USA

‘ইন্তিফাদা’ স্লোগানে মুখর শিক্ষার্থীরা: ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ চলছেই

গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকশ’ বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্ষোভ দমনে চলছে ব্যাপক ধড়পাকড়। এরপরও ইন্তিফাদা স্লোগানে মুখর শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ভার্সিটি ক্যাম্পাসে কয়েক শ’ পুলিশ প্রবেশ করে ছাত্রদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে এতে কাজ হয়নি। জার্মানির হামবোল্ট ভার্সিটি ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটে।

তারপরও ছাত্ররা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাননি। এছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে ক্যাম্পাসগুলোতে ¯œœাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের সময় হয়ে এসেছে। এসব আয়োজনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বাধা দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। খবর আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। 
বিক্ষোভ চলছে এমন চারটি ক্যাম্পাসে চলতি সপ্তাহান্তে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এ ছাড়া নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসে চলতি মাসে ও জুনে এই আয়োজন হওয়ার কথা রয়েছে। স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টায় রয়েছে ক্যাম্পাসগুলো।

অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও এসব আয়োজন বর্জন করা, অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসা বা ওয়াকআউট করাসহ বিভিন্ন বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তাল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

 গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ক্যাম্পাসে তাবু খাটিয়ে চলছে টানা বিক্ষোভ। অনেক ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে বাংলাদেশীসহ প্র্রায় আড়াই হাজার বিক্ষোভকারীকে। গতমাসে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভের সূচনা।

পরে ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় ১৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। এখন বিক্ষোভকারীরা স্নাতক সমাপনী আয়োজনে বাধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি (আইইউ) ক্যাম্পাস থেকে দুই দফায় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এখন আইইউ ডাইভেস্ট অ্যান্ড দ্য প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে ওয়াকআউটের ডাক দিয়েছে।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটে। তিনটি ক্যাম্পাসে রবি ও সোমবার স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে কোনো ব্যানার ও পতাকা বহন করা নিষিদ্ধ থাকবে। সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানস্থলে স্বেচ্ছাসেবকেরা থাকবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন।

বাধা দেওয়া হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিক্ষোভকারীদের সংগঠন তাহরির কোয়ালিশন প্রোটেস্ট গ্রুপের আলিফা চৌধুরী। তিনি শুধু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনার প্রস্তাব পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। এরপর প্রায় ২০০ মাইল দক্ষিণে, ওয়াইও স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট টেড কার্টার শিক্ষার্থীদের বাক্স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে সতর্ক করে বলেছেন, যে কোনো আয়োজন, ক্লাস, পরীক্ষায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে নিয়ম মেনে তা প্রতিহত করা হবে। আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। এই আয়োজনে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি এখানকার ফিলিস্তিনি-আমেরিকান শিক্ষার্থী হেবা লতিফ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ মে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ক্যাম্পাস চরম উত্তাল ছিল। বিক্ষোভকারীরা একটি ভবন দখলে নেন। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ওই ভবন উদ্ধার করে। ব্যাপক ধরপাকড় চালায়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল বলেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সিডনি, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরাসহ বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছেন ফিলিস্তিনপন্থিরা। শনিবারও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে

 গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল হয়।

প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে শ শ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম এবং অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সিডনির সংহতি সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন ৩ শতাধিক মানুষ। এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক সাবেক শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পেশাজীবীরাও ছিলেন। বিক্ষোভ মিছিলে ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা,

 গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করা হয়।

সিডনি ভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী ম্যাট (৩৯) নিজের দুই বছর বয়সী শিশুপুত্রকে কাঁধে চাপিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে আসেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের নামের শেষাংশ প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, এই সমাবেশকে শুধু তরুণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ মনে করলে ভুল হবে। আপনার চারপাশে কী ঘটছে তা যদি একবার আপনি উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে যা ঘটছে সে সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সংহিত জানানোর দায়িত্বও আপনার ওপর বর্তায়।

আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে এখানে এসেছি। সিডনি ভার্সিটির ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা যেদিন যেদিন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন, সেই একইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করেছেন ইসরাইলপন্থি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের সমাবেশস্থল অবশ্য ফিলিস্তিনপন্থিদের সমাবেশের জায়গা থেকে বেশ কয়েকশ’ মিটার দূরে। সমাবেশে অস্ট্রেলিয়া ও ইসরাইলের পতাকা নিয়ে হাজির হয় তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক সারাহও ছিলেন তাদের মধ্যে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের নামের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশে অনিচ্ছুক এই গবেষক বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছি। ফিলিস্তিনপন্থিদের জন্য ক্যাম্পাসে এখন শান্তিতে হাঁটা চলার জায়গা নেই। যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই ‘ইন্তিফাদা’ ‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত’ ইত্যাদি স্লেøøাগান কানে আসছে। এটা ভয়ঙ্কর। সিডনি ভার্সিটির ভিসি  মার্ক স্কট বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করছি যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। এসব বিক্ষোভের সময় অনেক ক্ষেত্রে সহিংস পন্থার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে গুলির ঘটনাও। বিক্ষোভ চলাকালে এক অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করার সময় তার পাঁজরের ৯টি হাড় ও একটি হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী শিক্ষক এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষক স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক।

আবার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞও তিনি। কানাডার শিক্ষার্থীরা টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং অটোয়া ইউনিভার্সিটিসহ দেশটির একাধিক ভার্সিটিতে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। 
মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পটি ভেঙে ফেলা উচিত বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশি হস্তক্ষেপের অনুরোধ করলেও বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আইন প্রয়োগকারীরা। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হচ্ছে ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো ভার্সিটিতে।

এছাড়া জার্মানির হামবুর্গসহ অন্যান্য শহরের ভার্সিটিগুলোতে বিক্ষোভ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের এমন ব্যাপক বিক্ষোভ এ শতকে আর দেখা যায়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযানের দৃশ্য সরাসরি প্রচার করে। আলজাজিরাও এসব দৃশ্য সরাসরি প্রচার করে। ইসরাইল এই ছাত্র বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে ইসরাইলের সমালোচকেরা বলছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতেই দেশটির এমন অভিযোগ।
কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন নামের ছাত্রদের একটি গ্রুপ কলাম্বিয়া ভার্সিটির হ্যামিল্টন হলের দখল নেয়। হলটি ১৯৬৮ সালের ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসরাইলবিরোধী এই আন্দোলন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d