ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত ইরান, পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না : পেজেশকিয়ান

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) অনুযায়ী তেহরানকে নির্দিষ্ট শর্তে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখতে হয়েছিল।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যেকোনো যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। একইসাথে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তেহরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। এটি বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
আল জাজিরার সাথে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান এই মন্তব্য করেন। গত মাসে ইসরাইলের সাথে ১২ দিনের সঙ্ঘাত শেষে এটিই তার প্রথম কোনো গণমাধ্যমে উপস্থিতি।
পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে যখন খবরে প্রকাশ পেয়েছে যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের দাবির তুলনায় অনেকটাই সীমিত ছিল।
পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা ইসরাইলের যেকোনো নতুন সামরিক পদক্ষেপের মোকাবেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারো ইসরাইলের গভীরে হামলা চালানোর জন্য তৈরি।’ তিনি আরো জানান, ইরান যুদ্ধবিরতির উপর নির্ভর করছে না। বরং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সঙ্ঘর্ষের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইসরাইল আমাদের ক্ষতি করেছে। আমরাও তাদের ক্ষতি করেছি। তারা আমাদের উপর শক্তিশালী আঘাত হেনেছে। আমরাও তাদের গভীরভাগে কঠোরভাবে আঘাত হেনেছি। কিন্তু তারা তাদের ক্ষতি গোপন করছে।’
পেজেশকিয়ান দাবি করেন, ইসরাইলের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডারদের হত্যা করে দেশের শ্রেণিবিন্যাসকে ধ্বংস করা। কিন্তু এতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
গত ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ইরানে ৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের অনেকেই বেসামরিক নাগরিক। অপরদিকে ইসরাইলে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়।
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হবে। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র প্রত্যাখ্যান করি। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও মানবিক অবস্থানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতা আমাদের বিজ্ঞানীদের মনে। এটি স্থাপনাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।’
পেজেশকিয়ানের এই বক্তব্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির আগের মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। আরাঘচি সোমবার ফক্স নিউজকে জানান, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তবে আলোচনার পথ উন্মুক্ত থাকবে। পারমাণবিক কর্মসূচি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে শান্তিপূর্ণ থাকবে, এমন গ্যারান্টির ভিত্তিতে আলোচনার প্রস্তাবও দেন তিনি।
পেজেশকিয়ান আরো বলেন, ইসরাইল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ১৫ জুন তেহরানে একটি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি জানান, এক হামলায় তিনি সামান্য আহত হন। এই হামলার পেছনে ছিল ইসরাইলের উচ্চপর্যায়ের একটি পরিকল্পনা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করা এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিক্রিয়ামূলক হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি কাতার রাষ্ট্র বা জনগণের বিরুদ্ধে ছিল না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি হামলার দিন কাতারের আমিরকে ফোন করে বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
এদিকে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ পদার্থের উপর গত মাসের হামলার প্রভাব মূল্যায়ন করছে ইরান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেন, তেহরান শিগগির আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) এ সংক্রান্ত তথ্য জানাবে। তবে তিনি জানান, আইএইএ-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করেনি তেহরান। সংস্থাটির পরিদর্শকদের ফেরত পাঠানোর যেকোনো অনুরোধ ‘সাবধানে বিবেচনা’ করা হবে।
শুরুতে পেজেশকিয়ানের স্বাক্ষর করা একটি আইনের ভিত্তিতে আইএইএ-এর পরিদর্শকরা ইরান ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
ইউরোপীয় শক্তির সাথে আলোচনা পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যেও পদক্ষেপ নিচ্ছে ইরান। শুক্রবার তুরস্কে ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) অনুযায়ী তেহরানকে নির্দিষ্ট শর্তে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখতে হয়েছিল। ইউরোপীয় তিন পক্ষ বলেছে, তেহরান আলোচনার টেবিলে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আবারো কার্যকর করা হবে।