উচ্চ তাপ-সহনীয় সেমিকন্ডাক্টর তৈরির উদ্যোগ, যুক্ত আছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীও
শুক্রগ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা আমাদের পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি, ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তাই মানুষ বা সিলিকনভিত্তিক ইলেকট্রনিকস যন্ত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যাবে শুক্রগ্রহে। ফলে বারবার চেষ্টার পরও বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত শুক্রগ্রহে কোনো যান পাঠাতে সক্ষম হননি। এ সমস্যা সমাধানে উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের মাধ্যমে নতুন সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্য গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী, লকহিড মার্টিন করপোরেশন, ইন্টেল করপোরেশন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞানীরা।
উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম সেমিকন্ডাক্টর তৈরির গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নাদিম চৌধুরী বলেন, সেমিকন্ডাক্টর দুনিয়াতে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড সম্প্রতি বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আর তাই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের বৈশিষ্ট্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৫০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কী হবে, তা জানার জন্য গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের ডিভাইস এমআইটি ন্যানোতে তৈরি করা হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় যন্ত্রের কার্যকারিতা পরিমাপ করা কঠিন বলে এখনো গবেষণা চলছে।
অ্যাপ্লাইড ফিজিকস লেটার্স জার্নালে গ্যালিয়াম নাইট্রাইডে তৈরি যন্ত্রের স্থায়ীত্ব নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের বৈশিষ্ট্য ও কাজের ধরন সম্পর্কে জানার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি গ্যালিয়াম নাইট্রাইড যন্ত্রের ওহমিক কন্ট্যাক্টের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব পর্যালোচনা করেছেন। ওহমিক কন্ট্যাক্ট বিশেষ ধরনের নিম্ন রোধের বৈদ্যুতিক জংশন। কোন সেমিকন্ডাক্টর পৃথিবীর বাইরের কতটা কাজ করবে, তা মূলত ওহমিক কন্ট্যাক্ট বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের আচরণে পরিবর্তন হয় না। এমনকি ৪৮ ঘণ্টা ধরে ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার পরও গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী জন নিরুলা বলেন, ‘চরম তাপমাত্রায় টিকতে পারে এমন উচ্চ ক্ষমতার ট্রানজিস্টর তৈরির জন্য কাজ করছি আমরা। এ ধরনের ট্রানজিস্টর ভূ-তাপীয় শক্তি নিষ্কাশন বা জেট ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় ব্যবহারের সুযোগ আছে। ট্রানজিস্টর আধুনিক ইলেকট্রনিকসের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা সরাসরি গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের ট্রানজিস্টর তৈরি করতে চাইনি। আমরা প্রথমে তাপমাত্রা বাড়ালে গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের কতটা পরিবর্তিত হয়, তা নির্ধারণ করতে চেয়েছিলাম।’