ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বৃহৎ খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কো-অপ

যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় সুপারমার্কেট চেইন কো-অপ ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের পথে এক বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে কো-অপ সদস্যরা এবার ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার বার্তা দিয়েছেন।
শনিবার (১৭ মে) কো-অপের বার্ষিক সাধারণ সভায় উত্থাপিত এক প্রস্তাবে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের পক্ষে সদস্যদের ৭৩ শতাংশ ভোট দেন। যদিও এই প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এটি ভবিষ্যতে কো-অপের নীতিগত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কো-অপ সদস্যরা সভায় বক্তব্যে জানান, গাজায় যা ঘটছে তাকে চুপচাপ মেনে নেওয়া যায় না। তারা বোর্ডকে আহ্বান জানিয়েছেন, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে।
কো-অপ কর্তৃপক্ষের অবস্থান
প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার পর কো-অপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাদের পণ্য সরবরাহ নীতি পর্যালোচনা করছে। এই পর্যালোচনা গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ইসরায়েলি পণ্যগুলো দোকান থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একজন কো-অপ মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা নিয়মিত আমাদের সোর্সিং নীতি পর্যালোচনা করি। এটি নিশ্চিত করার জন্য যে এই নীতিগুলো আমাদের মূল্যবোধ, নীতিমালা এবং আমাদের সদস্যদের মতামতের প্রতিফলন ঘটায়, যা তারা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’
প্যালেস্টাইন সংহতির বার্তা
প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (PSC)। সংস্থাটির মুখপাত্র লুইস ব্যাকন বলেন, ‘এই ভোট ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের ফিলিস্তিনের প্রতি তীব্র অবস্থানকে তুলে ধরেছে। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এবং ইসরাইলকে আর সমর্থন করতে চান না।’
নৈতিক ভাবমূর্তি ও অতীত ইতিহাস
কো-অপ বহুদিন ধরেই যুক্তরাজ্যের অন্য সুপারমার্কেটগুলোর চেয়ে আলাদা অবস্থানে রয়েছে। ২০০৭ সালেই তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে উৎপাদিত পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়, যা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক পদক্ষেপ। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় কো-অপ রাশিয়ান পণ্য সরিয়ে নিয়েছিল। সেই নজির টেনে এবার সদস্যরা বলছেন, একই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিল ব্যাপক চাপ। ইউকে লয়ার্স ফর ইসরায়েল নামের একটি সংগঠন কো-অপের কাছে প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের দাবি জানায়, একে ‘জাতিগত বিদ্বেষপূর্ণ’ এবং ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ বলে দাবি করেন। তবে কো-অপ গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি অটল থেকে সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয় এবং প্রস্তাবটি সভায় আলোচনা ও গৃহীত হওয়ার সুযোগ পায়।
এখন কী হতে পারে?
যদিও ভোটের ফলাফল বোর্ডকে আইনত কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে না, তবে কো-অপের নৈতিক ভাবমূর্তির প্রশ্নে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সদস্যরা ও অধিকারকর্মীরা বলছেন—যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে কো-অপের ‘মূল্যবোধ-ভিত্তিক’ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। কো-অপ এখন তাদের নীতিমালার পর্যালোচনা শেষ করার দিকে এগোচ্ছে। ফলাফল অনুযায়ী ব্রিটেনের খুচরা বাজারে এই প্রথমবার কোনো বড় সুপারমার্কেট ব্র্যান্ড ইসরায়েলি পণ্য পুরোপুরি বর্জনের দিকে যেতে পারে।