ইরানে মার্কিন হামলা: সংবিধানের চরম লঙ্ঘন বললেন বার্নি স্যান্ডার্স, আর কে কী বলেছেন

ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনাকে সংবিধানের চরম লঙ্ঘন বলেছেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।
বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘আমি একমত। আমি আপনাদের একটা কথা বলতে চাই, এই মাত্র যে খবরটা শুনলাম, যেটা আপনারাও শুনলেন, সেটা শুধু উদ্বেগজনকই নয়; বরং চরমভাবে সংবিধানবিরোধী।’
স্যান্ডার্স আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, এ দেশকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কেবল মার্কিন কংগ্রেসের আছে। প্রেসিডেন্টের সেই অধিকার নেই।’
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় মার্কিন বোমারু বিমান।
বার্নি স্যান্ডার্সসহ কয়েক নেতা ট্রাম্পের ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানালেও এখন পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক ককাসের নেতা হাকিম জেফরিজ এবং সিনেটের নেতা সিনেটর চাক শুমার—দুজনই এখনো কোনো বিবৃতি দেননি।
দুজনই ইসরায়েলের সরব সমর্থক এবং ইরানের বিষয়ে কঠোর ও আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছেন।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জেফরিজ বলেছিলেন, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে সেদিন তিনি এটাও বলেছেন, কেবল মার্কিন কংগ্রেসেরই যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার আছে।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিরোধিতা করছে, আর মাত্র ১৫ শতাংশ এতে সমর্থন দিয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা মুখ বন্ধ রাখলেও নিজেদের প্রেসিডেন্টের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছেন রিপাবলিকান পার্টির নেতারা। মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠের নেতা জন থুন বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার সিদ্ধান্তে তিনি ট্রাম্পের পাশে আছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে থুন লেখেন, ইরানের শাসকেরা, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু কামনা ও ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার প্রতিজ্ঞা করেছেন, তাঁরা শান্তি প্রতিষ্ঠার সব ধরনের কূটনৈতিক পথ বাতিল করেছেন।
হাউস স্পিকার ও রিপাবলিকান নেতা মাইক জনসন বলেছেন, ট্রাম্পের ইরানের ওপর অপ্রত্যাশিত হামলা তাঁর ‘আমেরিকা প্রথম’ বৈদেশিক নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ইরানে সামরিক অভিযান আমাদের শত্রু ও মিত্র উভয়ের কাছেই স্পষ্ট বার্তা হওয়া উচিত যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেন তা করেন।’
দক্ষিণ ক্যারোলাইনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি (ট্রাম্প) সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইরানের শাসনব্যবস্থার এটাই প্রাপ্য।
রিপাবলিকান সিনেটর রজার উইকার প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করে বলেন, ইরানের কারণে অস্তিত্বের ওপর যে হুমকির সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্মূলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি সচেতন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন।
কেনটাকির রিপাবলিকান সিনেটর থমাস ম্যাসি বলেছেন, ‘এটি সংবিধানসম্মত নয়।’
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধিদের একজন সারা জ্যাকবস বলেন, ‘এ হামলা একধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অন্তহীন ও প্রাণঘাতী যুদ্ধে প্রবেশ করাতে পারে।’
ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য রাশিদা তালিব বলেন, ‘আইনপ্রণেতাদের অনুমোদন ছাড়াই ট্রাম্পের ইরানের ওপর হামলার নির্দেশ দেওয়া মার্কিন সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।’