International

ইরানি হামলায় বড় যেসব ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হলো ইসরাইল

ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরি শের জানিয়েছেন, তারা উভয় পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির একটি বিস্তৃত মূল্যায়নের কাজ করছেন এবং প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন।

ইরান যুদ্ধে ইসরাইলের পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে তেহরান। বিষয়টি ইসরাইলি সেন্সরশিপ নীতির কারণে উত্তাল সময়ে প্রকাশ পায়নি। তবে সম্প্রতি ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের উপগ্রহ রাডার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা সামনে এসেছে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচটি ভিন্ন ঘাঁটিতে আঘাত হানে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এই হামলার বিষয়টি ঘোষণা করেনি। দেশের কঠোর সেন্সরশিপ নীতির কারণে সেখানকার সংবাদমাধ্যমও তা প্রকাশ করতে পারছে না। তবে মার্কিন শিক্ষাবিদরা উপগ্রহ রাডার বিশ্লেষণ করে দ্য টেলিগ্রাফকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আঘাতপ্রাপ্ত ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি প্রধান বিমানঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক ঘাঁটি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে আবাসিক এবং শিল্প অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের অন্তত সাতটি তেল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া, দেশটির অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটের একটি অংশ ধ্বংস হয়েছে এবং সোরোকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারেরও গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি সাতটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

তবে এই বিস্তৃত ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা মাত্র ২৮, যা তাদের উন্নত সতর্কতা ব্যবস্থা এবং আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার ফলে সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে, প্রথম আট দিনের মধ্যেই ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশসীমা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশের হার ক্রমেই বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের সীমিত মজুদ, ইরানের উন্নত গুলি চালনার কৌশল এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে দায়ী করেছেন।

ইসরাইলের বহুস্তর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যার মধ্যে রয়েছে থাড (THAAD) ও সমুদ্রভিত্তিক ইন্টারসেপ্টরও রয়েছে, এতসব ব্যবস্থার পরেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তারা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একসাথে ব্যবহার করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করেছেন।

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল আলী ফাজলি বলেন, ‘আমরা ইসলামী বিপ্লবের ৪৭ বছরের ইতিহাসে এখন সবচেয়ে সেরা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছি।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইসরাইলের ব্যাপক পাল্টা হামলার পরও ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বড় অংশ অক্ষত রয়েছে। ইসরাইলের এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, ইরানের প্রায় ৪০০টি লঞ্চার ছিল, যার মধ্যে ২০০টিরও বেশি তারা ধ্বংস করেছেন। তবে ইরান এরই মধ্যে ব্যাপক উৎপাদন কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ ৮ হাজার থেকে ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরি শের জানিয়েছেন, তারা উভয় পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির একটি বিস্তৃত মূল্যায়নের কাজ করছেন এবং প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto