Hot

উদ্বেগ বাড়ছে বিএনপিতে

নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়া সংস্কারকাজের অগ্রগতি অস্পষ্ট কঠোর বক্তব্য দিচ্ছেন নেতারা

সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপির নেতারা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় বিএনপির মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গত শনিবারের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সংস্কার বা নির্বাচন নয়; ভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে সরকার। দলের সিনিয়র নেতারা মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে টালবাহানা হচ্ছে। উপদেষ্টারা নির্বাচন নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন। তারেক রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে কি না, এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের চিন্তা এবং কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বাড়ছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভিতরে এবং বাইরে এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা, আশা-আকাক্সক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বর্তমান সরকারের হাতে নিরাপদ নয়। আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন পড়েছি বাঘের মুখে। সিন্দবাদের বুড়োর মতো এ সরকার আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে, নেমে যেতে চায় না। তাই আমাদের ঘাড় থেকে তাদের ঝাঁকি দিয়ে নামাতে হবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক?’ তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। গত কয়েক দিনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এভাবেই তাঁদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বৈঠকের পর ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করে কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার কথা বললেও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা চালিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে দলটির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভাসমাবেশ থেকে সরকারের কড়া সমালোচনা করছেন এবং সংকট উত্তরণে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণির নেতাই সভাসমাবেশ থেকে সরকারের কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, মানবিক করিডর ইস্যু, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নানান দাবিদাওয়া, সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশ পর্যায়ক্রমে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। উদ্বিগ্ন দলটির শঙ্কা, ঘটনাক্রম যেভাবে এগোচ্ছে, আগামীতে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এতে নির্বাচন নিয়ে যে জন আকাক্সক্ষা এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের যে পথ, তা আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে। সরকারের মেয়াদের নয় মাসেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করাটাই একটা রহস্য। তাঁরা বলেন, সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায় সরকার। জামায়াতে ইসলামীসহ আরও দু-একটি দলের ভূমিকাও অস্পষ্ট। এ অবস্থায় নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। আবার নির্বাচন নিয়ে দেশিবিদেশি ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারকে বলব, ডানে-বাঁয়ে সব দিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। না হলে কেউ রক্ষা পাবেন না।’ লক্ষ্মীপুরে এক অনুষ্ঠানে দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘শাহবাগ ও যমুনায় আন্দোলন হচ্ছে। কোনো মিছিলে বা সমাবেশে তো পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ-লাঠিচার্জ করে না। তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলা-লাঠিচার্জ কেন করা হয়েছে? আবার এক উপদেষ্টার ওপর হামলা হয়েছে; সবকিছুই ষড়যন্ত্রের অংশ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য এসব করা হচ্ছে।’ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, অবনতিশীল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উত্তরণে নির্বাচনই একমাত্র পথ। দলটির নেতারা বলছেন, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকারের উচিত সংকট উত্তরণে দ্রুত সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করা। তবে সরকার নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করলে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে। দলটি মনে করে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। মানুষের দাবিদাওয়া বাড়ছে। সংকটের একমাত্র সমাধান নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।’ তিনি বলেন, ‘এটি তিন মাসের সরকার। করিডর দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত এ সরকার নিতে পারে না। আগামী জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে-সরকারপ্রধানের এমন ঘোষণা মানুষ আর বিশ্বাস করছে না। সরকারের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d