International

ইরান যুদ্ধের পর গাজায় কৌশলগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ইসরাইল

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পরস্পরবিরোধী সরকারি বিবৃতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিতরণে বিলম্ব জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে এবং সরকারের ওপর আস্থা কমে যাচ্ছে।

গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসন এবং সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের পটভূমিতে ইসরাইলের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ইসরাইলি ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে তেল আবিবের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতা এবং মানবিক ও রাজনৈতিক খাতে ক্ষয়ক্ষতি ইসরাইলকে কৌশলগতভাবে দুর্বল অবস্থানে ফেলেছে।

ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ তাদের এক নিবন্ধে গাজায় যুদ্ধকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, হামাসের স্থিতিস্থাপকতা এবং যুদ্ধকালীন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের ভিডিও ফাঁস হওয়ায় সৈন্যদের মনোবলে চিড় ধরেছে। স্পষ্ট সাফল্যের অভাব থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় অভিযান অব্যাহত রাখার উপর জোর দিচ্ছেন, যদিও তেল আবিব সামরিক ও প্রচারণা স্তরে পরাজয়ের মুখে পড়েছে।

অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে ইসরাইলে চালানো হামলার অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মারিভ পত্রিকা জানিয়েছে, বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো ইসরাইলি নাগরিক বিশ্বাস করেন যে সরকার তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নেতানিয়াহুর ‘জুয়া’ হিসেবে বর্ণিত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে উত্তেজনা বৃদ্ধির কৌশলকে দায়মুক্তি দেয়া উচিত নয় বলেও পত্রিকাটি মন্তব্য করেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পরস্পরবিরোধী সরকারি বিবৃতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিতরণে বিলম্ব জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে এবং সরকারের ওপর আস্থা কমে যাচ্ছে।

গাজার মানবিক সঙ্কট নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে সাহায্য বিতরণকেন্দ্রের কাছে শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ঘোষিত তদন্তকে ‘নিরর্থক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে চিকিৎসা নথি উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, নিহত ও আহতদের একটি বড় অংশ ইসরাইলি কামানের গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে পত্রিকাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে ইসরাইলি তদন্তগুলো খুব কমই বাস্তব জবাবদিহিতার দিকে নিয়ে যায়।

ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডে গাজায় সহায়তা বিতরণে যুক্ত সংস্থাকে সমর্থন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের কথা তুলে ধরেছে। উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে এই অর্থ সাহায্যকে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা সঙ্কটের মূল সমাধানের দিকে না গিয়ে বরং রাজনৈতিক বার্তা প্রেরণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি নিরপেক্ষতা ও নিরাপত্তা রক্ষা নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে।

অবশেষে, ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেলের সহ-লেখিত একটি মতামত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি সঙ্ঘাত নিরসনে ইউরোপকে আরো ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, একতরফা চাপ ইসরাইলি লঙ্ঘন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক ও রাজনৈতিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও তা যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। মার্কিন নীতির বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের রক্ষায় ইউরোপকে স্বাধীন ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto