Hot

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরিতে চোরাবালি

শিক্ষা সনদ নকল, অভিজ্ঞতার সনদেও দুই নম্বরি। এ রকম ভুয়া সনদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) প্রথম শ্রেণির চাকরি জুটিয়েছেন অন্তত ২৪ জন। নিরীক্ষা কিংবা তদন্ত– কোনো কিছুতেই চাকরির গায়ে টোকা লাগেনি। অসংকোচে বছরের পর বছর  চাকরি করে যাচ্ছেন এসব চতুর কর্মকর্তা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরির জালিয়াতি কীর্তি এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কয়েক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এ প্রতিষ্ঠানে। তারাও চাকরি করছেন অবলীলায়। এসএসসির গণ্ডি পেরোনো জাল সনদধারী কয়েকজন বনে গেছেন কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রকৃত উত্তীর্ণ প্রার্থী নিয়োগ পেলেও চাতুরী করে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তাও টিকে আছেন! দু’জনই তুলছেন সরকারি বেতন! 

এমনকি ফাউন্ডেশনের অধীন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগেও প্রবঞ্চনার প্রমাণ মেলে তদন্তে। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দিয়ে দেওয়া হয় ধামাচাপা। এ ছাড়া প্রকল্পের নিয়োগেও জাল সনদের উদাহরণ ভূরি ভূরি। বছরের পর বছর এমন অনিয়ম চলতে থাকলেও লাগাম টানার ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নেই হেলদোল। উল্টো কেউ উদ্যোগী হলে তা বীরদর্পে ঠেকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে করা হচ্ছে অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি। 

ছলচাতুরীর নিয়োগ

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার কেউ কেউ জাল শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সনদের মাধ্যমে, নিয়োগ পরীক্ষায় নম্বর নয়ছয় করে, পরীক্ষা না দিয়ে কিংবা এক জেলার বাসিন্দা হয়ে আরেক জেলার কোটায় নিয়োগ পেয়ে নির্ঝঞ্ঝাট চাকরি করছেন। বায়তুল মোকাররমের ইমাম ছাড়াও পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ধর্মীয় প্রশিক্ষক, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রকাশনা কর্মকর্তা, সহকারী সম্পাদক, সহকারী লাইব্রেরিয়ান, আর্টিস্ট পদে রয়েছেন তারা। স্বচ্ছ নিয়োগ না হলেও এক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে পরিচালকও হয়ে গেছেন। 

সূত্রটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দশম গ্রেডের তথা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদে অন্তত ৬ জন জাল সনদ এবং অনিয়মের মাধ্যমে চাকরি বাগিয়েছেন। তারা ভুয়া ডিপ্লোমা সনদে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট, লেডি ফার্মাসিস্ট পদে চাকরি করছেন। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাকরিবিধিতে এসব পদে এইচএসসি পাস ছাড়া চাকরি করার সুযোগ নেই। যে প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ডিপ্লোমা সনদ নিয়েছেন সেটির অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সনদ ভুয়া হওয়ার পরও তারা এসএসসি পাসে কর্মকর্তা হয়ে গেছেন। নিরীক্ষা আপত্তিও তারা ডিঙ্গিয়ে গেছেন। তাদের সবার নিয়োগ হয় ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে। সে সময় ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) ছিলেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। তিনি এখন বেঁচে নেই। 

কিছুই মানে না ইফা

অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সনদ যাচাইয়ের ধার ধারে না ইসলামিক ফাউন্ডেশন। জাল সনদধারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের নির্দেশনাও পাত্তা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে ইফার ২৯টি গুরুতর অভিযোগ বিস্তারিত তুলে ধরে।

সাবেক ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের কর্মকালে তাঁর চাহিদায় সিভিল অডিট অধিদপ্তর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিশেষ নিরীক্ষা চালায়। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা কার্যক্রমে ইফায় প্রথম  এবং দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তত ৪৮ কর্মকর্তার নিয়োগে জাল সনদ এবং অনিয়মের তথ্য মেলে। জাল শিক্ষা সনদ ছাড়াও ভুয়া অভিজ্ঞতা ও মুক্তিযোদ্ধার সনদে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া যায়। জেলা কোটা জালিয়াতির নিয়োগও ধরা পড়ে। তবে পাঁচ বছরেও এসব জালিয়াতির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি ইফা কিংবা ধর্ম মন্ত্রণালয়। 

উল্টো ইফা অভিযুক্তদের পক্ষ নেয়। সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের সেই সময়কার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘুষ নিয়ে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর অধিকাংশ নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করে দেন। তবে কাগজপত্রে জালিয়াতি থাকায় পাঁচজনের আপত্তি আটকে থাকে। তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি ইফা। উল্টো এখনও আপত্তি নিষ্পত্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইফার সাবেক এক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সমকালকে বলেন, ফাউন্ডেশন যাই জবাব দিক, এসব আপত্তি নিষ্পত্তির কোনো সুযোগই ছিল না। ঘুষের লেনদেনে নিষ্পত্তি হয়েছে। এখনও তদন্তের সুযোগ রয়েছে। 

