International

ঈদের দিন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ের তিন ছেলেকে হত্যা করল ইসরায়েল

ঈদের দিন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান বিমান হামলায় হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ের তিন ছেলে ও বেশ কয়েকজন নাতি-নাতনি প্রাণ হারিয়েছেন। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আল-জাজিরাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গাজায় হামাস–সংশ্লিষ্ট একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গাজা শহরের পশ্চিমে একটি শরণার্থীশিবিরে ওই হামলা হয়। এতে হামাস নেতা হানিয়ের তিন ছেলে হাজেম, আমির ও মুহাম্মদ ইসমাইল হানিয়ে এবং তাঁর অন্তত তিন নাতি-নাতনি নিহত হন।

পরে কাতারে অবস্থানরত হানিয়ে আল-জাজিরাকে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে জানান, যুদ্ধের মধ্যে তাঁর ছেলে গাজায় অবস্থান করছিলেন।

গাজাভিত্তিক ওই বার্তা সংস্থা প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে থাকা কয়েকটি মৃতদেহ ঢেকে রাখা হয়েছে।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় হানিয়ের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। তাঁর আরেক ছেলে গত ফেব্রুয়ারিতে এবং ভাই ও ভাতিজা অক্টোবরে প্রাণ হারান। এরপর নভেম্বরে তাঁর এক নাতি নিহত হন।

ইসমাইল হানিয়ে আজ কাতারের দোহার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফিলিস্তিনিদের দেখতে গেলে তাঁকে স্বজনদের নিহত হওয়ার খবর জানানো হয়। গাজার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ঈদের দিনে একটি বেসামরিক গাড়িতে চড়ে এক স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন ইসমাইল হানিয়ের ছেলে, নাতি-নাতনিরা। এ সময় ওই গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি জঙ্গিবিমান থেকে হামলা চালানো হয়।

তাঁর স্বজনদের মৃত্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনায় হামাসের অবস্থানের কোনো নড়চড় হবে না বলে জানিয়েছেন ইসমাইল হানিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট এবং আমরা সেগুলোতে কোনো ছাড় দেব না। শত্রুরা যদি মনে করে, আলোচনা যখন গতিশীল হয়েছে এবং হামাস যখন তাদের অবস্থান জানাবে, এমন সময়ে আমার ছেলেদের লক্ষ্যবস্তু বানালে হামাস অবস্থান পরিবর্তন করবে, তাহলে তারা কল্পনার জগতে রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের রক্ত আমার ছেলেদের রক্তের চেয়ে আমার কাছে কম কিছু নয়।’

চলমান আলোচনায় হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া কোনো বাধা ছাড়াই ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের কোনো বাধা ছাড়াই সেখানে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেছে তারা। অপরদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, হামাসকে নির্মূল এবং তাদের হাতে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

ইসমাইল হানিয়ে কে?

ইসমাইল হানিয়ে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাঁকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হয়। গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানকালে ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের এই রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়ে। ১৯৮৯ সালে তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। এরপর ১৯৯২ সালে আরও কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে হানিয়েকে ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের শূন্যরেখায় ছেড়ে দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

এক বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসমাইল হানিয়ে গাজায় ফেরেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এতে হামাসে তাঁর পদমর্যাদা বাড়ে।

ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়েকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়েকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তবে হানিয়ে ওই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের জাতীয় দায়িত্ব থেকে সরবে না এবং তিনি গাজা শাসন করতে থাকেন।

পরে ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়ে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। পরের বছর ইসমাইল হানিয়েকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। কয়েক বছর ধরে ইসমাইল হানিয়ে কাতারে বসবাস করছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d