Bangladesh

উচ্চ ব্যয়ের আরেকটি হাইওয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে, চলছে পর্যালোচনা

মহাসড়কটির কিলোমিটার প্রতি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।

মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়ে আরও একটি হাইওয়ে প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের কাছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এসেছে। বরিশাল হয়ে ফরিদপুর ও কুয়াকাটা শহরের মধ্যকার সড়কটির প্রশস্ততা বাড়াতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কিলোমিটার  প্রতি ব্যয় প্রস্তাব করেছে ১৪০ কোটি টাকা। 

সমজাতীয় প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করলে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কিলোমিটার প্রতি ব্যয়  ব্যয় নির্মাণাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সড়কের চেয়ে ৭০.৭১ শতাংশ বেশি এবং এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। চলমান ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা প্রকল্পে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ধরা হয় ৮২ কোটি টাকা; এবং এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় ৯৪.৩১ কোটি টাকা।

দুই পাশে ধীর গতির যানের জন্য সার্ভিস লেনসহ ২৩৬ কিলোমিটারের ফরিদপুর-বরিশাল এবং বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে ৩,১২৫ কোটি টাকা (৩.০৩ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় প্রস্তাব করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

ফরিদপুর-কুয়াকাটা মহাসড়কটি বর্তমানে সার্ভিস লেনবিহীন দুই লেনের একটি সড়ক। ফলে প্রায়ই এই রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন অঞ্চলে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় এই সড়কে আরও বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে।

কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ফরিদপুর-কুয়াকাটা মহাসড়কটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে– সমজাতীয় অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কিলোমিটার প্রতি ব্যয় কিছুটা বেশি। ব্যয় পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আগামী ৫ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবে। 

কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিলোমিটার প্রতি ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ২৫৬ কোটি টাকা। পরে বৈঠকের মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় থেকে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ফরিদপুর-কুয়াকাটা মহাসড়কটি উন্নয়নে আগামী বছরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে চায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তবে এর আগে বৈদেশিক ঋণ নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি। 

এ লক্ষ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) নীতিগত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি পেলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হবে। 

তবে নীতিগত অনুমোদনের আগে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় পর্যালোচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার (২৮,১১৯ কোটি টাকা) বৈদেশিক ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে ফরিদপুর-কুয়াকাটা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এক এক জায়গার পরিস্থিতি এক এক রকম। এ কারণে সমজাতীয় অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কিলোমিটার প্রতি ব্যয়ের পার্থক্য হয়ে থাকতে পারে। 

তিনি বলেন, “যদিও সমীক্ষার মাধ্যমে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তারপরও  এটা প্রাথমিক প্রস্তাব। পরে ব্যয় কিছুটা কমতেও পারে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে ব্যয় প্রস্তাব পুনরায় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।”

গোয়লন্দ থেকে ফরিদপুর, ফরিদপুর থেকে বরিশাল, বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা— এই চারটি সেগমেন্টে প্রকল্পটি ‍বাস্তবায়ন হবে। সেগমেন্টের অগ্রাধিকারও ভিন্ন ভিন্ন। এ অবস্থায় নতুন করে পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় কমে আসবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প প্রস্তাবে  বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সাসেক রোড করিডোর-৪ (বাংলাবান্ধা-মোংলা/চট্টগ্রাম) সঙ্গে পায়রা সমুদ্র বন্দারের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করবে। এতে করে এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অঞ্চলিক সংযোগ সড়ক হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে পায়রা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণ বাড়ে যাবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া পর্যটনের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে।

পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগ এবং কুয়াকাটা পর্যটন অঞ্চলের কারণে এই সড়কে ট্রাফিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে; ফলে রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ককে চার লেনের মহাসড়কে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সড়ক প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা এবং বিস্তারিত নকশা তৈরি সম্পন্ন করেছে।

প্রাথমিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জলবায়ু সহনশীলতা এবং পরিবহন খাত থেকে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণের সুবিধার্থে প্রকল্পের নতুন ডিজাইন, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ কৌশল গ্রহণের জন্য একটি বড় ধরনের সমীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। আর এই সমীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যয় হতে পারে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button