গত ৩১ অক্টোবর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষ বায়তুল মোকাররমে ইমাম নিয়োগ দিয়েছে। আবার তাদের তদন্ত কমিটি এই নিয়োগ সঠিক হয়নি বলছে। তাই এই মুহূর্তে আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কর্তৃপক্ষ তদন্ত পরিচালনা করুক। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’ তবে চার মাস হতে চললেও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত এগোয়নি। 

সিভিল অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের পর জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নির্ধারণে ২০১৯ সালের ইফার তৎকালীন সচিব কাজী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি কয়েকটি বৈঠকও করে। পরে আন্দোলনের মুখে বদল করা হয় সচিবকে। ফলে আঁধারে ডোবে  তদন্ত। 

চাকরি জুটিয়েছেন যারা

ইফার সহকারী সম্পাদক পদে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ যোগ দেন মুহাম্মদ ফখরুল আলম। চাকরির আবেদনে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী উল্লেখ করেন। নিরীক্ষায় তাঁর শিক্ষা সনদ জাল শনাক্ত হয়। ফখরুল আলম ‘আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তালিকাভুক্ত নয়। 

জবাবে ইফা জানায়, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করে জানা যায়, ফখরুল আলম চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় অকৃতকার্য। পুনর্নিরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। যার নথি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশের আবেদন করেছেন ফখরুল আলম। শিগগির তা প্রকাশ করা হবে।’ এ জবাবের তিন বছর পরও ওয়েবসাইটে ফল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

বতর্মানে ইফার সহকারী পরিচালক পদে থাকা ফখরুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওয়াজ করেন। তিনি ‘ফখরুল আশেকি’ নামে পরিচিত। তিনি সমকালকে বলেন, শুধু আমি একা নই, আরও ২৮ জনের বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি রয়েছে। বারবার জবাব দিচ্ছি, কিন্তু নিষ্পত্তি হচ্ছে না।  কেন হচ্ছে না– এমন প্রশ্নে ফখরুল আলম বলেন, আমি ২০০৭ সালে অনার্স করেছি। ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফল ওয়েবসাইটে দিচ্ছে। তাই আমার ফল ওয়েবসাইটে নেই। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, সব ফল ওয়েবসাইটে নেই, তা সত্য। কেউ যোগাযোগ করলে সনদ যাচাই করে দেওয়া হয়। যাচাইয়ের আবেদন করা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।

‘আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর বিষয়ে ফখরুল আলম বলেন, ২০১২ সাল পর্যন্ত ইউজিসির অনুমোদিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। আমি ২০১০ সালে পাস করেছি। পরে বাদ পড়ার দায় আমার নয়।

বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই আরেক সহকারী সম্পাদক মো. ইয়াসিন মিয়াকে নিয়োগ দেয় ইফা। তাঁর নিয়োগের অডিট আপত্তি এ কারণে নিষ্পত্তি করা যায়নি। সহকারী সম্পাদক পদ সৃষ্টির আদেশ জারি হয়েছে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি। অথচ তিনি এ পদে চাকরি করছেন ২০১০ সালের ২৭ জুন থেকে। পদ সৃজনের পর নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই ইয়াসিন মিয়াকে চাকরিতে রাখা হয়েছে। ষষ্ঠ গ্রেডের সম্পাদক পদে আনোয়ার কবির একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, তাদের অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে ইফা।

বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদায় ষষ্ঠ গ্রেডে নিয়োগ করা দুই ইমামের সনদ সরকারি স্বীকৃত নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপসচিব পদমর্যাদার পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি পাওয়া সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান চাকরিতে আবেদনের যোগ্য ছিলেন না। বয়স কমিয়ে আবেদন করেন তিনি। স্বীকৃতিহীন সনদে চাকরি এবং অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পাওয়ার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হকেরও চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা ছিল না। 

মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হকের আবেদনে ইমাম নিয়োগে অনিয়ম তদন্তে ২০২০ সালের ২১ জুলাই তিন উপসচিবের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন জমা দিতে সময় দেওয়া হয়েছিল এক মাস। অন্যদিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে পরের বছরের ৩০ মে ফাউন্ডেশন সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি করে ইফা। তবে দুই কমিটির কেউ তদন্ত করেনি।

পরে এনামুল হক হাইকোর্টে রিট করলে ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিটি পুনর্গঠন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পুনর্গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাখাওয়াৎ হোসেন ও ইফা পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ধর্ম সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। বাকি তিন সদস্য আলাদা প্রতিবেদন দেবেন বলে জানানো হয়।

