ইসরাইল-হেজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলা, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আবারো ভেস্তে গেল
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও হতাশার মুখে পড়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রোববার মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত আলোচনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। হামাস ও ইসরাইলÑকোনো পক্ষই মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত সমঝোতা শর্তে সম্মতি দেয়নি। ফলে গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে নেয়া সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত উদ্যোগ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর মধ্যে রোববার পাল্টাপাল্টি হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি ঘিরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মিসরের দুটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান গাজা যুদ্ধের অবসানে মিসরের কর্মকর্তারা নতুন কোনো অগ্রগতি করতে পারেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কায়রোর আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সব পক্ষ একটি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আন্তরিকভাবে আগ্রহী।’ ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও জানান, এই যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় যারা কাজ করছেন, তারা ভবিষ্যতেও কাজ চালিয়ে যাবেন। যদিও মিসরের কর্মকর্তারা কিছুটা হতাশ, তবুও আলোচনা এখনো চলছে এবং কায়রোতে মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা অবস্থান করছেন। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে শিগগিরই কার্যকর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আশাও প্রকাশ করা হয়েছিলো। কিন্তু ইসরাইল-হেজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলার পর যুদ্ধবিরতির সেই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবে কী-না, সেটি নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই হামলার মাধ্যমে ইসরাইল ও হেজবুল্লাহ সরাসরি যুদ্ধে জড়িতে পড়া দ্বারপ্রান্তে রয়েছে কী না, সেই প্রশ্নও উঠছে। যদিও গত সাত অক্টোবরের পর দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ রোববার ভোরে দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। দেশটি দাবি করেছে যে, তাদের ওপর রকেট হামলা চালানোর জন্য হেজবুল্লাহ প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সে কারণে নিজেদের রক্ষার্থে আগাম সতর্কতা হিসেবে বিমান হামলা চালানো হয়। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর ভাষ্যমতে, বিমান হামলা চালিয়ে তারা হেজবুল্লাহর বেশ কয়েক হাজার স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে প্রায় ৩২০টি রকেট বোমা নিক্ষেপ করে হেজবুল্লাহ। যদিও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থায় ইসরাইলের হামলার সত্যতা নাকচ করা হয়েছে।
উল্টো দাবি করা হয়েছে যে, রোববারের রকেট হামলায় ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটি ও গোলান মালভূমির চারটি স্থাপনায় তারা আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, তাদের নেতা ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে উত্তর ইসরাইলে রকেট ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসরাইলের হামলার নিজেদের তিন যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
অন্যদিকে, হেজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরাইলের নৌবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া আকরে শহরে কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। পাল্টাপাল্টি হামলার পর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত বলেই মনে হচ্ছে। তবে যে কোনো মুহূর্তেই যে অবস্থা পাল্টে যেতে পারে, সেই আশঙ্কাও রয়েছে। লেভান্ত ইনস্টিটিউট ফর র্স্ট্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদের বলছেন, রোববারের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।