Trending

ইসলামী ব্যাংকের ঋণ নেওয়া ১৪ প্রতিষ্ঠানের নথি তলব

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ঋণ নেওয়া ১৪ প্রতিষ্ঠানের নথি তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনিয়ম, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া কাগজপত্র-দলিল তৈরি করে এ ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

এর মধ্যে ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির রাজধানীর গুলশান করপোরেট, রাজশাহীর দুটি ও পাবনা শাখা থেকে নাবিল গ্রুপের ১১ প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। গত রোববার দুদকের মানি লন্ডারিং শাখা থেকে ওই চিঠি দেওয়া হয়। এর আগেও এসব তথ্য চেয়ে  দুদক থেকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েও প্রতিবেদন পায়নি সংস্থাটি।

অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে দুদকের মানি লন্ডারিং শাখার উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম। ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। দুদকের চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। 

চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ও অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র ও দলিল তৈরি করে নামে-বেনামে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা, জুবলী রোড ও চাকতাই শাখা থেকে এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। 

এ নিয়ে গত বছরের ৮ জানুয়ারি ‘আরও ৩৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণ’ শিরোনামে সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

কোন শাখা থেকে কত ঋণ
খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টের নামে ১ হাজার ১২০ কোটি, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ১ হাজার ৮৫ কোটি এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে নেওয়া হয় ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ১৯৫৯তম সভায় এসব ঋণ অনুমোদন করা হয়। 
ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে পরিদর্শনে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি। নামসর্বস্ব এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন ঋণ দিয়ে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে।

নাবিল গ্রুপের ঋণ 
একই চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার গুলশান করপোরেট, রাজশাহীর দুটি এবং পাবনা শাখা থেকে আলোচিত গ্রাহক নাবিল গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের  নামে ২০২২ সালে অনুমোদিত ঋণ ছিল ১১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– নাবিল নাবা ফুডস, নাবিল কোল্ডস্টোরেজ, নাবিল ফিড মিলস, নাবিল অটো রাইস মিলস, নাবিল অটো ফ্লাওয়ার মিলস, শিমুল এন্টারপ্রাইজ, নাবা অ্যাগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাবা ফার্ম লিমিটেড, নাবিল গ্রিন ক্রপস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেস। 

এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংক একাই দিয়েছে ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১২০ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। 
২০২২ সালের মার্চেও ইসলামী ব্যাংকে সব মিলিয়ে নাবিল গ্রুপের ঋণ ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। হঠাৎ করে গ্রুপটির নামে নেওয়া ঋণ ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত অন্য কেউ নিয়েছে– এরকম সন্দেহ থেকে পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন সদস্যের একটি পরিদর্শক দলও গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেসব তথ্য চায় দুদক
দুদকের চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো– ওই ঋণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন/অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফাটোকপি। এ ছাড়া অনুসন্ধানকালে প্রয়োজনীয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। এর আগে ওইসব তথ্য চেয়ে গত বছরের ১২ নভেম্বরও চিঠি দেওয়া হয়। এর পর একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারিও তাগিদপত্র পাঠানো হয়। 

জবাবে গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, পরিদর্শন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই কাজটি শেষ হলে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এ পরিস্থিতিতেই তথ্য চেয়ে আবারও চিঠি পাঠানো হলো।

ইসলামী ব্যাংকের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে
ওই ঋণ মঞ্জুরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখা, আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রস্তাবনা, শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঋণ অনুমোদন ও বিতরণসংক্রান্ত নোটশিট, ক্রেডিট  কমিটির বোর্ড/ইসি মেমো, বোর্ড/নির্বাহী কমিটির সভার কার্যবিবরণীর (হাজিরাসহ) সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে।  

এ ছাড়া ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, এলসির কপি, বিল অব ল্যাডিং, ইন্সপেকশন সার্টিফিকেট (কাস্টমস বিভাগ এবং ব্যাংকের নিজস্ব), ক্রেডিট রিপোর্ট এবং বিল অব এন্ট্রির সত্যায়িত ফটোকপি, প্রত্যেকটি এলটিআর এবং ফোর্সড লোনের হিসাব বিবরণী (শুরু থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত), ওই ঋণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন/অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি, ঋণ সম্পর্কে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শন/অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়। 

এর আগে দুদক গত বছরের নভেম্বরে চিঠি পাঠিয়ে তথ্য চেয়েছিল। তবে গত ডিসেম্বরে ব্যাংক থেকে দুদকে চিঠি পাঠিয়ে ব্যাংকের অর্ধবার্ষিকীর কাজের সমাপনীর অজুহাতে তিন মাসের সময় চাওয়া হয়। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button