উদ্বিগ্ন না-কি আনন্দিত? ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা নিয়ে দ্বীপটির অধিবাসীরা কী ভাবছেন
গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দা জেনস ড্যানিয়েলসেন বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহকে আমি খুবই বিপজ্জনক মনে করি।’
গ্রিনল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব নিয়ে গ্রিনল্যান্ডবাসীদের মতামত সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত কিছু উত্তর বিস্মিত হওয়ার মতো।
উত্তরদাতাদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পের আগ্রহকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে অন্যরা বলেছেন, তারা ‘ট্রাম্পের প্রতি বেশি আস্থা’ রাখতে পারেন এবং তারা [যদি তাদের নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয়] ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই বেছে নেবেন’।
স্থানীয় সময় বুধবার (৮ জানুয়ারি) ক্যালাল্লিট নুনাতা রেডিওয়া (কেএনআর) এসব সাক্ষাৎকার নিয়েছিল।
এর আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তার গ্রিনল্যান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি তার লক্ষ্য অর্জনে সামরিক বা অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
কেএনআর-এ সাক্ষাৎকার দেওয়া দ্বীপটির কিছু বাসিন্দা ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
তাদের অভিমত, তারা চান গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণেই থাকুক।
গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দা জেনস ড্যানিয়েলসেন বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহকে আমি খুবই বিপজ্জনক মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাসিন্দা সংখ্যা খুবই কম, এক লাখেরও নিচে। আমি ভয় পাই আমাদের ভাষা খুব দ্রুত হারিয়ে যাবে। তাই আমি ডেনমার্কের অধীনে থাকতে পছন্দ করব, কারণ গ্রিনল্যান্ডবাসী এবং ডেনিশদের মধ্যে বর্তমানে ভাল সম্পর্ক রয়েছে৷’
ড্যানিয়েলসেন বলেন, ‘তিনি এই কথা শুনেও উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প হয়তো ইউরেনিয়াম ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী।’
তিনি বলেন, ‘যদি এটাই তার আগ্রহের কারণ হয়, তাহলে তা উদ্বেগজনক।’
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন।’
তবে কিছু বিশেষজ্ঞদের মতামত, এর পেছনে ট্রাম্পের অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ। দ্বীপটিতে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতুও রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বরফ গলে গিয়ে এখান থেকে এসব সম্পদ আহরণ করা আরও সহজ হয়ে উঠতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘হয়তো আমি ট্রাম্পের প্রতি বেশি আস্থা রাখতে পারব’
তবে কেএনআর-এর সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া অনেককে ট্রাম্পের প্রস্তাবের ব্যাপারে বেশ উদার বলে মনে হয়েছিল।
ক্লিনিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যারেন কিয়েলসেন বলেন, ‘এখানে সবকিছুই ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। ডেনমার্ক থেকে আসা পণ্য অত্যন্ত দামি, তাই আমার কাছে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয়।’
শিক্ষার্থী ইমাক্কা বোসেন বলেন, ‘আমি ডেনিশদের পুরোপুরি বিশ্বাস করি না। আমি হয়তো ট্রাম্পের প্রতি বেশি আস্থা রাখতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডে অনেক ডেনিশ নেতৃস্থানীয় পদে আছেন। কিন্তু আমরা গ্রিনল্যান্ডের অধিবাসী, আর এখানকার অধিবাসীদেরই নেতৃত্ব পালনের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’
আরেক বাসিন্দা অ্যাঙ্গুটেক লারসেন কেএনআরকে বলেন, তিনি চান ডেনমার্ক বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হোক।
ড্যানিশ, আমেরিকান… নাকি কোনোটিই নয়?
কেএনআরের সাক্ষাৎকারে যদিও জনগণ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তবে গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক দুই দেশেরই সরকার গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একাধিক ডেনিশ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, প্রথম মেয়াদের চেয়ে এবার ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড নিয়ে বেশি সিরিয়াস বলে মনে করছেন তারা।
এর আগেও গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেডে এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটা ফ্রেডরিকসেন বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ড ‘কখনো বিক্রি করা হবে না’।
মঙ্গলবার এগেডে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীর সম্পত্তি’।
তবে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেও, গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপটির স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
সম্প্রতি নিউ ইয়ারের ভাষণে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে ‘ঔপনিবেশিকতার শিকল থেকে মুক্ত’ করতে হবে – যদিও ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকক রাসমুসেন বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য আর দ্বীপের স্বাধীনতার বিষয়টি আলাদা।
রাসমুসেন বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করি যে গ্রিনল্যান্ডের একটি নিজস্ব আকাঙ্খা রয়েছে। যদি সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হয়, তবে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করবে। তবে এটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হওয়ার আকাঙ্খা নয়।’