USA

ইসরাইলকে সমর্থন নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটাতে পারে বাইডেনের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলার প্রতি তার অটল সমর্থনের কারণে তরুণ মার্কিন ভোটার এবং অশে^তাঙ্গদের কাছ থেকে সমর্থন হারাতে শুরু করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়াামিন নেতানিয়াহুর জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আহ্বান জানানোর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে কঠোরভাবে নিন্দা করে বাইডেন কেবল তার নিজের আসনটিই নয়, সেই সাথে মার্কিন গণতন্ত্রের ভবিষ্যতকে ঝুঁকিতে ফেলার দিকে আরেক পা অগ্রসর হয়েছেন।

ফাইভ থার্টিএইট-এর জপির অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে পিছিয়ে রয়েছেন বাইডেন। এভাবে তিনি তার মূল ভোটারদেরও হারাতে পারেন, যারা বলছেন যে, তারা বাড়িতেই থাকবেন, অথবা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে তৃতীয়-পক্ষকে ভোট দেবেন। মার্চে মিশিগানে বাইডেন প্রায় কানের গোড়া দিয়ে জয়লাভ করেছেন। ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের জন্য, যা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ে গণহত্যা হতে পারে, মিশিগানের আরব-আমেরিকানরা তাদের ভোটের মাধ্যমে বাইডেনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বর্তমান শাসকের প্রতি ভিন্নমতের নাটকীয় প্রদর্শন মিশিগানের মতো প্রতিফলিত হয়েছে উইস্কন্সিন এবং পেন্সিলভানিয়ার মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যগুলি সহ উত্তর ক্যারোলিনা, মিনেসোটা, হাওয়াই, ম্যাসাচুসেটস এবং আরও অনেক স্থানে।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ২শ’রও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ত্যাগের দাবিতে তাদের ক্যাম্পাসগুলিতে দীর্ঘ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এটি দেশটিতে গত ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় ঘটনা, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ছাত্রদের প্রতিক্রিয়ার সাথে সাদৃশপূর্ণ, এবং সহিংস পুলিশি দমন-পীড়র করেও উপেক্ষা করা অসম্ভব বাইডেন প্রশাসনের।

গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের ঘটনা মার্কিন তরুণরা তাদের মুঠোফোনে সরাসরি প্রত্যক্ষ করছে, এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসনের ক্রমাগত অস্বীকৃতির প্রতি তারা ঘৃণার সাথে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। এভাবে ভোটারদের সাথে বাইডেনের বিচ্ছিন্নতার প্রমাণগুলি বাড়ছে, যাদেরকে নভেম্বরে তার প্রয়োজন হবে।

মে’তে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি উদ্বেগজনক জরিপে দেখা গেছে যে, জো বাইডেন ২০২০ সালে যে ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যগুলিতে জিতেছিলেন সেগুলিতে তিনি বর্তমানে উল্লেখযোগ্য হারে পিছিয়ে রয়েছেন। ভোটাররা গাজা সম্পর্কে তার অবস্থানের বিরোধিতা করেছে। ৮ মে থেকে একটি জেটিও/ডেটা ফর প্রোগ্রেস জরিপে দেখা গেছে যে, ৫৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাট পন্থী এবং বহু স্বতন্ত্র ভোটাররা বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে।
২৯ এপ্রিলের একটি সিএনএন জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের কম বয়সী ৮১ শতাংশ ভোটার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণ পরিচালনার বিষয়ে বাইডেনের সিদ্বান্তের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এবং ২৭ মে’র একটি কুইনিপিয়াক জরিপে দেখা গেছে যে, বাইডেনর ২০২০ সালের ভোটারদের মধ্যে যারা ২০২৪ সালে তাকে আবারও ভোট দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নন, তাদের ৬০ শতাংশ বিশ্বাস করে যে, তিনি খুব বেশি ইসরায়েরের পক্ষ নিয়েছেন, যেখানে মাত্র ৪ শতাংশ বলেছেন যে তিনি যথেষ্ট সমর্থন করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের মূল নির্বাচনী এলাকাগুলিকে বাইডেনের সমর্থন কমে যাওয়া নজিরবিহীন। গত ২৬ বছরে প্রথমবারের মতো, বেশিরভাগ আরব আমেরিকানরা এখন আর তার ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে পছন্দ করার দাবি করছে না, এবং ২০২০ সালের ৫৯ শতাংশের তুলনায় মাত্র ১৭ শতাংশ বলেছেন যে, তারা বাইডেনের পক্ষে ভোট দেবেন।
যেসব মার্কিন ভোটাররা যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্র্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, তারা দেখছেন যে, ইসরায়েল গাজায় অনাহারকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যেসব ভোটাররা এখানে নারীর অধিকার নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, তারা ফিলিস্তিনি নারীদের অবস্থা দেখছেন, যারা ব্যাথানাশক ছাড়াই সন্তান প্রসব করছেন, কারণ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজায় মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সরবরাহ সীমিত করে দিয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

১৯৬৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জন্সনের ভিয়েতনাম বিষয়ক পররাষ্ট্র নীতির বিপর্যয় ডেমোক্র্যাটিক জোটকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট মনোনীত প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনের জন্য প্রেসিডেন্টে পদ নিশ্চিত করেছিল। বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button