USA

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গ্রেফতার ২৪০০

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দেশটির ৪৬টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মার্কিন প্রশাসন এসব বিক্ষোভ থেকে দুই হাজার চার শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে।

নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধের দাবিতে মার্কিন ক্যাম্পাসভিত্তিক এই ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে, আরও যেসব শহরে ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রিটেনের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও ইতালির রোম থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, জাপানের টোকিও এবং লেবাননের বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে।   এসব বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।

মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হটাতে যে দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাদের প্রতিবাদে শামিল হতে উৎসাহিত করছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। দেশে দেশে এমন বিক্ষোভকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকা ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলোর তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা প্রকাশিত হচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েলের এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে গত ১৮ এপ্রিল বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আমেরিকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। এর মধ্যে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ব্রিটেন
গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ভবনের চত্বরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইক শহরের শিক্ষার্থীরাও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করছেন।

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ইলা ওয়ার্ড বলেছেন, “কলাম্বিয়াসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন, তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।” 

তিনি জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী বুধবার তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নেন। ইলা ওয়ার্ড ‘ইয়ু ডিমান্ড’ নামের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপের সদস্য। তারা ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। দেশে দেশে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ফিলিস্তিন আমাদের অনেককে জাগিয়ে তুলেছে।’

ফ্রান্স
ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বর্জনের আহ্বান–সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এটা ছাড়াও প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিলের শেষ দিকে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।

২৯ এপ্রিল সরবন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় দুই বিক্ষোভকারীকে তাঁবু থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করতে দেখা যায়। এরপর শুক্রবার সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় দাঙ্গা পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ‘শেম’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। লুইস নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, ইয়েলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এ বিক্ষোভ করছেন।

ফ্রান্সের আরও অনেক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নেওয়া ২৩টি স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী রাতেও অবস্থান করছেন। 

কানাডা
মার্কিন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। মন্ট্রিলের উপকণ্ঠে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলবিরোধী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকেও বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ভারত
ভারতের খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ) কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে তার ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

এছাড়া জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির রোমের স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়, মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি এবং লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত ও লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d