেশের চিহ্নিত অপরাধী। এদের মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, কালা জাহাঙ্গীর, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ওরফে সমর নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিম, খন্দকার আবদুর রশিদ, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, রাসূল আমিনূর ওরফে টোকাই সাগর, লিটন ব্যাপারী, ঢালি রাজু, মো. মিলন, ইকবাল জাফর, তানজিরুল, স্বপন, মোল্যা নজরুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, মিন্টু মিয়া, মিজান মিয়া, অশোক কুমার, সৈয়দ মো. হাছান আলী, আজিজুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, আমানউল্লাহ শফিক, খান সাজ্জাদ হোসেন, মজনু আহমেদ, গোলাম ফারুক অভি অন্যতম। এদের অনেকেই দেশে আছে। কেউ আবার আছে দেশের বাইরে। কোন দেশে, কোন স্টেটে তাও নিশ্চিত নয়। এরপরও আজ পর্যন্ত তাদের কাউকেই দেশে আনা সম্ভব হয়নি। এমনই একজন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। বাংলাদেশি রেড নোটিশ জারিকৃত এই আসামি দুবাইয়ে রয়েছেন এটা সকলেরই জানা। তার স্বর্ণের দোকানের ওপেনিংয়ে এদেশের অনেক নামিদামি শিল্পী ও খেলোয়াড়দেরকে দুবাই সফর করিয়েছেন। নেট দুনিয়ায় বেশ সমালোচনাও চলে তাকে নিয়ে। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় গত ১৭ই এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এই পলাতক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াসহ ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ওই মামলায় বাকি পরের ৬ আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলেও এখনো পলাতক রয়েছেন আরাভ খান ও তার স্ত্রী। এর আগে ২০২৩ সালের ৯ই মে এক অস্ত্র মামলায় আরাভ খানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকা মহানগরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তার নাম ইন্টারপোলের ওয়ানটেডের খাতায় থাকলেও তাকে দেশের মাটিতে নিয়ে এসে সাজার মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে গত ৫ই আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তাদের মধ্যে সুব্রত বাইন অন্যতম। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়ানটেডের তালিকার পাশাপাশি এই সুব্রত বাইনের নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকাতেও জ্বলজ্বল করছে। দেশের মাটিতে থেকে একের পর এক চাঁদাবাজি, খুনসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও এখনো অধরা ‘দাদা’ খ্যাত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। অপরদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাকর্মকর্তা শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিমের বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। সমপ্রতি প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ টকশোতে কথাও বলেছেন তিনি। এরপরও গত ৫০ বছরে তাকে দেশে আনা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি হিসেবে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। ২০২৩ সালে কানাডিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যায়, ২৭ বছর ধরে নূর চৌধুরী কানাডাতেই অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন হাইকমিশনার বলেছিলেন, কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাইকমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। তবে এখন পর্যন্ত এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও বাংলাদেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। এমন অহরহ উদাহরণ রয়েছে- যাদের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলেও এখন পর্যন্ত দেশে আনা সম্ভব হয়নি। অনেক দেশেই আবার নির্দিষ্ট টাকা বিনিয়োগ করে সিটিজেনশিপ পাওয়া যায়। অনেক উন্নত দেশ আমাদের দেশের মৃত্যুদণ্ডের সাজার সঙ্গে সহমত না হওয়ায় ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্ট’র আওতায় অনেককে এসাইলামও দিয়ে থাকেন। তাই শেখ হাসিনাসহ বাকিদের দেশে ফেরানো নিয়ে সন্ধিহান তৈরি হয়েছে। 

তবে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, মানব পাচার, বঙ্গবন্ধুর খুনি, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দণ্ডিত, মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ, হত্যা, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য গত ২০ বছরে অন্তত ৮০  থেকে ৮৫ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করেছে বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ইতালি, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকের পর দেশে আনা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে খুন, অপহরণ এবং চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের পলাতক তালিকায় থাকা জাফর ইকবালকে ইতালি থেকে আটক করা হয়। এর আগে আর একই রকম অভিযোগে আন্তর্জাতিক পুলিশ বাহিনীর ওয়ানটেড তালিকায় থাকা শাহাদাত হোসেন নামে আরেকজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে ইন্টারপোলের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ইন্টারপোল সহায়তা করেছিল। এ ছাড়াও আমেরিকা থেকে মো. আবুল কালাম, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরিফুল ইসলাম শিমুল, ইরান থেকে নান্নু মিয়া, মালয়েশিয়া থেকে আব্দুর রহমান ও পেয়ার আহমেদ আকাশ, সিঙ্গাপুর থেকে মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, সৌদি আরব থেকে আবু তাহের আল নূর ও কামরুল ইসলাম, নিউজিল্যান্ড থেকে আব্দুর রহমান মিয়া, ভারত থেকে চান্দু মোহাম্মদ সদরুদ্দিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সাঈদ, তারেক আহমেদসহ বেশ কয়েকজন অপরাধীকে বিভিন্ন দেশ থেকে আটক করে দেশে আনতে সহায়তা করেছে ইন্টারপোল। 

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর ইনামুল হক সাগর বলেন, সাধারণত আদালতের নির্দেশনায় প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিন ধাপে আবেদন করে এনসিবি। তন্মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়। আর্থিক দুর্নীতি বা অপরাধের অভিযোগের কারণে দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ই এপ্রিল তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। ওয়েবসাইটে নাম ও ছবি প্রকাশ করা হলেও সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি  বাংলাদেশ পুলিশকে ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে।

এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে তিন দফায় ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চিঠিপত্র আদান-প্রদান ছাড়াও একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারির বিষয়টি পর্যালোচনা করছে ইন্টারপোল। আগেই ইন্টারপোলে ওয়ানটেড তালিকায় অনেক বাংলাদেশির নাম রয়েছে, যাদেরকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সত্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে আসামি গ্রেপ্তার করে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার নজির খুবই কম। তারপরও আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি। তাই আমরা আশাবাদী এসব আসামিকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করবে ইন্টারপোল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto