International

ইসরাইলি হামলায় এক নারী ও তার ছয় সন্তানসহ নিহত ২০, সম্ভবত এটিই গাজায় যুদ্ধবিরতির শেষ সুযোগ: ব্লিঙ্কেন

গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় রোববার ইসরাইলি হামলায় এক নারী ও তার ছয় সন্তানসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানিয়েছেন, গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে ইসরাইলের হামলায় এক নারী তার ছয় সন্তানসহ নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা আরও জানান, গাজার মধ্যাঞ্চলীয় নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের আরেকটি হামলায় আরও চারজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজা ভূখণ্ডের পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে থাকা ইসরাইলি কামানগুলো থেকে পূর্বাঞ্চলীয় মাঘাজি ও বুরেইজ শিবিরে এবং গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ শহরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি গাজা সিটির সাবরা এলাকার একটি বাড়িতে ইসরাইলি ড্রোন থেকে চালানো হামলায় এক নারী নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। গাজার চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, গাজার খান ইউনিস শহরের পূর্বাংশে ইসরাইলি ড্রোন এক বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালালে এক নারীসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী খান ইউনিস ও রাফার পশ্চিমাংশের সৌদি আবাসিক এলাকায় কয়েক ডজন আবাসিক ভবন গুড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনি দমকল বাহিনীর কয়েকটি দল জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কয়েকটি বাড়িতে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালানোর পর তারা সেখান থেকে চারজনের মৃতদেহ ও বেশ কয়েকজন আহতকে উদ্ধার করেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলে হামলা চালানোর পর এর প্রতিশোধ নিতে হামাস শাসিত গাজায় ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে আসছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক নিন্দা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবিকে অগ্রাহ্য করে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে তেল আবিব। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৪০১০০ জনে দাঁড়িয়েছে আর আহত হয়েছে ৯২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গাজা ভূখণ্ডের বিশাল অংশ ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ গাজায় খাবার, পরিষ্কার পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে।
এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করতে ইসরাইল সফরে গিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর এটি তার নবম মধ্যপ্রাচ্য সফর। গতকাল তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশরে যাবেন তিনি। ব্লিঙ্কেন বলেন, চলমান আলোচনা ‘খুব সম্ভবত যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি বাস্তবায়নের শেষ সুযোগ’। ‘আমরা এখন একটি ক্রান্তিলগ্নে রয়েছিÑজিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনা, যুদ্ধবিরতি চালু ও সবাইকে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তার পথে নিয়ে আসার এটাই সবচেয়ে সেরা এবং সম্ভবত সর্বশেষ সুযোগ এটি,’ যোগ করেন তিনি।
ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সফররত এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, তাদের মনে হচ্ছে, এখন চুক্তির ক্ষেত্রে যে বিরোধ আছে তা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। তাই কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য মধ্যস্থতা করছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। রোববার নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানিয়েছেন, কিছু ক্ষেত্রে ইসরাইল নমনীয় হতে পারে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অবস্থানের বদল হবে না। তিনি বলেছেন, ‘আমরা (হামাসের সঙ্গে) আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ঐক্যমত্যে পৌঁছাইনি।’ ‘যুদ্ধবিরতির আলোচনা খুবই জটিল। হামাস এখনো দোহায় আলোচনার জন্য কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি। তাই ইসরাইল নয়, হামাসের ওপর বরং চাপ সৃষ্টি করা উচিত। আমরা আমাদের নীতি থেকে সরতে চাই না। এটা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য জরুরি,’ যোগ করেন নেতানিয়াহু।
হামাস রোববার জানিয়েছে, নেতানিয়াহু সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছেন। ইতোমধ্যে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। হামাসের দাবি, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছে। কিন্তু নেতানিয়াহু তা বানচাল করে দিচ্ছেন। গাজায় বন্দিদের যদি কিছু হয়, তাহলে তার জন্য নেতানিয়াহু দায়ী থাকবেন। গত কয়েকদিন ধরে ইসরাইলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দোহায় কথা বলছেন মধ্যস্থতাকারী দেশের প্রতিনিধিরা। কিন্তু হামাস জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বারবার নতুন নতুন প্রস্তাব দিচ্ছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button