সূত্র বলছে, প্রতিবেদন গ্রহণ করলে দায়ীদের চাকরিচ্যুত করতে হবে– এ কারণে দুই সদস্যের দেওয়া প্রতিবেদন নেয়নি মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার  ছয় দিন পর অফিস আদেশে বলা হয়, উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় তদন্ত কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা আদালতকে জানানো হয়েছে। আদালত ৩১ অক্টোবর রায়ে বলেছেন, তদন্ত চালাতে বাধা নেই। তবে মন্ত্রণালয় কিছুই করছে না। 

২০১৭ সালে নবম গ্রেড তথা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান ইফার সেই সময়কার মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের ভাতিজা রেজোয়ানুল আলম। প্রকাশনা কর্মকর্তা পদে তাঁকে চাকরি দিতে নিয়োগ কমিটির সভার কার্যবিবরণী বদল করা হয়। প্রথম কার্যবিবরণী অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষায় ১২ নম্বর পেয়েছিলেন রেজোয়ানুল আলম। দ্বিতীয় কার্যবিবরণীতে নম্বর বাড়িয়ে তা দেখানো হয় ১৬। অথচ পদটি মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত ছিল, যা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে।

প্রকাশনা কর্মকর্তা পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র নাসির উদ্দিন শেখ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঘুরে পরে নিয়োগ পান। তবে চাকরিতে বহাল রয়েছেন রেজোয়ানুল আলমও। নাসির উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দেখিয়ে নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে ইফা। তবে পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার অনিয়ম ধরা পড়লেও ব্যবস্থা নেয়নি ইফা।

উৎপাদন কর্মকর্তা শাহ আলম স্নাতক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি পেয়েও চাকরি পেয়েছেন। নিয়োগের শর্ত ছিল দ্বিতীয় শ্রেণিতে সম্মানসহ স্নাতক। নিয়োগ কমিটির কার্যবিবরণী অনুযায়ী, তাঁকে সনদের জন্য বাড়তি ২ নম্বর দেওয়া হয়। এ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ইছমাইল হোসেন নামের এক প্রার্থী। তিনি এক যুগ ধরে ঘুরছেন। তবে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরে শাহ আলম অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার অনিয়মের বিষয়ে কিছুই করেনি ইফা।

জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিন বছর আগে ইফার মহাপরিচালককে চিঠি দেন প্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন আজীবন সদস্য। এতে বলা হয়, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের মাস্টার ট্রেইনার আবদুল আজীজের শিক্ষা সনদ জাল। বর্তমান উপপরিচালক পদে চাকরি করা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সনদও জাল। ইফার আর্টিস্ট পদ প্রথম শ্রেণির। এ পদে নিয়োগের যোগ্যতা চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি। তবে এ পদে কর্মরত ফারজীমা মিজান শারমীন গ্রাফিক্স অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়ায় স্নাতক ডিগ্রিধারী। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি করেছেন আরেক সহকারী পরিচালক নাজমুস সাকিব। অথচ তাদের সবার অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। 

নাজমুস সাকিবের বাবা হারুনুর রশিদ ইফার পরিচালক ছিলেন। তিনি চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ২০১০ সালে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। অথচ ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালক (লাইব্রেরি) পদে থাকা অবস্থায়  হারুনুর রশিদ নিজেই চিঠিতে (সূত্র: ২০১৯/ ইসঃ ফাউঃ গ্রন্থাঃ/৬/৯১ অংশ-৬)/০৮) জানান, তাঁর বিভাগে মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবী নেই। কিন্তু নাজমুস সাকিব ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রথম শ্রেণির চাকরি পান। তিনি অনিয়ম ও সনদ বিক্রির অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। 

মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পে প্রায় ৭৮ হাজার শিক্ষক চাকরি করছেন। অনেকেরই সনদ কম্পিউটারের দোকানে তৈরি বলে দাবি করেছেন ইফার এক পরিচালক। প্রকল্পের শিক্ষক ফখরুল ইসলাম নিজেকে ঢাকার দক্ষিণগাঁওয়ের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস দাবি করেন। ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের চিঠির জবাবে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর মাদ্রাসার মুহতামিম জানান, ফখরুল আলম কিছুদিন ক্লাস করলেও পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁর অনুরোধে একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে, যা দাওরায়ে হাদিসের সনদ নয়।

কিছুই জানেন না মহাপরিচালক

ইফা মহাপরিচালক ড. মোহা. বশিরুল আলম বলেন, ‌‘এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। এই প্রথম শুনলাম। খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’ নিরীক্ষা, তদন্ত কিংবা আদালতের রায়ের বিষয়েও কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন মহাপরিচালক।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor