Bangladesh

উখিয়া-টেকনাফজুড়ে অপহরণ আতঙ্ক: নেপথ্যে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীচক্রের যোগসাজশ

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের বিস্তীর্ণ পাহাড়ের গহীন অরণ্যকে রীতিমতো অভয়ারণ্য তৈরি করে তুলেছে মাদককারবারি, সন্ত্রাসী ও অপহরণকারী চক্র। এ চক্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সাথে স্থানীয় মাদককারবারী, দুর্বৃত্ত, দুষ্কৃতকারী, তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা সমানতালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে যাচ্ছে। উখিয়া টেকনাফের সীমান্তবর্তী পৃথক কয়েকটি ইউনিয়নে বারবার অপহরণের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশসহ মাদক, ইয়াবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনী।
সূত্রে জানা যায়, গত বছরে উখিয়া টেকনাফের ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সময় শতাধিক স্থানীয় ও রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগই উখিয়া টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পালংখালী, বালুখালী, কুতুপালংসহ টেকনাফের হ্নীলা, বাহারছড়া, সাবরাং, উনচিপ্রাং, শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন এলাকায় ঘটেছে। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৪২ জনকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য মতে, গেল বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ উখিয়া টেকনাফে ১০২ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৪৭ জন রোহিঙ্গা ও ৫৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা। সর্বশেষ গত ২৩-জানুয়ারি-২০২৪ মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে উখিয়া থানাধীন ৫ নম্বর পালংখালী ইউপিস্থ পানবাজার থেকে আবুল কাশেমের ছেলে লুতফর রহমানকে অপহরণপূর্বক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং ভিক্টিমকে মারধর করে পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে ভিডিও কল ও ছবি পাঠায়। ভিক্টিমের পরিবার উখিয়া থানা ও র‌্যাব-১৫ কে অবহিত করলে, থানা পুলিশ ও র‌্যাব তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ভিক্টিমের অবস্থান চিহ্নিত করে বিভিন্ন তৎপরতা চালানোর এক ফাকে পরের দিন অর্থাৎ ২৪-জানুয়ারি-২৪ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উখিয়া টিভি টাওয়ার এলাকায় চোখ বাঁধা অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় তাকে।
ভুক্তভোগীর জবানবন্ধীতে জানা যায়, লুতফর একজন ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী। সে বালুখালী পান বাজারে সকালে পান কিনতে যায়। পান কিনে গাড়িতে উঠার প্রারম্ভে একটি সাদা মাইক্রোবাস তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে আসার পূর্বে তাকে গাড়িতে তুলে গহীন পাহাড়ের উঁচুতে একটি বাড়িতে আবদ্ধ করে রাখে। পরে তার উপর চলে অত্যাচার। পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ফোন করে। দ্রুত দাবিকৃত টাকা না পাঠালে লাশ করে ফেলার হুমকি দেয়। তার পরিবার মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করার কথা বলে র‌্যাব ও পুলিশকে ব্যাপারটা অবহিত করে। র‌্যাব পুলিশের তৎপরতায় তারা পরের দিন অপহরণকারীরা তাকে একটি জায়গায় ফেলে চলে যায়। এভাবে উখিয়া টেকনাফে প্রায় প্রতিমাসে কয়েকটি অপহরণের ঘটনা ঘটে।
নিম্নে তার কিছু তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
৮ অক্টোবর ২০২৩ টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে মাহমুদুল হক নামের এক যুবক অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এর আগে শনিবার সকালে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবনিয়া পাহাড় থেকে ওই যুবককে অপহরণ করা হয়। মাহমুদুল হক উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবনিয়া গ্রামের আলী আহমদের ছেলে।
গত ২৬ এপ্রিল ২৩ নয়াপাড়া ক্যাম্পের তিন শিশু অপহরণের শিকার হন। পরে মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। ২৩-এপ্রিল ২০২৩ সকালে টেকনাফের বাহারছড়া এলাকায় পানের বরজে কাজ করার সময় স্কুলছাত্রসহ দুইজন অপহরণের শিকার হয়েছে। এরা হচ্ছেন- ৬ নং ওয়ার্ডের জাহাজপুরার বাসিন্দা বাছা মিয়ার ছেলে রহিম উদ্দিন ও মো. সরোয়ারের ছেলে মো. রিদুয়ান। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। এ সময় আরো দুইজনকে অপহরণকারীরা কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে।
২৪ এপ্রিল ২৩, দুপুরে হ্নীলা দমদমিয়া ন্যাচার পার্কে ঘুরতে গিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের সি-ব্লকের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. বেলাল, মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে নূর কামাল, মো. উবায়দুল্লাহর ছেলে নূর আরাফাত, বি ব্লকের মো. রফিকের ছেলে ওসমান এবং ডি ব্লকের মাহাত আমিনের ছেলে নুর কামাল অপহরণের শিকার হন। তারা ২৮ এপ্রিল ২৩ মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ২৮ জানুয়ারি ২৩ বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়া এলাকা থেকে অপহরণ হন নুরুল আমিনের ছেলে রহমত উল্লাহ ও আলী আকবর এর ছেলে আব্দুল হাফিজ।
ইতিপূর্বে গেল ১৬ মার্চ ২৩ সকালে জাহাজপুরা এলাকা থেকে কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন, রশিদ আলম, জানে আলম, জাফর আলম, জাফরুল ইসলাম, ফজল করিম ও আরিফ উল্লাহ অপহরণের শিকার হন। ১৯ মার্চ ২৩ জাদিমুড়ার জুম্মা পাহাড়ি এলাকা থেকে মোহাম্মদ ছৈয়দ ও ২৪ মার্চ ২৩ রহমত উল্লাহ নামে আরেকজন অপহরণের শিকার হন। ২ মার্চ ২৩ অপহরণের শিকার হন, টেকনাফ বাহারছড়ার মারিশবনিয়া এলাকা থেকে প্রবাসী হোসন আলীর ছেলে মো. সালমান এবং মো. আলীর ছেলে ওবাইদুল্লাহ। অবশ্য তারা ৪ মার্চ ২৩ ৭০ হাজার টাকায় মুক্তিপণে ফিরে আসেন।
৮ জানুয়ারী ২৩ ভোরে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকায় ক্ষেত পাহারারত চার কৃষক-আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুস সালাম, গুরা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান, রাজা মিয়ার ছেলে মুহিব উল্লাহ ও রাজা মিয়ার ছেলে আব্দুল হাকিমকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, গেল শনিবার রাতে স্থানীয় কৃষকের রোপিত ও চাষাবাদের ভূট্টা ক্ষেতে বন্যহাতীর দল নামে। পাহারারত কৃষকরা হাতিদের পাহাড়ের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফিরে এসে টং ঘরে ঘুমিয়ে যায়। রাত প্রায় দেড়টার দিকে স্থানীয় পাহাড় থেকে অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত ১৫ থেকে ২০ জনের দল অস্ত্রের মুখে ঐ কৃষকদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে ২০ লাখ দাবি করে আসছিল। অবশেষে ১০ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে হ্নীলা পাহাড়ি এলাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত ৩ জন ছাড়া পান। কিন্তু আব্দুস সালাম নামে একজনকে তখনও অপহরণকারীদের কাছে জিম্মি করে রাখলেও পরে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়া পায়।
গত ১৮ ডিসেম্বর ২২ বিকেল সাড়ে ৪টায় টেকনাফের বাহারছাড়া ইউনিয়নের জাহাজ পোড়া এলাকার একটি পাহাড়ের পাদদেশে খালে মাছ ধরতে গেলে একদল অস্ত্রধারী অপহরণকারীচক্র এক কলেজ শিক্ষার্থীসহ ৮ জনকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। তারা হচ্ছেন, টেকনাফের বাহারছাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, সৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা, তার ভাই করিম উল্লাহ, মমতাজ মিয়ার ছেলে রিদুয়ান, রুস্তম আলীর ছেলে সলিম উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক, রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আবসার, নুরুল হকের ছেলে নুর মোহাম্মদ। পরে মুক্তিপণের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ফিরে অপহৃতরা জানিয়েছেন, গহীন পাহাড়ের ভাজে ভাজে রয়েছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গ গুলোই সুন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা।
১০ নভেম্বর ২২ টেকনাফের মহেশখালী পাড়া থেকে অপহৃত ১১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে অপহরণ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় এপিবিএন পুলিশ। অপহরণ চক্রের তিনজন রোহিঙ্গা ও একজন স্থানীয় ছিল বলে এপিবিএন নিশ্চিত করেছিল।
স্থানীয় সূত্রমতে জানা যায়, টেকনাফ বাহারছড়ার জাহাজপুরা, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নে বারবার অপহরণের ঘটনা ঘটছে। কখনো স্থানীয় আবার কখনো রোহিঙ্গারা অপহরণের শিকার হচ্ছে। অনেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এলেও অনেকে আর ফিরে আসেননি। এসব এলাকার কিছু চিহ্নিত অপরাধী ও জনপ্রতিনিধি এ অপরাধের সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছে। স্থানীয় ও রোহিঙ্গা অপরাধীচক্র এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব অপরাধের সাথে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যবৃন্দ যথাযথ তৎপর হলে, নিরবিচ্ছিন্নভাবে এসব অপকর্ম করে পার পেয়ে যাবার কোনো সুযোগ থাকার কথা ছিলনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার শাহ আলম গ্রুপের মো. ইউনুসের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত, দিল মোহাম্মদের ছেলে সাদেক এবং বাইদুল প্রকাশ ওদুল্লাহ অপহরণের সাথে জড়িত। কিন্তু গহীন পাহাড়ে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি করায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে এসব অপরাধী চক্রের নাগাল পায়না। এটি যেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্য এক অপরাধী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অন্য দেশ! সম্প্রতি অপহরণকারী চক্রের গ্রুপ প্রধান শাহ আলম পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। রয়েছে গিয়াস উদ্দিন গ্রুপ নামে আরো একটি গ্রুপ। সম্প্রতি অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন গিয়াস উদ্দিন। স্থানীয় এ চক্রের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা ইদানীং সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ডাকাতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ মহাআতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। উখিয়ার পালংখালীর চাকমারকুল, বালুখালী, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা, টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের শাপলাপুর থেকে সাবরাং ও রামু টেকনাফ সড়কের বালুখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে সন্ধ্যার পর চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের পাদদেশে যেসব কৃষক চাষাবাদে জড়িত তারা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। পাহাড় সন্নিহিত এলাকায় মানুষ বাজার করতে এমনকি চায়ের দোকানে বসতেও ভয় পাচ্ছে। কোন সময় সন্ত্রাসীচক্র হানা দিয়ে ধরে নিয়ে যায়! স্কুল ও মাদরাসায় পড়তে যাওয়া শিশুদের নিরাপত্তাহীনতায় অভিভাবক মহল উৎকণ্ঠিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সূর্যাস্তের পরই ব্যারাকে ফিরে যায়। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো রাতের বেলা থাকে অরক্ষিত।
সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবপাচারের খপ্পরে পড়ে উখিয়া পালংখালী এলাকার ১০ জন একসাথে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে, স্থানীয় ভুক্তভোগী দানু মিয়ার বরাতে জানা যায়। এ ব্যাপারে উখিয়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সচেতন মহলের অভীপ্রায়, উখিয়া টেকনাফকে মাদক, ইয়াবা, অপহরণ ও মুক্তিপণমুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়ে সত্যিকার অর্থে অপরাধ দমনে এগিয়ে না আসলে উখিয়া টেকনাফবাসী যে তিমিরে ছিল তা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d