Trending

ইসরাইল ইরান সঙ্ঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে যেভাবে প্রভাব ফেলছে

পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরের সংযোগস্থল হরমুজ প্রণালী মধ্যপ্রাচ্যে উৎপাদিত অপরিশোধিত তেল ও তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ। এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।

১২ দিনের ইসরাইল-ইরান সশস্ত্র সঙ্ঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের দামের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং একটি নতুন সঙ্কটের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

১৩ জুন ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ইসরাইল ও ইরানের পারস্পরিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি বেড়েছে। তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলার জেরে জ্বালানি বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে ইরানের তেল অবকাঠামোর ওপর হামলার ফলে। পাশাপাশি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার গুজবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে।

পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরের সংযোগস্থল হরমুজ প্রণালী মধ্যপ্রাচ্যে উৎপাদিত অপরিশোধিত তেল ও তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ। এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি হরমুজ প্রণালী সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১১০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পাশাপাশি আঞ্চলিক সঙ্ঘাতও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তেলের ভবিষ্যত দাম অনুমান করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

এই প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব জিডিপি প্রায় ০.৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু জ্বালানির দামই নয়, এর প্রভাব পড়বে সামুদ্রিক পরিবহনেও। এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার ফলে বীমা খরচ ও মালবাহী ভাড়া বেড়ে যাবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যয় আরো বাড়িয়ে তুলবে।

বিশেষ করে মার্কিন অর্থনীতি এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেশটির প্রায় ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ, মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং চীনসহ অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য উত্তেজনার পটভূমিতে এ সঙ্ঘাত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

ওয়াশিংটনের শুল্কনীতি ও সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য ব্যবস্থা, সাথে মধ্যপ্রাচ্যের এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা জ্বালানির দাম আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এতে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কা নতুন করে সামনে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ মার্কিন অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে।

তেলের দামে প্রতি ১০ ডলার বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। যদি ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ১১০-১৩০ ডলারে পৌঁছে যায়, তবে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এতে ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হতে হবে, যা দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

অন্যদিকে, ইসরাইলকেও এই সঙ্ঘাতে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিদিনই প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সঙ্ঘাত দীর্ঘায়িত হলে ইসরাইলের মোট ব্যয় এক মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ইসরাইল এই যুদ্ধে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ডেভিড’স স্লিং এবং অ্যারো-৩ মোতায়েন করেছে। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের খরচ ৭ লাখ থেকে ৪ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও ইরানে ১০০০ মাইল দূরবর্তী লক্ষ্যে আঘাত হানতে ইসরাইলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হচ্ছে, যার প্রতিটি বিমানের প্রতি ঘণ্টার খরচ প্রায় ১০ হাজার ডলার। JDAM ও MK84 এর মতো যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারে ব্যয় আরো বেড়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির আরেকটি দিক হলো পুনর্গঠন ব্যয়। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে ইসরাইলের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি মেরামতে ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় চলমান যুদ্ধের তুলনায় ইরানের সাথে সঙ্ঘাত ইসরাইলের জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সঙ্ঘাত কেবল একটি সামরিক সঙ্কট নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto