International

উত্তর কোরিয়ার সিদ্ধান্তেই রাশিয়ায় সৈন্য পাঠানো হয়: মার্কিন কর্মকর্তারা

ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের বিশ্লেষকদের অনুমান অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়ায় অন্তত ১০ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছেন।

কয়েক মাস আগে দলে দলে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের রাশিয়ায় পাড়ি জমাতে দেখে অনেক পশ্চিমার কর্মকর্তাই ভেবেছিলেন, যুদ্ধে সেনা সংকটে পড়ায়; মিত্রদেশ থেকে সৈন্য আনছে ক্রেমলিন।

সোমাবার (২৩ ডিসেম্বর) মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বুঝতে পেরেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে কোরিয় সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত রাশিয়ার নয়,বরং উত্তর কোরিয়ার। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খুব দ্রুতই উত্তর কোরিয়ার এই সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছিলেন।

ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের বিশ্লেষকদের অনুমান অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়ায় অন্তত ১০ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছেন।

গ্রীষ্ম থেকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে থাকা রুশ সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উত্তর কোরিয় এসব সৈন্যরা। একত্রে তারা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে হামলা- পাল্টাহামলা চালাচ্ছে। 

মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিনিময়ে কিম তাৎক্ষণিকভাবে কোনো লাভবান হননি।

তাদের মতে, কিম সম্ভবত আশা করছেন ভবিষ্যতে কূটনৈতিক লড়াইয়ে সমর্থন দিয়ে, অন্য কোনো সংকটের সময় সহায়তা দিয়ে এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করে কোরিয়ার এই সমর্থনের প্রতিদান দেবে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা এখন বড় পরিসরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছু সেনা নিহতও হয়েছেন।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন এফ কারবি বলেন, ‘আমরা দেখছি উত্তর কোরিয়ার এই সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রের দ্বিতীয় সারি থেকে সামনের সারিতে চলে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই এবং অবশ্যই এটাও বিস্ময়করও নয় যে এখন যুদ্ধক্ষেত্রে কোরিয় সৈন্যরাও প্রাণ হারাচ্ছেন।’

উত্তর কোরিয়ানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘ফ্রন্ট লাইনে কোরিয় সেনাদের উপস্থিতি বাড়ছে এবং রুশ সেনা ইউনিটগুলোর সঙ্গে তারা দায়িত্ব পালন করছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নিবন্ধের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র কখন ও কীভাবে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যকার আলোচনার তথ্য সংগ্রহ করেছে সে বিষয়ে তারা কিছু জানাননি।

এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেছেন, প্রায় ২০০ উত্তর কোরিয়ান নিহত এবং আরও বেশি সংখ্যক সৈন্য আহত হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, রাশিয়া এসব ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধে কতটা প্রভাব ফেলেছেন, তা পরিষ্কার নয়। উত্তর কোরিয়া যুদ্ধে তার সেরা প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনীই পাঠিয়েছিল, তবে তাদের অনেকে অপুষ্টিতে ভুগছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বাস্তব যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই।

ইউক্রেনের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার প্লাটুনগুলো স্বাধীনভাবে নিজেরাই লড়াই চালাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যার ফলে তাদের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

একই সঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধে অংশ নেওয়া রুশ সেনাদের চেয়ে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আহতদের যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশের ছোট ও নিম্নমানের গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর বদলে, সরাসরি কুরস্ক শহরের বড় বড় হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সমর্থন ধরে রাখা রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই দেশই যুদ্ধে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়া ফ্রন্ট লাইনে শক্তিশালী ব্যূহ বজায় রেখেছে এবং ইউক্রেনের শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ড্রোন হামলার মাধ্যমে চাপ বজায় রেখেছে।

সোমবার মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় রাশিয়ার প্রতি কিম জং-উনের সমর্থন এবং উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির ব্যাংক, শিপিং কোম্পানি এবং ৯ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে।

কারবি বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ ও নৃশংস যুদ্ধে আর্থিক ও সামরিকভাবে সহায়তা করা সব পক্ষকে আমরা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে থাকব।’

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য শান্তি চুক্তি করতে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button