Bangladesh

উত্তাল সারা দেশ

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে দেশ। ক্ষোভ-প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিক সমাজ। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ২০৬টি সদস্য সংগঠনের পক্ষে সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার ও সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন। শিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাটি। নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। গতকাল সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। মাগুরা প্রতিনিধি জানান, শিশু ধর্ষণের আসামিদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত আদালত চত্বরে অবস্থান নেয় মাগুরার ছাত্র-জনতা। ধর্ষকের ফাঁসির আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে সকালে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা মাগুরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। পরে তারা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সমাবেশে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শায়েদ হাসান টগর বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি ধর্ষকদের পক্ষে মাগুরার কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াবে না।’

আন্দোলনকারীরা রাস্তার ওপর জোহরের নামাজ আদায় করেন। এ সময় সেনাসদস্যরা সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেনাসদস্যদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা ওই স্থান থেকে সরে গিয়ে শহরের ভায়না মোড়ে মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে রাস্তার দুই পাশে দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটি এক জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াবে না। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ধর্ষণ প্রতিরোধ ও ধর্ষকের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমাবেশ করেছেন শিক্ষকরাও। গতকাল প্রথম প্রহর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ ঘোষণা করেন। হল থেকে নারী শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের বিচারের দাবিতে নিজ নিজ বিভাগের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়াও ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাঠিমিছিলসহ একাধিক বিক্ষোভ হয় ক্যাম্পাসে। গতকাল পর্যন্ত ধর্ষকের বিচার দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, ‘আমরা দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আমরা যদি ধর্ষকদের উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে ধর্ষকরা ভয় পেয়ে আর অপরাধ করবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশে নারীদের ওপর ধর্ষণের নামে যে নারকীয় নির্যাতন চলছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ’ সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ সময় সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় নারী উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম মাহবুব সিরাজ।

তিনি বলেন, ‘নারী উপদেষ্টারা কোথায়? তারা তো স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে পারেন। নারী বিচারক, আইনজীবীরা এটা করতে পারেন। কিন্তু কজন করছেন। নারী উপদেষ্টারা কী আদৌ আছেন? দেশে কী ঘটছে, ওনারা কী সে ব্যাপারে সচেতন? ওনারা তো এগিয়ে আসতে পারেন, সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু সেরকম কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে এখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাচ্ছেন। আমি বারবার লিখছি, আমি ওনার পদচ্যুতি চাই। এ ছাড়াও আইন উপদেষ্টা; ওনার ব্যাপারে যত কম বলা যায়, ততই ভালো। ওনারা কী করছেন? আমরা একটা জবাবদিহিমূলক সরকার কেন পাচ্ছি না?’ প্রশ্ন তোলেন তিনি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে জনপরিসরে নারীদের ওপর যে নিপীড়ন, তা হঠাৎ করা হয়েছে বলার সুযোগ নেই। নির্যাতন হচ্ছে একধরনের ক্ষমতার বিস্তার।

উত্তাল সারা দেশ

বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষণে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মুখে লাল কাপড় বেঁধে গতকাল বিক্ষোভ কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তারা। ঢাকা মেডিকেলের মিলন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সেখানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, সম্প্রতি সংঘটিত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিও জানান। গত শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা রাত আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে সড়কের উভয় লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং নারী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

শিশু ধর্ষণের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ দাবি জানানো হয়। ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে একত্র হয়ে এক ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এতে সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ধর্ষক-নিপীড়দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দ্রুত সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবিতে শনিবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মাগুরায় শিশুর ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তারা মিছিল করে। গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খান জাহান আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন হলের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বর ও হল প্রদক্ষিণ করে হাদি চত্বরে জড়ো হন। কুমিল্লা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এ সময় ধর্ষণবিরোধী স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো নগরী।

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সামাজিক সংগঠনগুলো। গতকাল শহরের মোক্তারপাড়া পুরাতন কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচিতে জমায়েত হয় নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। পরে ডিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। বিক্ষোভে বক্তব্য দেন জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক আলপনা বেগম, সাবেক সম্পাদক কোহিনূর বেগম প্রমুখ।

গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে স্কুলশিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। উপজেলার মডেল থানার মূল ফটক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে মাওনা-শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে থানা চত্বরে এসে শেষ হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d